Advertisement
E-Paper

অ্যানাস্থেটিস্ট কম, সমস্যা অস্ত্রোপচারে

রাতে আচমকা পেটে যন্ত্রণা নিয়ে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে এসেছিলেন আদ্রার বাসিন্দা কাঞ্চন ঠাকুর। চিকিত্‌সক পরীক্ষা করে জানান, তাঁর পিত্তথলিতে পাথর। অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি নেই। বহির্বিভাগে টানা দু’মাস দেখানোর পরে অস্ত্রোপচারের দিন পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ১০ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তিও হয়েও অস্ত্রোপচার হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৬

রাতে আচমকা পেটে যন্ত্রণা নিয়ে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে এসেছিলেন আদ্রার বাসিন্দা কাঞ্চন ঠাকুর। চিকিত্‌সক পরীক্ষা করে জানান, তাঁর পিত্তথলিতে পাথর। অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি নেই। বহির্বিভাগে টানা দু’মাস দেখানোর পরে অস্ত্রোপচারের দিন পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ১০ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তিও হয়েও অস্ত্রোপচার হয়নি।

তাঁর স্বামী ওমপ্রকাশ ঠাকুরের কথায়, “দু’মাস অপেক্ষা করার পরে যদি বা অস্ত্রোপচারের দিন পাওয়া গেল তো হাসপাতাল জানাচ্ছে অজ্ঞান করানোর চিকিত্‌সকই নেই। সুপারের কাছে গিয়েছিলাম, তিনিও কবে চিকিত্‌সক পাওয়া যাবে ঠিকমতো জানাতে পারেননি।” বাধ্য হয়ে তিনি স্ত্রীকে অস্ত্রোপচার না করিয়েই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান।

কাঞ্চনদেবীর মতো বহু রোগীর এখন একই ভবিতব্য। ট্যাঁকের জোর থাকলে নার্সিংহোমে গিয়ে চিকিত্‌সা করানো যেতে পারে। তা না থাকলে সদর হাসপাতালে কবে অ্যানাস্থেটিস্ট আসবেন, সেই অপেক্ষায় যন্ত্রণা সহ্য করে যেতে হচ্ছে। এই এলাকায় যেখানে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে হাসপাতালের চারজন অ্যানাস্থেটিস্টের মধ্যে বর্তমানে কাজ করছেন মোটে দু’জন। বাকি দু’জন অসুস্থ। এই অবস্থা চলছে গত মাস খানেক ধরে। বিকল্প অ্যানাস্থেসিস্ট নিয়োগ করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতাল সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের পরিস্থিতির কথা তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু দফতর এখনও কোনও অ্যানাস্থেসিস্ট পাঠায়নি।

পুরুলিয়া জেলার ২০টি ব্লকের অধিকাংশ বাসিন্দা এই সদর হাসপাতালের উপরেই নির্ভরশীল। তার উপরে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও রোগীরা এখানে আসেন। হাসপাতালে স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি শল্য বিভাগে (গাইনি সার্জারি) চারটি এবং সাধারণ শল্য বিভাগে তিনটি অপারেশন টেবিল রয়েছে। প্রসূতি শল্য বিভাগে সাত জন, সাধারণ শল্য বিভাগে চার জন শল্য চিকিত্‌সক এবং তিন জন সহকারী শল্য চিকিত্‌সক রয়েছেন। এ ছাড়া নাক, কান, গলা বিভাগে এবং অস্থি বিভাগে দু’জন করে চিকিত্‌সক রয়েছেন। তাঁরাই অস্ত্রোপচার করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাধারণ শল্য বিভাগের তিনটি টেবিলে প্রতিদিন গড়ে চার রাউন্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার সঙ্গে জরুরি অস্ত্রোপচারও রয়েছে। সব মিলিয়ে গড়ে সপ্তাহে কমবেশি ৯০টি অস্ত্রোপচার হতো। এর সঙ্গে রয়েছে স্বল্পক্ষত চিকিত্‌সা কেন্দ্র।

গত জুলাই মাসে চালু হওয়া অত্যাধুনিক এই অস্ত্রোপচার কেন্দ্রে সপ্তাহে মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচার হতো। সম্প্রতি পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে রাজ্য সরকারের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এক্সপার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সুব্রত মৈত্র হাসপাতালের এই বিভাগটির প্রশংসাও করে গিয়েছিলেন। সেই বিভাগের দরজাও রোগীদের কাছে বন্ধ। কারণ একটাই, অজ্ঞান করার চিকিত্‌সক নেই। বর্তমানে জরুরি ছাড়া বেশির ভাগ অস্ত্রোপচারই বন্ধ। তাও যেটুকু হচ্ছে প্রসূতি বিভাগে।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় রোগীরা অস্ত্রোপচারের জন্য শীতের সময়টাকেই বেছে নেন। তাঁদের অভিযোগ, টানা কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে চিকিত্‌সা করিয়ে ওষুধপত্র খেয়ে এখন শুনতে হচ্ছে অজ্ঞান করার ডাক্তার নেই। অ্যানাস্থেসিস্টের অভাবে গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রি-অ্যানাস্থেটিক চেক আপও। সেখানে রোগীকে অজ্ঞান করা যাবে কি না সেই সম্পর্কিত পরীক্ষা করা হতো।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর গত অক্টোবরের শেষে বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য ৩৯ জন অ্যানাস্থেসিস্ট নিয়োগ করে। তার মধ্যে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের জন্যও এক অ্যানাস্থেটিস্টকে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই চিকিত্‌সক পুরুলিয়ায় যোগ দেননি। পাশাপাশি পুরুলিয়ায় ডিএনবি পাঠ্যক্রম চালু করার জন্য স্বাস্থ্য দফতর চার জন এমডি অ্যানাস্থেটিস্টকে পুজোর আগে সদর হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু পুজোর পরেই সেই চার জনকে ফের পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমরা কয়েক জন অ্যানাস্থেটিস্টকে পেয়েছিলাম। কিন্তু ডিএনবি পাঠ্যক্রমে এখনও কেউ ভর্তি হননি বলেই স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের তুলে নিয়েছে। আশা করছি, দু’-এক জনকে পাব।”

হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “অ্যানাস্থেটিস্টের অভাবে আমরা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোকেও জানিয়েছি।” শান্তিরামবাবুর আশ্বাস, “সমস্যার কথা জানি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কথাও বলেছি। দেখছি কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়।”

anaesthesist purulia sadar hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy