Advertisement
E-Paper

ডাক্তার বললেন, ‘দেরির কোনও কারণ হয় না’

বুধবার, সকাল সাড়ে ৮টা। রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল। বর্হিবিভাগের বন্ধ টিকিট কাউন্টারের সামনে তখন জনা দশেক মহিলা-পুরুষের জটলা। বাইরে তারও ভিড়। সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই তাঁরা প্রত্যেকেই কাউন্টার খোলার অপেক্ষায় রয়েছেন। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট। বর্হিবিভাগের বারান্দায় যাঁরা অপেক্ষা করছেন, কেউ এসেছেন নলহাটির ভদ্রপুর, শালিশণ্ডা, কুমারশণ্ডা, লোহাপুর, ট্যরাহাট থেকে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৯
তখনও খোলেনি রামপুরহাট হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার।

তখনও খোলেনি রামপুরহাট হাসপাতালের টিকিট কাউন্টার।

বুধবার, সকাল সাড়ে ৮টা। রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল।

বর্হিবিভাগের বন্ধ টিকিট কাউন্টারের সামনে তখন জনা দশেক মহিলা-পুরুষের জটলা। বাইরে তারও ভিড়। সকাল সাড়ে ৭টা থেকেই তাঁরা প্রত্যেকেই কাউন্টার খোলার অপেক্ষায় রয়েছেন।

সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট।

বর্হিবিভাগের বারান্দায় যাঁরা অপেক্ষা করছেন, কেউ এসেছেন নলহাটির ভদ্রপুর, শালিশণ্ডা, কুমারশণ্ডা, লোহাপুর, ট্যরাহাট থেকে। কেউ কেউ মুর্শিদাবাদের সীমান্ত ঘেঁষা মুরারই থানার গগনপুর এলাকা থেকে। বর্হিবিভাগের করিডরের এখানে ছড়িয়ে অপেক্ষা করছেন কয়েক জন। ঘড়ি দেখতে দেখতে এক দু’জন ঘুরে যাচ্ছেন কাউন্টারের সামনে থেকে।

সকাল ৯টা। হাসপাতাল চত্বর।

বহির্বিভাগ এবং জরুরি বিভাগের সামনে একটি জলের ট্যাঙ্ক থেকে নাগাড়ে জল পড়ে যাচ্ছে। বন্ধ করার কেউ নেই। অথচ দিন কয়েক আগেই ৮ ঘণ্টা জল সরবরাহ ব্যাহত থাকার জন্য নির্জলা ছিল এই হাসপাতাল। নিকাশি নালায় আবার কুকুর, ছাগল, শুয়োর ঘুরছে। কর্তৃপক্ষের তরফে সে নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। যত্রতত্র নোংরা। এ দিকে, বর্হিবিভাগের বন্ধ টিকিট কাউন্টারের সামনে রোগী-পরিজনদের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে।

৯টা ১০ মিনিট। তখনও ঝাড়ু পড়েনি হাসপাতালের করিডরে। বর্হিবিভাগের কাউন্টার খোলার উদ্যোগ নজরে এল। রোগীরা উদগ্রীব হয়ে কাউন্টারের দিকে ভিড় জমাচ্ছেন। আরও ৫ মিনিট পরে বর্হিবিভাগের বারান্দায় ঝাড়ু পড়তে শুরু করল। ঘড়িতে যখন ৯টা ২০ মিনিট বর্হিবিভাগের দোতলায় নিজের চেম্বারে তালা খোলা হয়নি দেখে ইন্ডোরে ভর্তি থাকা রোগীদের দেখতে চলে গেলেন শিশু চিকিৎসক। একটু পরেই এলেন চর্ম বিভাগের চিকিৎসক চঞ্চল দাস। তাঁকে দাঁড়িয়েই থাকতে হল। তখনও রোগীদের পরীক্ষা করার ঘরই খোলা হয়নি।


খোলা হচ্ছে দন্ত বিভাগ। (ডান দিকে) জরুরি বিভাগে মাত্র এক জন চিকিৎসক উপস্থিত।

৯টা ৪৫ মিনিট। হাসপাতালের বর্হিবিভাগ। অস্থি রোগ বিশেষজ্ঞ মনিরুল ইসলাম ঢুকতেই শ’খানেক রোগী তাঁকে ঘিরে ধরলেন। ডাক্তারবাবুকে প্রশ্ন করা হল, কেন এত দেরি? মনিরুল ইসলামের উত্তর, “দেরির কোনও কারণ হয় না।” অন্য দিকে, সকাল ১০টাতেও দেখা মিলল না দন্ত বিভাগে চিকিৎসকের। তখনও এসে পৌঁছননি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞও।

কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগে পৌঁছে দেখা মিলল দাদপুরের ওয়াদেশ আলির। তিনি বললেন, “স্ত্রী কোমরের ছবি করার জন্য সোমবার হাসপাতালে এসেছিলেন। বর্হিবিভাগের এক্স-রে বিভাগ তাঁকে জানিয়ে দেয়, মেশিন খারাপ থাকায় প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি হবে না।” বাইরে থেকে ৩০০ টাকা খরচ করে সেই এক্স-রে করাতে বাধ্য হন ওয়াদেশরা। রিপোর্ট দেখাতে তিনি এ দিন এসেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্বাস্থ্য জেলা’ রামপুরহাট হাসপাতালের বহির্বিভাগে গত তিন বছর ধরে ওই পরিষেবা বন্ধ।

সকাল ১০টা ১০ মিনিটে হাসপাতালের দোতলায় নিজের চেম্বারে এলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অজয় মণ্ডল। এত দেরি কেন? তাঁর উত্তর, “কী করব, দু’দিন থেকে অ্যাডমিশন চলছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত ইন্ডোর ভিজিট করতে হয়েছে। তিন জন গাইনিকে দু’দিন করে অ্যাডমিশন ডে করতে হচ্ছে।” সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই দোতলাতেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বেশ কয়েক জন বহিরাগত। এক চিকিৎসককে সাহায্য করছেন। প্রসূতি বিভাগে রোগীর বিছানায় পরিবারের লোকেদের হামলে পড়া ভিড়। কর্তব্যরত নার্সের সাফাই, “মাইকে ঘোষণা করা হলেও ওরা যেতে চায় না। সিকিউরিটিদের বলা হয়। তবুও কিছু হয় না।”

মহিলা বিভাগ, পুরুষ বিভাগে রোগীর বিছানায় চাদর নেই। স্টোরে অ্যান্টাসিড ট্যাবলেটের জোগান নেই। কোনও শয্যা বাড়েনি। প্রতিষেধক ল্যাক্সিস এবং ডাইজিপাম নেই। শিশুদের জ্বর, সর্দির ওষুধ অ্যাজিথ্রোমাইসিনের দুশো ফাইল স্টোরে জমে আছে দু’মাস ধরে। কখনও জেলা হাসপাতাল, কখনও মাল্টিসুপার হসপিটাল, এখন আবার মেডিক্যাল কলেজ। নানা প্রতিশ্রুতির সাক্ষী জেলার এই গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালটি। কিন্তু বেহাল এই ছবি কার্যত হাসপাতালের সর্বত্র। অথচ অতি সম্প্রতি রামপুরহাট হাসপাতালে রোগীকল্যাণ সমিতির একটি সভায়, চিকিৎসকদের সকাল ৯টার মধ্যে বর্হিবিভাগে আসার সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে সভায় সুপারকে কঠোর হওয়ার নিদের্শ দেন চেয়ারম্যান তথা মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় এবং রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

হাসপাতাল সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল বলেন, “বহির্বিভাগের চিকিৎসকেরা যাতে ৯টার মধ্যে আসেন সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছে। যে ওষুধগুলি নেই সেগুলি আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য বিষয়গুলি খোঁজ নিয়ে দেখব।”

ছবি: অনির্বাণ সেন

rampurhathospital outdoor absenseofdoctors apurbachattapadhyay rampurhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy