Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জলাতঙ্কের জল্পনায় প্রতিষেধক নিতে ভিড় হাসপাতালে

রোগের কোনও লক্ষণ নেই। আছে শুধু ঘোরতর আতঙ্ক। সন্দেশখালির গ্রাম উজাড় করে তাঁরা ছুটছেন স্থানীয় খুলনা গ্রামীণ হাসপাতালে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ বৃদ্ধ থেকে পাঁচ মাসের শিশু কাঁখে মা--হাসপাতালে ঢুকেই হাত এগিয়ে দিচ্ছেন। আর্জি, ‘একটা সুঁই ফুঁড়ে দিন না, না হলে জলাতঙ্ক হবে যে!’

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪
Share: Save:

রোগের কোনও লক্ষণ নেই। আছে শুধু ঘোরতর আতঙ্ক।

সন্দেশখালির গ্রাম উজাড় করে তাঁরা ছুটছেন স্থানীয় খুলনা গ্রামীণ হাসপাতালে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ বৃদ্ধ থেকে পাঁচ মাসের শিশু কাঁখে মা--হাসপাতালে ঢুকেই হাত এগিয়ে দিচ্ছেন। আর্জি, ‘একটা সুঁই ফুঁড়ে দিন না, না হলে জলাতঙ্ক হবে যে!’

গত এগারো দিনে, খুলনা হাসপাতালে এসে, কখনও কাকুতি কখনও বা তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে প্রায় জোর করে প্রতিষেধক নিয়ে গিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার শীতলিয়া থেকে গোরামারি, অন্তত সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা। সন্দেশখালির ব্লক মেডিক্যাল অফিসার পীযূষ মণ্ডলের কথায় স্পষ্ট অসহায়তা, ‘‘কী করব বলুন তো? দাবি একটাই, জলাতঙ্কের প্রতিষেধক দিতে হবে।” তিনি জানাচ্ছেন, ৯ জানুয়ারি থেকে নাগাড়ে আসছেন গ্রামবাসীরা। মারমুখী জনতাকে বোঝাতে না পেরে কার্যত ‘প্রাণ বাঁচাতে’ ইতিমধ্যেই প্রায় সতেরোশো মানুষকে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।

রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এমন গণ হিস্টিরিয়ার উদাহরণ অবশ্য কম নয়। বছর কয়েক আগে, গণেশের দুধ খাওয়া থেকে পুরুলিয়ার স্কুলে শৌচাগারে ভূতের ভয়দীর্ঘ তালিকা। সেই ক্রম তালিকায় শেষ সংযোজন সন্দেশখালিতে জলাতঙ্কের জল্পনা।

প্রশাসনের খবর, কিছু দিন আগে শীতলিয়া গ্রামে প্রতি বারের মতোই বসেছিল রাসমেলা। মেলা কমিটির উদ্যোগে ব্যবস্থা ছিল ঢালাও খিচুড়ি ভোগের। খিচুড়ির সঙ্গে তালিকায় ছিল ঘন দুধের পায়েসও। গ্রামবাসীদের দানেই রান্না হয়েছিল ভোগের বিবিধ পদ। স্থানীয় এক গ্রামবাসী দিয়েছিলেন বেশ কয়েক সের দুধ। রটে গিয়েছিল, যে গরুর দুধে তৈরি হয়েছে পায়েস, দিন কয়েক আগে সেই গরুটিকে কামড়ে ছিল এক পাগলা কুকুর। মেলা ভাঙার দিন কয়েক পরে গরুটি মারা যায়। অভিযোগ, এর পরেই স্থানীয় এক হাতুড়ের নিদানে ছড়িয়ে পড়ে জলাতঙ্কের জল্পনা।

জেলার সহকারী স্বাস্থ্য অধিকর্তা সন্তোষ রায় জানান, প্রথম দিনেই হাজার কয়েক মানুষ হাসপাতাল ঘিরে ধরেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘র্যাবিপুর’ নামে ওই প্রতিষেধকের একটি ফাইলে থাকে পাঁচটি ইনজেকশন। এক বারে পাঁচ জনকেই তা দেওয়া যায়। দাম প্রায় ২৫০ টাকা। কিন্তু ওই প্রতিষেধক নেওয়ার কি কোনও প্রয়োজন ছিল? চিকিৎসকেরা জানান, গ্রামবাসীদের কাছে যতটুকু জানা গিয়েছে, তাতে গরুটি মারা গেলেও তার বাছুরটি রয়েছে বহাল তবিয়তে। তা ছাড়া ওই গরুর দুধে পায়েস খাওয়ার পরে মাস গড়িয়ে গেলেও কোনও গ্রামবাসীরই জলাতঙ্কের উপসর্গ দেখা যায়নি। তাহলে? বিশিষ্ট প্রাণী চিকিৎসক স্বপন শূর বলেন, “গরুটি মারা গিয়েছে ঠিকই। তবে, তার জলাতঙ্ক হলেও সেই দুধে তৈরি পায়েস খেলেও জলাতঙ্কের সম্ভাবনা নেই। এই কথাটাই গ্রামবাসীদের বোঝাতে হবে।” কিন্তু জলাতঙ্ক না হলেও তার প্রতিষেধক নেওয়া কী উচিত? স্বপনবাবু অবশ্য বলেন, “পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে এ ভাবে শুধুই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ওই প্রতিষেধক নিলে প্রয়োজনের সময়ে তা আর পাওয়া যাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nirmal basu basirhat hydrophobia sandeshkhali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE