Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ডাক্তার নেই, বন্ধ ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্র

চিকিত্‌সকের অভাবে গত তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে রায়গঞ্জ পুরসভা পরিচালিত ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্র। তাই রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা কেমোথেরাপি ও ক্যানসারের চিকিত্‌সার জন্য কলকাতা ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরসভা কেন তা চালু করার জন্য উদ্যোগী হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক দল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭
Share: Save:

চিকিত্‌সকের অভাবে গত তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে রায়গঞ্জ পুরসভা পরিচালিত ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্র। তাই রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা কেমোথেরাপি ও ক্যানসারের চিকিত্‌সার জন্য কলকাতা ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরসভা কেন তা চালু করার জন্য উদ্যোগী হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক দল।

পুরসভার চেয়ারম্যান তথা রায়গঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের দাবি, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সদ্য ডাক্তারি পাশ করে আসা রায়গঞ্জের একজন চিকিত্‌সককে নিয়োগ করে ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি চালু করা হচ্ছে। ক্যান্সার রোগীদের অতিরিক্ত পরিষেবা দেওয়ার স্বার্থে এখন থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু কেন গত তিন বছরে চিকিত্‌সক নিয়োগ করে কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হল না?

মোহিতবাবুর যুক্তি, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ না মেলাতেই তা সম্ভব হয়নি। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরসভার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পৃথক একটি ঘরে ক্যান্সারের ওই চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি চালু করা হয়। তত্‌কালীন উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক সুকুমার ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ণ পাত্র, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুধাংশুশেখর সাহুর উপস্থিতিতে মোহিতবাবু কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন। পুরসভার তরফে সেই সময়ে মালদহের এক ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করে কেন্দ্রটি চালু করা হয়।

ওই চিকিত্‌সক সপ্তাহে একদিন ওই চিকিত্‌সাকেন্দ্রে এসে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়া-সহ অন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ওষুধ লিখে দিতেন। পুরসভার স্বাস্থ্য পরিষেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর পবিত্র চন্দ জানান, প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন করে রোগী চিকিত্‌সা পরিষেবা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রটিতে আসতেন। তাঁর দাবি, ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে মালদহের ওই চিকিত্‌সক ইস্তফা দেওয়ায় চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুর জেলায় কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক নেই। বাইরের চিকিত্‌সকরাও রায়গঞ্জে নিয়মিত এসে কাজ করতে রাজি হননি। তাই গত তিন বছর ধরে বহু চেষ্টা করেও ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলার ন’টি ব্লকে প্রায় এক হাজার ক্যান্সার রোগী রয়েছেন। জেলার কোনও সরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ক্যান্সারের চিকিত্‌সা বা কেমোথেরাপি দেওয়ার কোনও পরিকাঠামো নেই।

জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অমল আচার্য বলেন, “প্রতিদিনই বহু রোগী ক্যান্সারের চিকিত্‌সা ও কেমোথেরাপি নেওয়ার জন্য কলকাতা ও শিলিগুড়ির বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরসভার ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি চালু থাকলে রোগীদের এক দিকে যেমন হয়রানির মুখে পড়তে হত না। দুঃস্থ রোগীদের টাকাও বেঁচে যেত।” বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তী ক্যান্সার চিকিত্‌সকের অভাবের কথা মেনে নিলেও কেনও গত তিন বছরে একজন চিকিত্‌সককেও পুরসভা জোগাড় করতে পারল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ক্যানসার আক্রান্ত বহু রোগী টাকার অভাবে বাইরে গিয়ে ক্যান্সারের চিকিত্‌সা করাতে সমস্যায় পড়ছেন। তাই পুরসভার উচিত অবিলম্বে চিকিত্‌সা কেন্দ্রটিকে চালু করা। সিপিএমের রায়গঞ্জ জোনাল সম্পাদক অনিরুদ্ধ ভৌমিকের কটাক্ষ, পরিকল্পনা ছাড়া পুরসভা হুটহাট করে ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি চালু করে দেওয়াতেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর দাবি, রোগীদের স্বার্থে দলের তরফে দীর্ঘদিন ধরে পুরসভার কাছে ক্যান্সার চিকিত্‌সাকেন্দ্রটি চালু করার দাবি জানানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raiganj cancer health centre no doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE