Advertisement
E-Paper

জেই ঠেকাতে শিবির, চলছে শুয়োর খোঁজা

কলকাতার উপকণ্ঠে সোনারপুরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগীর হদিস মেলায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন। উদ্বেগ বাড়ছে এখনও পর্যন্ত ওই রোগীর দেহে সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করতে না-পারায়। কেননা উৎস শনাক্ত না-হলে রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া মুশকিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০২

কলকাতার উপকণ্ঠে সোনারপুরে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের রোগীর হদিস মেলায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন। উদ্বেগ বাড়ছে এখনও পর্যন্ত ওই রোগীর দেহে সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করতে না-পারায়। কেননা উৎস শনাক্ত না-হলে রোগের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া মুশকিল।

এর আগে কলকাতা বা তার আশেপাশে রোগী পাওয়া গেলেও তাঁরা বিহার বা উত্তরবঙ্গ থেকে সেই রোগের জীবাণু বহন করা হয়েছে বলে যুক্তি দিতেন স্বাস্থ্যকর্তারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থানা এলাকার উচ্ছেপোতা গ্রামের বাসিন্দা সোনু শাহ নামে ওই রোগাক্রান্ত কিশোরের ক্ষেত্রে কিন্তু সে-কথা বলা যাচ্ছে না। কারণ, নিকট অতীতে সোনারপুরের বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যায়নি সে। যাননি তার পরিবারের অন্য কেউও।

শঙ্কিত স্বাস্থ্যকর্তারা এই অবস্থায় আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তড়িঘড়ি ওই এলাকায় বিশেষজ্ঞদল পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। এলাকার একটি ক্লাবে অস্থায়ী শিবির গড়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা শনি ও রবিবার, দু’দফায় ওই এলাকা ঘুরে এসেছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার জানান, উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গৌরব রায়ের নেতৃত্বে একটি দল বাড়ি বাড়ি ঘুরছে। জ্বর হলেই রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ব্যবস্থা হচ্ছে মশা মারারও। ওই এলাকার কোথাও শুয়োরের আনাগোনা রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কিন্তু ওই কিশোরের শরীরে রোগটা ছড়াল কী ভাবে?

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর ব্যাখ্যা, সোনুর বিহারি কোনও আত্মীয় সম্ভবত বিহার থেকে রোগটি নিয়ে এসেছেন। এ দিন তিনি বলেন, “ওই বিহারি পরিবারটির কোনও আত্মীয় বিহার থেকে সম্প্রতি এ রাজ্যে এসেছেন কি না, আমরা সেই ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। এমন কেউ এসে থাকলে হয়তো তাঁর মাধ্যমেই রোগটি সোনুর শরীরে এসে বাসা বেঁধেছে।”

জাপানি এনসেফ্যালাইটিস কিন্তু এক মানুষের দেহ থেকে অন্য মানুষে সরাসরি সংক্রমিত হয় না। এই রোগ সংক্রমণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশে কিউলেক্স বিশনোই মশা, শুয়োর কিংবা বক জাতীয় পাখি থাকাটা জরুরি। অর্থাৎ যে-কিশোর বিহার বা জাপানি এনসেফ্যালাইটিস প্রবণ কোনও এলাকায় যায়নি, তার শরীরে ওই রোগের জীবাণু পাওয়ার অর্থ, সে এখন যেখানে থাকে, সেই পরিবেশে রোগাক্রান্ত শুয়োর বা বক এবং কিউলেক্স বিশনোই মশা রয়েছে। সংক্রমিত পশু-পাখি-পতঙ্গের সূত্রেই ওই কিশোরের দেহে সংক্রমণ ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, ওই সব প্রাণীর কাছ থেকে রোগটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটাই উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আট দিন আগে জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সোনুকে। তার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয় স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। তাতেই ধরা পড়ে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় শুক্রবার রাতে সোনুকে ট্রপিক্যালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তার অবস্থা সঙ্কটজনক।

শুক্রবারেই কলকাতায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে এক অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)-এর বিজ্ঞানী শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং ট্রপিক্যালের অধিকর্তা নন্দিতা বসু জানিয়েছিলেন, এই রোগ নিয়ে মানুষের সচেতনতা একেবারে তলানিতে। সেই জন্যই জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরেও হাসাতালে ভর্তি করানোর ব্যাপারে বাড়ির লোকজন যথাসময়ে ততটা উদ্যোগী হন না। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে যখন হাসপাতালে পাঠানো হয়, তখন দেখা যায়, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় তাঁরা সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে আরও জোর দেওয়ার পক্ষপাতী।

japanese encephalitis pig hog
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy