Advertisement
০৯ মে ২০২৪
hypertension

এই অসুখ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হৃদরোগের শিকার হবেন যখন তখন, এমন সব উপসর্গে সচেতন থাকুন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসাবে পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে জীবন যাপন করছেন। রক্তচাপের কারণে প্রতি বছর ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যান।

উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা করলে ধেয়ে আসতে পারে বড় বিপদ।

উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা করলে ধেয়ে আসতে পারে বড় বিপদ।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ১২:১২
Share: Save:

নিচের দিকের প্রেশার ৭০, ৮০ নাকি ৯০? উপরের দিকেরটাই বা কত? ১২০ ছাড়িয়েছে নাকি? ‘নো ইওর নাম্বার’ এই থিম নিয়েই এ বারের ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে। রক্তচাপকে বশে রাখতে ‘হাতের পাঁচ’-এর দাওয়াই দিলেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রকাশ চন্দ্র মণ্ডল।

সংখ্যাটা শুনলে আঁতকে উঠতে হবে— আমাদের দেশের ২০ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ হাইপারটেনশন অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এদের মধ্যে আবার অনেকে জানেনইনা যে তাঁদের রক্তচাপ ঊর্ধমুখী। হাই ব্লাড প্রেশার এমনই এক নিঃশব্দ ঘাতক যে কোনও লক্ষণ ছাড়াই একে একে বিকল করে দেয় হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি, চোখ-সহ শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তাই কোনও শারীরিক অসুবিধা না থাকলেও বছরে এক বার হেল্‌থ চেক আপের সময় ব্লাড প্রেশার মেপে নেওয়া দরকার।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র হিসাবে পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে জীবন যাপন করছেন। রক্তচাপের কারণে প্রতি বছর ব্রেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হয়ে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যান। তাই ব্লাড প্রেশার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পৃথিবী জুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে।

আরও পড়ুন: মোবাইল বা সোশ্যাল সাইটের পাসওয়ার্ড চাইছে সঙ্গী? কী করবেন?

মাঝে মাঝেই পরীক্ষা করান রক্তচাপ।

কেন জানা নেই

ব্লাড প্রেশারকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় এসেনশিয়াল আর সেকেন্ডারি। দ্বিতীয়টির জন্য কিছু কারণ জানা গিয়েছে যেমন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমার, পলিসিস্টিক কিডনি এরকম কিছু কারণ দূর করতে পারলে ব্লাড প্রেশার আবার স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথা। সমস্ত হাইপ্রেশারের রোগীদের প্রায় ৫% এর সেকেন্ডারি রক্তচাপ। বাকি ৯৫%এর এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন। এদের রক্তচাপ কেন বাড়তে শুরু করে সেই উত্তর এখনও খুঁজে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সাধারণত ১২০/৮০ কে স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি কারুর ব্লাড প্রেশার১৪০/৯০এর বেশি হয়, তখন তার রক্তচাপ বেড়েছে বলা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসেনশিয়াল উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ নেই। তবে ব্লাড প্রেশার যে বংশগত সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত।

শহরে বেশি, গ্রামেও বাড়ছে

মানসিক চাপ ও শহুরে জীবনযাত্রার সঙ্গে ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়ার একটা যোগসূত্র আছে। দেখা গিয়েছে শহরাঞ্চলে ৩৩ -৪০ শতাংশ ৪০ ঊত্তীর্ণ মানুষ উচ্চ রক্তচাপের শিকার। তুলনামূলক ভাবে গ্রামে এই হার কিছুটা হলেও কম। আবার মহিলাদের থেকে পুরুষদের রক্তচাপ বেড়া যাওয়ার প্রবণতা বেশি।

নিয়ন্ত্রণে না রাখলেই বিপদ

ব্লাড প্রেশার বাড়লে নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ থাকে না। কখনও কারও মাথা ব্যথা করে, হঠাৎ মাথা টলে যেতে পারে, কখনও দুর্বল লাগে, সামান্য পরিশ্রমে শ্বাসের কষ্ট ও বুক ধড়ফড় করে। আবার নিজে থেকে তা ঠিকও হয়ে যায়। বেশির ভাগ মানুষই এই ধরণের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। তাই অসুখটা চট করে ধরা পড়ে না। কিন্তু লাগাতার এই ভাবে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নিয়ে জীবনযাপন করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ একে একে বিকল হতে শুরু করে।

আমাদের দেশে হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। আচমকা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ অর্থাৎ স্ট্রোকের জন্যেও দায়ী ব্লাড প্রেশার। এছাড়া লাগাতার হাই ব্লাড প্রেশারের কারণে কিডনি বিকল ও চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বংশে এই সমস্যা থাকলে কোনও রকম সমস্যা হলেই প্রেশার চেক করানো জরুরি।

আরও পড়ুন: মাত্র চারটে সহজ উপায়! ডার্ক সার্কল কমবে ম্যাজিকের মতো

ডায়াবিটিস, ইউরিক অ্যাসিড, কোলেস্টেরল সঙ্গী

এসেনশিয়াল হাই ব্লাড প্রেশার অর্থাৎ কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াইযাদের ব্লাড প্রেশার চড়ে যায় তাঁদের অন্য কিছু সমস্যা থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেখা গিয়েছে এদের ডায়াবিটিস থাকতে পারে। সঙ্গে রক্তে ইউরিক অ্যাসিড, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাডের মাত্রা থাকে অনেক বেশি। এই হাই রিস্ক উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত মনিটরিং দরকার। ওষুধ ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করে প্রেশার কমিয়ে রাখা উচিত। প্রত্যেক ছয় সপ্তাহ অন্তরএঁদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। প্রয়োজনে ওষুধের মাত্রা বদলে ও নতুন ওষুধের সাহায্যে কমপ্লিকেটেড হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রেশার কমে গিয়েছে ভেবে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে বিপদ ডেকে আনবেন না। মনে রাখবেন, প্রেশারের ওষুধ আজীবন খেয়ে যেতে হয়। তবে কোনও কমপ্লিকেশন না থাকলে বছরে দু’বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অতিরিক্ত নুনে ‘না’ বলুন।

বশে রাখুন এ ভাবে

ব্লাড প্রেশারকে বশে রাখতে রোজকার জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তনআনতেই হবে। বাড়তি ওজন আর স্ফীত মধ্যপ্রদেশ হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য মেটাবোলিক ডিজিজ যেমন ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, হার্টের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। তাই নিয়মিত এক্সারসাইজের পাশাপাশি সঠিক ডায়েট করে ওজন কমাতে হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা ঘাম ঝরানোর মত দ্রুত পায়ে হাঁটা আর ব্রিদিং এক্সারসাইজ ও প্রাণায়াম করা দরকার। স্নান-খাওয়ার মতোই এক্সারসাইজকে জীবনের অঙ্গ করে নিতে হবে। ৫ কেজি ওজন কমাতে পারলেই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রনে রাখা সহজ হবে। তবে যারা মরবিডওবিস তাঁদের উচিত ডায়েটিশিয়ান ও ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে ওজন স্বাভাবিক করা। সোডিয়াম হাই প্রেশার বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতি দিন সব মিলিয়ে ৫ গ্রামের বেশি নুন খাওয়া উচিৎ নয়। চানাচুর, চিপ্‌স-সহ প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাবারে বাড়তি নুন অ্যাভয়েড করতে হবে। রোজকার ডায়েটে রাখুন পটাসিয়াম যুক্ত খাবার। পাকা কলা, কমলালেবু, বিন্‌স, মুসুর ডাল, পালং শাক, মুসুর ডাল, রাঙ্গা আলু ইত্যাদি। নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। এই ভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখুন রক্তচাপ।

(ছবি: শাটারস্টক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE