Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

চিকিত্‌সার গাফিলতিতে বালকের মৃত্যুর অভিযোগ

বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিত্‌সক তথা বাগদা ব্লক মেডিক্যাল অফিসার রাজর্ষি সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে চিকিত্‌সায় গাফিলতিতে এক বালকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বালকের নাম সাহেব রায় (৮)। বাড়ি স্থানীয় মেহেরানি এলাকায়। রবিবার সকালে বাড়ির কাছে বনগাঁ-বয়রা সড়কের পাশে সাহেব খেলা করছিল। বেলা ১১টা নাগাদ একটি ভ্যান তাকে ধাক্কা মারে। ভ্যানটি চালাচ্ছিলেন সাহেবের খুড়তুতো দাদা মানিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগদা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১০
Share: Save:

বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিত্‌সক তথা বাগদা ব্লক মেডিক্যাল অফিসার রাজর্ষি সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে চিকিত্‌সায় গাফিলতিতে এক বালকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বালকের নাম সাহেব রায় (৮)। বাড়ি স্থানীয় মেহেরানি এলাকায়। রবিবার সকালে বাড়ির কাছে বনগাঁ-বয়রা সড়কের পাশে সাহেব খেলা করছিল। বেলা ১১টা নাগাদ একটি ভ্যান তাকে ধাক্কা মারে। ভ্যানটি চালাচ্ছিলেন সাহেবের খুড়তুতো দাদা মানিক। বেলা ১২টা নাগাদ সাহেবকে বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে বাগদা থানায় দায়ের করা অভিযোগে সাহেবের বাবা তুষারবাবু জানিয়েছেন, ছেলেকে ভর্তি করার পরে চিকিত্‌সক ঘুমের ওষুধ ও বমির ওষুধ দেন। তারপর আর কোনও চিকিত্‌সাই হয়নি। বার বার চিকিত্‌সককে বলা সত্ত্বেও তিনি ছেলেকে দেখভাল করেননি। রাত ৮টা নাগাদ জানানো হয়, ছেলে মারা গিয়েছে। তুষারবাবু বলেন, “ছেলের শারীরিক অবস্থা যদি খারাপ হয়ে থাকে, তা হলে চিকিত্‌সক কেন আমাদের সে কথা সময়ে জানালেন না? সে ক্ষেত্রে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যেত। ওই চিকিত্‌সকের গাফিলতিতেই মারা গিয়েছে আমার ছেলে।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবার অভিযোগ, এ দিন সকালে মৃতের আত্মীয় ও এলাকার কিছু লোকজন হাসপাতালে চড়াও হয়ে ওই চিকিসত্‌ককে কটূক্তি করেছে। হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভও দেখানো হয়। সে সময়ে স্থানীয় কয়েক জন তৃণমূল নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও ওই চিকিত্‌সককে অপমান করেছেন। সে কথা অবশ্য মানেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয়কুমার আচার্য বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে সুপার গয়ারাম নস্করকে ঘটনার তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশও। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তের জন্য।

রাজর্ষিবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ছেলেটিকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়নি। তাকে ব্যথার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। বাইরে থেকে শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ছেলেটি স্বাভাবিকই ছিল। রাত সওয়া ৮টা নাগাদ হঠাত্‌ করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। কেন তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হল না? রাজর্ষিবাবুর দাবি, “বাগদা থেকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব অনেক (প্রায় ৩০ কিলোমিটার)। কিন্তু ওই সময় ছেলেটির অবস্থা এমন ছিল যে তাকে কিছুটা সুস্থ না করে পাঠানো যেত না। পথে বিপদ হতে পারত। আমরা সেই চেষ্টাই করেছিলাম।”

কয়েক মাস আগে ওই হাসপাতালে চিকিত্‌সক তথা ব্লক মেডিক্যাল অফিসার সূরজ সিংহের বিরুদ্ধেও চিকিত্‌সায় গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতিরও অভিযোগ ওঠে। সূরজকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় কাজে যোগ দেন রাজর্ষিবাবু। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাজর্ষিবাবু যোগ দেওয়ার পরে হাসপাতালের পরিষেবা অনেকটাই উন্নত হয়েছে। হাসপাতাল চত্বর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে। চিকিত্‌সকেরা সময় মতো ডিউটি করছেন। অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও ভাল হয়েছে। রাজর্ষিবাবুর কথায়, “ছেলেটির মৃত্যুর পরে যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে চিকিত্‌সকেরা এরপরে চিকিত্‌সা করতেই ভয় পাবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE