Advertisement
E-Paper

ছানি-কাণ্ডে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি কোচবিহারে

সরকারি হাসপাতালে ছানি কাটাতে গিয়ে ৮ জনের দৃষ্টিশক্তি বিপন্ন হয়ে পড়ার ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে কোচবিহার জেলা হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের যে অস্ত্রোপচারের ঘরে ওই ৮ জনের ছানি অপারেশন হয়েছিল, সেই ঘরটিও আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সন্দেহ করছে, ওই অস্ত্রোপচার কক্ষে কোনও জীবাণু সংক্রমণের জেরেই ছানি কাটানোর সময়ে বিপর্যয় ঘটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৮

সরকারি হাসপাতালে ছানি কাটাতে গিয়ে ৮ জনের দৃষ্টিশক্তি বিপন্ন হয়ে পড়ার ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সেই সঙ্গে কোচবিহার জেলা হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের যে অস্ত্রোপচারের ঘরে ওই ৮ জনের ছানি অপারেশন হয়েছিল, সেই ঘরটিও আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সন্দেহ করছে, ওই অস্ত্রোপচার কক্ষে কোনও জীবাণু সংক্রমণের জেরেই ছানি কাটানোর সময়ে বিপর্যয় ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্তে ওই ব্যাপারে কিছু নির্দিষ্ট প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অস্ত্রোপচার কক্ষ পুরোপুরি জীবাণু মুক্ত করার পরেই তা ফের খোলা হবে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, যে ৮ জন অস্ত্রোপচারের পরে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তাঁদের মধ্যে ৩ জনের এদিন শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি চোখের হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছে। জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি বাকি ৪ জন চিকিৎসার পরে আবছা দেখতে পাচ্ছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন। একজন অবশ্য নিজেই অন্যত্র চিকিৎসা করাতে চলে গিয়েছেন।

এদিন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পরে তিনি বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। ওই রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত চোখের অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধ থাকবে।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কবে অস্ত্রোপচার কক্ষ শেষ বার জীবাণু মুক্ত করা হয়েছিল, সেই নথি চাওয়া হয়েছে। নিয়মিত ওই কক্ষ সংক্রমণ মুক্ত রাখতে যা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তা নেওয়া হয়নি বলেও স্বাস্থ্য দফতরের সন্দেহ। সে জন্য গাফিলতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কোচবিহারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিস সাহা অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, সেখানে সপ্তাহে দু’দিন ছানির অস্ত্রোপচার করানো হয়। বুধ ও বৃহস্পতিবার। ফি মাসে গড়ে ৩০ জনের বেশি রোগী ছানির অস্ত্রোপচার করান। গত বৃহস্পতিবার পরপর ওই ৮ জনের চোখের ছানির অস্ত্রোপচার করানো হয়। দায়িত্বে ছিলেন হাসপাতালেরই এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ। শুক্রবার চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পরে রোগীরা ঠিক মতো দেখতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। মোবাইল ফোন না তোলায় ওই চিকিৎসকের অবশ্য এই বিষয়ে বক্তব্য জানা যায়নি।

পরিস্থিতির জেরে ওই দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোচবিহারের বাসিন্দা অন্য এক চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞকে ডেকে এনে রোগীদের চোখ পরীক্ষা করান। সংক্রমণের আশঙ্কার কথা জানিয়ে দেন বাইরের চিকিৎসক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে কোনও ভাবে সংক্রমণ হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান তিনি। ওই ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের সহকারি সুপার অনির্বাণ দে, চিকিৎসক সুব্রত হালদার, প্যাথোলজিস্ট পম্পি ভট্টাচার্য ও নার্সিং সুপার রাধারানি ঘোষকে নিয়ে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হয়।

কেন ওই সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে? এ জন্য কাদের গাফিলতি রয়েছে? এ দিনও সে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন রোগীর পরিজনেরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, সপ্তাহে দুই দিন অস্ত্রোপচার হলেও ওটি নিয়মিত সাফাই করা হয় না। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি প্রতিবার অস্ত্রোপচারের আগে ‘অটোক্লেভ’ (যে যন্ত্রে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে জীবাণু মুক্ত করা হয়) করা দরকার। অন্তত তিন মাস অন্তর জীবাণুনাশক স্প্রে করে অস্ত্রোপচারের ঘর ‘জীবাণুমুক্ত’ করাও বাধ্যতামূলক। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওই কাজ করার কথা। কিন্তু সে সব নিয়ম মেনে হচ্ছে না বলেই ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন বলেন, “তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই সব স্পষ্ট হবে।”

এই ঘটনায় সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিজেপি-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “৮ রোগীর পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের দাবি জানিয়েছি।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা জানান, যাদের গাফিলতিতে এমন অবস্থা, তাঁদের গ্রেফতার করার দাবিতে আন্দোলনে নামা হবে।

cooch behar investigation department cataract
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy