Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে ডেঙ্গি, ডাকা হল পতঙ্গবিদদের

রোগ নিয়ন্ত্রণ তো দূর অস্ত, উল্টে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শিলিগুড়িতে। গত ১০ দিনে নতুন করে অন্তত ৩০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা বুঝতে পেরে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেকে পাঠানো হয় পতঙ্গবিদদের। মঙ্গলবারই পতঙ্গবিদদের তিন সদস্যের একটি দল কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছেছে। আজ, বুধবার থেকে শহরের ডেঙ্গি আক্রান্ত ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরে দেখবেন তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

রোগ নিয়ন্ত্রণ তো দূর অস্ত, উল্টে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে শিলিগুড়িতে। গত ১০ দিনে নতুন করে অন্তত ৩০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক তা বুঝতে পেরে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেকে পাঠানো হয় পতঙ্গবিদদের। মঙ্গলবারই পতঙ্গবিদদের তিন সদস্যের একটি দল কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পৌঁছেছে। আজ, বুধবার থেকে শহরের ডেঙ্গি আক্রান্ত ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরে দেখবেন তারা। বিভিন্ন এলাকায় মশার ঘনত্ব নির্ণয় এবং সেই মতো তা নিয়ন্ত্রণে কোথায় কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা ঠিক করতেই ওই সমীক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “পতঙ্গবিদদের একটি দল এসেছে। রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।”

গত শনিবারের পর থেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে কারও মৃত্যু না-হলেও আক্রান্তের সংখ্যা যে বেড়েই চলেছে, স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টেই তা স্পষ্ট। রিপোর্ট অনুসারে, গত ১০ দিনে নতুন করে অন্তত ৩০ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেছে। দিন দশেক আগে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল শুধু অক্টোবর মাসে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ জন। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬ জন। গত সোমবার পর্যন্ত পাওয়া হিসেবে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২। পুর এলাকার ১২টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি হানা দিয়েছে বলে অক্টোবরের শেষে সমীক্ষা করে জানতে পারে স্বাস্থ্য দফতর। এখন তা আরও অন্তত ৭ টি ওয়ার্ডে ছড়িয়েছে। এরমধ্যে ৫,৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ সব থেকে বেশি। গঙ্গানগর, নেপালি বস্তি-সহ ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অক্টোবর মাসে ১২ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। ওই ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২০ ছাড়িয়েছে। এলাকার বাড়িতে বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত রোগী। অথচ মশা মারতে বা রোগ নিয়ন্ত্রণে পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ জন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে যে সংখ্যা ধরা হয়েছে বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা তার থেকেও অনেক বেশি বলেও বাসিন্দাদের দাবি। কেন না অনেকের রক্তের এনএসওয়ান পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়লেও স্বাস্থ্য দফতর তা হিসাবের মধ্যে ধরছে না বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। নার্সিংহোমগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষা হয় না। তাই রক্তের নমুনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান তারা। ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় যাদের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলছে সেটাই তারা নথিভুক্ত করছেন।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ১৯৭ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ডেঙ্গি ধরা পড়েছে ৯২ জনের। অক্টোবরের মধ্যে শিলিগুড়ি পুরসভার ৪,৯, ৩১, ৩৩, ৪৬ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি হানা দেয়।

গঙ্গানগরের বাসিন্দা সঞ্জয় খাতি নামে এক কিশোর এনসেফ্যালাইটিস এবং ডেঙ্গির সংক্রমণ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। গত শনিবার সকালে খালপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি অনিমা শেঠ নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। গত এক সপ্তাহে শহরের ১, ২, ৩, ২৫, ২৬, ৪৩, এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ছড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ জনের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের কয়েক জনের রক্তেও ডেঙ্গির জীবাণু ধরাও পড়ে। শহরের নার্সিংহোমগুলিতে অন্তত ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে। তাদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

entomologist siliguri spread dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE