Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আক্রান্ত আরও ৫ শিশু, লিচু নিয়ে সংশয় চলছেই

সাঁইত্রিশ জন আক্রান্ত। বারো জন মৃত। গত ২৪ ঘন্টায় পাঁচ জন ভর্তি হয়েছে। কেউ মারা যায়নি। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের ঘরের সামনে ঝুলছে এই নোটিস। জেলার লিচুবাগান এলাকায় শিশুমৃত্যু নিয়ে কোনও প্রশ্ন করলে ওই নোটিস আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। আরও কোনও কথা বলতে রাজি নন। মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা, প্রশাসনিক কর্তারাও। এ রাজ্যে এই মুহূর্তের সব চাইতে তীব্র জনস্বাস্থ্য সঙ্কট, তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন কেউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

সাঁইত্রিশ জন আক্রান্ত। বারো জন মৃত। গত ২৪ ঘন্টায় পাঁচ জন ভর্তি হয়েছে। কেউ মারা যায়নি।

মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের ঘরের সামনে ঝুলছে এই নোটিস। জেলার লিচুবাগান এলাকায় শিশুমৃত্যু নিয়ে কোনও প্রশ্ন করলে ওই নোটিস আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। আরও কোনও কথা বলতে রাজি নন। মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা, প্রশাসনিক কর্তারাও। এ রাজ্যে এই মুহূর্তের সব চাইতে তীব্র জনস্বাস্থ্য সঙ্কট, তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন কেউ।

কলকাতায় অবশ্য মঙ্গলবার স্বাস্থ্য সচিব মলয় দে জানান, রোগ জাপানি এনসেফালাইটিস নয়। তিনি জানান, মালদহের শিশুরা রাসায়নিক-জনিত বা ভাইরাস-জনিত রোগে আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষার জন্য পুনে ও দিল্লিতে নমুনা পাঠানো হয়েছে। অথচ সোমবার মালদহে সাংবাদিক বৈঠক করে, স্বাস্থ্য দফতরের সহকারী আধিকারিক দীপঙ্কর মাজি বলেন, এনসেফালাইটিস বা এনসেফালোপ্যাথি জাতীয় অসুখে ওই শিশুরা মারা গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের সূত্রে খবর, কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পরীক্ষায় এনসেফালাইটিস ধরা পড়েনি। তাই সেই সম্ভাবনা থেকে সরে এসেছে স্বাস্থ্য দফতর।

লিচুর সঙ্গে এই রোগের সম্পর্ক কী, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। গত দিন তিনেকের মধ্যে জ্বর, খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে যে ১২জন শিশু, তাদের বয়স পাঁচ বছরের কম। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কলকাতা থেকে বিশেষজ্ঞরা যান মালদহে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরাও তাঁদের সঙ্গে রোগাক্রান্তদের গ্রামগুলি পরিদর্শন করেন। ওই দলের সদস্য এক চিকিৎসক জানান, আক্রান্ত শিশুদের বাড়িতে তাঁরা স্তূপাকৃত লিচু দেখেছেন। লিচু পাকানোর জন্য ব্যবহৃত কোনও রাসায়নিক থেকে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কিন্তু সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে মালদহের লিচুকে কার্যত ছাড়পত্র দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “লিচু সম্পর্কে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করবেন না বা মনগড়া কথা লোকের মাধ্যমে ছড়াবেন না।” কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা পরামর্শ দেন, লিচু বা যে কোনও ফল আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা জলে ভিজিয়ে, ঘষে ধুয়ে খেতে। এই পরামর্শে আশ্বস্ত হওয়ার চাইতে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বেশি। লিচুতে ক্ষতিকর কিছু না থাকলে এত সাবধানতার প্রয়োজন কী, সেই প্রশ্ন উঠেছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের জেলা আধিকারিকেরা এ দিনই লিচু বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন।

কী রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়েছে তার রিপোর্ট, কিংবা আক্রান্ত শিশুদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পেয়েই কী করে লিচুকে ছাড়পত্র দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা? প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, লিচু ব্যবসায়ীদের চাপেই তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করেন তাঁরা। শিশুমৃত্যু বাড়তে থাকায় সোমবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক গ্রামে মাইকে শিশুদের লিচু না খাওয়াতে প্রচার করা হয়। কিন্তু এর পরেই লিচু ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। তার জেরেই বিকেলে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন, মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।

তাতে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। মালদহ চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা এ দিন বলেন, “মালদহের লিচু জেলার বাইরের কেউ কিনতে চাইছে না। জেলার লিচু ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lichi syndrom malda medical college kaliachok
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE