Advertisement
E-Paper

আয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ডোমকলে

ডোমকলের মহকুমাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি পুষ্পেন্দু মিত্র বলেন, “ওই প্রসূতির পরিবারের তরফে একটি অভিযোগ পেয়েছি। গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “ওই ঘটনায় একটা মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” আর হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডির দায়সারা জবাব, “ঘটনাটি হাসপাতালের বাইরে ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে বিষয়টি আমরাও খতিয়ে দেখছি।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে চাইলেও ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ কিন্তু স্পষ্ট জানিয়েছেন, হাসপাতালে এ রকম ঘটনা নতুন কিছু নয়। সন্তান জন্মানোর পরে আয়ারা এমন ‘আব্দার’ করেই থাকেন।

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৬
মহকুমা হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।

মহকুমা হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।

‘নাতি হয়েছে গো, দেখে এসো।’

শুক্রবার সকালে আয়ার মুখ থেকে কথাটা শোনার পর সদ্যোজাতকে দেখতে তড়িঘড়ি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকেছিলেন প্রসূতির মা-সহ বাড়ির লোকজন। কিন্তু প্রসূতি বিভাগের অনেক আগেই তাঁদের আটকে দেন হাসপাতালের জনাকয়েক আয়া। কারণ জানতে চাইলে প্রসূতির পরিবারকে শুনতে হয়, “ছেলের মুখ দেখতে হলে পাঁচশো টাকা দিতে হবে।” অভিযোগ, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ওই সদস্যরা সেই টাকা না দিতে পারায় সেই মুহূর্তে সদ্যোজাতকে দেখতে দেননি আয়ারা। জোর করে ঢুকতে চাইলে আয়ারা তাঁদের মারধরও করেছেন বলে ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, থানা ও মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই প্রসূতির পরিবার।

ডোমকলের মহকুমাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি পুষ্পেন্দু মিত্র বলেন, “ওই প্রসূতির পরিবারের তরফে একটি অভিযোগ পেয়েছি। গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” এসডিপিও অরিজিৎ সিংহ বলেন, “ওই ঘটনায় একটা মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” আর হাসপাতালের সুপার প্রবীর মাণ্ডির দায়সারা জবাব, “ঘটনাটি হাসপাতালের বাইরে ঘটেছে বলে শুনেছি। তবে বিষয়টি আমরাও খতিয়ে দেখছি।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে চাইলেও ডোমকল মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ কিন্তু স্পষ্ট জানিয়েছেন, হাসপাতালে এ রকম ঘটনা নতুন কিছু নয়। সন্তান জন্মানোর পরে আয়ারা এমন ‘আব্দার’ করেই থাকেন। এ দিন সেটা একটু বাড়াবাড়ি হওয়াতেই থানা-পুলিশ হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি বেআইনি হলেও আয়াদের এই টাকার দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে। তাঁরা নিজেদের মতো একটা দরও বেঁধে রেখেছেন। কী রকম? সম্পন্ন বাড়ির প্রসূতির পুত্র সন্তান জন্মালে আয়াদের ‘রেট’ এক হাজার টাকা। কন্যা সন্তান জন্মালে টাকাটা অর্ধেকে নেমে আসবে! বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের প্রসূতির ক্ষেত্রে পুত্র সন্তান হলে পাঁচশো টাকা। আর কন্যা সন্তান হলে আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, “আয়াদের আব্দার বলে প্রথম দিকে কেউ কিছু মনে করতেন না। খুশি হয়ে কিছু দিতেন। কিন্তু এখন সেটা জুলুমবাজির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসে। কিন্তু কেউ লিখিত ভাবে বিষয়টি নিয়ে এগোতে চান না বলে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যান আয়াদের একাংশ।” যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ আয়ারা। তাঁদের দাবি, “মিষ্টি খাওয়ার জন্য খুশি হয়ে যে যেমন দেন, আমরা নিয়ে নিই। কারও কাছে কোনও জুলুম করা হয় না। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।”

রানিনগরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের বছর কুড়ির শরিফা বিবি যে বিপিএল পরিবারের, সে কথা আগেই খোঁজ নিয়ে জেনে গিয়েছিলেন আয়ারা। তাই শুক্রবার সকালে ডোমকল হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেই আয়ারা ওই প্রসূতির পরিবারের কাছে পাঁচশো টাকা চেয়েছিলেন। ওই মহিলার ভাসুর সিদ্দিক হোসেন বলছেন, “আমরা গরিব মানুষ। রানিনগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এই হাসপাতাল পর্যন্ত বৌমাকে নিয়ে আসতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। ওই মুহূর্তে পাঁচশো টাকা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু আয়ারা কোনও কথাই শুনতে চায়নি। জোর করে আমাদের কয়েকজন মহিলা যেতে চাইলে ওরা তাদের মারধরও করে।”

মাস খানেক আগে এই হাসপাতালেই রোগীর আত্মীয়কে এক দালাল নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে রোগীর পরীক্ষা করানোর পরামশর্র্ দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সেই আত্মীয়কে মারধর করেছিল দালাল। সেই দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা বাবু বিশ্বাস কোনও রাখঢাক না রেখেই বলছেন, “ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে দালাল ও আয়াদের দাপট এতটাই প্রকট যে, ওদের ভয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করতেও ভয় পান। কেউ অভিযোগ করতে গেলে তাঁদের রোগীর ক্ষতি হয়ে যাবে বলে হুমকিও দেখানো হয়। সব জেনেও কোনও অজ্ঞাত কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।”

তবে এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। তিনি বলেন, “হাসপাতালে এমন ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”

female staff hospital harassment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy