চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি হাসপাতালে বন্ধ্যাত্বকরণ (লাইগেশন) করাতে এসে মৃত্যু হল এক আদিবাসী মহিলার। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। ওই ঘটনায় মৃতের জামাইবাবু বিকাশ মুণ্ডা বাগদার ব্লক মেডিক্যাল অফিসার সুরজ সিংহের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার প্রতিবাদে ও অভিযুক্ত বিএমওএইচকে গ্রেফতারের দাবিতে সন্ধ্যায় বহু আদিবাসী জড়ো হয়ে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। মিনিট চল্লিশের জন্য বনগাঁ-বাগদা সড়ক অবরোধও করা হয়। পরে বাগদার ওসি গোপাল বিশ্বাস ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই বিএমওএইচের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে বিষয়টি জানানো হবে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয়কুমার আচার্য বলেন “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপারকে একটি রির্পোট দিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় ভাবেও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠেছে। তারও তদন্ত করা হচ্ছে।” গাফিলতির অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন বিএমওএইচ।
নীলিমা সর্দার (৩০) নামে নদিয়ার চাকদহ থানার রাজার মাঠ এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলার তিন সন্তান। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভাবের সংসারে মহিলা ভেবেছিলেন, বন্ধ্যাকরণ করাবেন। স্বামী পিন্টু ভিন রাজ্যে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। সম্প্রতি নীলিমা তাঁর দিদি সরলা মুণ্ডার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন। সরলার বাড়ি বাগদা থানার কুলোধরপুর গ্রামে। নিলীমা বুধবার দিদির বাড়িতে আসেন।
থানায় লিখিত অভিযোগে নীলিমার জামাইবাবু বিকাশবাবু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে শ্যালিকাকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে যান। বেলা ১টা নাগাদ বিএমওএইচ সুরজ সিংহ অস্ত্রোপচার করেন। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসকের গাফিলতিতেই আমার শ্যালিকা মারা গিয়েছেন।” তাঁর কথায়, “মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আমার স্ত্রীকে ডেকে শ্যালিকার মৃতদেহে স্যালাইন-অক্সিজেন লাগিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।” বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা আড়াইটে নাগাদ ওই মহিলাকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সুরজবাবু গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “লাইগেশনের পর ওই মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাগদা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি জীবিত ছিলেন। তবে কী কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, তা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই জানা যাবে।” তিনি কি মৃত মহিলাকে স্যালাইন লাগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন? সুরজবাবুর জবাব, “মৃত মানুষকে স্যালাইন দেওয়া যায় না।” নীলিমাদেবীর দেহ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ঢোকার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সুরজবাবুও সেখানে আছেন। হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্করের ঘরে চলে যান। রাত পর্যন্ত বাগদা হাসপাতালে ফেরেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy