Advertisement
E-Paper

বকেয়া মেলেনি, দিনভর বন্ধ নিশ্চয়যান

মাসের পর মাস ধরে তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না। এই অভিযোগে, বৃহস্পতিবার দিনভর নিশ্চয়যান পরিষেবা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ আন্দোলনের পথে হাঁটলেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা গাড়ি মালিকেরা। প্রত্যন্ত এলাকার প্রসূতি ও একবছর বয়সী অসুস্থ শিশুদের বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে এবং আবার বাড়ি পৌঁছে দিতে চালু হওয়া এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে সমস্যায় পড়লেন অনেকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
এক দিকে চাকা চলছে না নিশ্চয়যানের। অন্য দিকে, শিশুদের  হাসপাতাল চত্বরে অপেক্ষা করছেন মা ও আত্মীয় পরিজনেরা।  ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

এক দিকে চাকা চলছে না নিশ্চয়যানের। অন্য দিকে, শিশুদের হাসপাতাল চত্বরে অপেক্ষা করছেন মা ও আত্মীয় পরিজনেরা। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

মাসের পর মাস ধরে তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না। এই অভিযোগে, বৃহস্পতিবার দিনভর নিশ্চয়যান পরিষেবা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ আন্দোলনের পথে হাঁটলেন সিউড়ি জেলা হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা গাড়ি মালিকেরা। প্রত্যন্ত এলাকার প্রসূতি ও একবছর বয়সী অসুস্থ শিশুদের বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে এবং আবার বাড়ি পৌঁছে দিতে চালু হওয়া এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে সমস্যায় পড়লেন অনেকেই।

এ দিন সকাল থেকেই নিশ্চয়যান হিসেবে ব্যবহৃত গড়িগুলির গায়ে দাবিদাওয়া সংক্রান্ত পোস্টার সেঁটে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ মিছিল, পরে জেলা হাসপাতালের সুপার শোভন দেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত এ দিনই জেলা হাসপাতালে পরিদর্শনে আসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই নিশ্চয়যান গাড়ি মালিকেরা স্লোগান দিয়েছেন। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে গাড়ি মালিকদের দীর্ঘ বৈঠক হয়। হাসপাতাল সুপার জানান, এ খাতে টাকা না থাকায় গাড়ি মালিকদের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সুপারের কাছ থেকে সমাধান সূত্র না মেলায় এ দিন বিকেলে মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর)অরুন্ধুতী ভৌমিক এবং জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য অধিকর্তার কর্তিক মণ্ডলের সঙ্গে বৈঠকের পর এবং প্রশাসনের অনুরোধে সাময়িক ভাবে পরিষেবা চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন গাড়ি চালকেরা।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত এলাকার প্রসূতিদের বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে এবং প্রসবের পরে আবার বাড়ি পৌঁছে দিতে মাতৃযান পরিষেবা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের মে মাস থেকে। সেটাই এখন নিশ্চয়যান। শুধু মা নন শিশুর জন্মের এক বছর পর্যন্ত অসুস্থতার কারণে (প্রয়োজন অনুযায়ী ) জেলা বা জেলার বাইরে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাবে নিখরচায়। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তি করে পরিষেবা দেয় নিশ্চয়যান গাড়িগুলি। পরিষেবা দেওয়ার পরিবর্তে নির্দিষ্ট দরও বাঁধা রয়েছে। প্রসূতির বাড়ি থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে দেড়শো টাকা, ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে ২৫০ টাকা, ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটারের ক্ষেত্রে ৩৫০ টাকা, ৩০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার অবধি ৪৫০ টাকা এবং তার বেশি হলে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৮ টাকা হারে ভাড়া ধার্য রয়েছে। এই হারে স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে টাকা পান চুক্তিবদ্ধ গাড়ির মালিকেরা। স্বাস্থ্য দফতর সেই টাকা পায় জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন থেকে।

হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে বিক্ষোভের মুখে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র

সিউড়ির ক্ষেত্রে তা হলে সমস্যাটা কোথায়? নিশ্চয়যান মালিক স্বরূপ কোনার, কাঞ্চন মণ্ডলদের দাবি, “সিউড়ি জেলা হাসপাতাল সংলগ্ন ব্লক এলাকার প্রসূতি ও শিশুদের জেলা হাসপাতাল ও প্রয়োজনে বর্ধমান ও কলকাতার মতো জেলার বাইরে অন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আসাকরে থাকে নিশ্চযানগুলি. গাড়ি মালিকদের দাবি, পরিষেবা যাথাযাথ দিলেও গত পাঁচ মাস ধারে কোনও টাকাই পাই নি. 24টি নিশ্চয়যানের প্রাপ্য বকেয়া রয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। গাড়ি মালিকদের ক্ষোভ, বারবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও সুপারকে তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু এখনও টাকা পাননি। এ ভাবে দিনের পর দিন নিশ্চয়যান চালান সম্ভব হচ্ছে না।

এ ছাড়া প্রকল্প শুরু হওয়ার সময় ডিজেলের যে দাম ছিল তা বর্তমানে দেড়গুণ বেড়ে গিয়েছে। সরকার নির্ধারিত ঠিক করে দেওয়া দরও বিবেচনার আর্জি জানান গাড়ি মালিকেরা। অন্য দিকে, এ দিন পরিষেবা বন্ধের জেরে বিপাককে পড়েন প্রসূতি ও পরিজনেরা। যেমন ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের উলুকুণ্ডা গ্রামের আসমিনা বিবি ও সাঁইথিয়ার ষাটপলসা গ্রামের ফতেমা বিবিরা বুধবার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বাড়ি ফেরার জন্য মাতৃযানের খোঁজ করেন তাঁর বাড়ির লোকজন। কিন্তু নিশ্চয় যান না পেয়ে অন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। এ দিনই এই বিষয়ে বৈঠক হয়েছে স্বাস্থ্যভবনে। আশাকারি দিন কয়েকের মধ্যে সমস্যা মিটবে।” গাড়ি মালিকেদের হুঁশিয়ারি, প্রশাসনের অনুরোধে আপাতত পরিষেবা শুরু করা হচ্ছে ঠিকই। তবে কয়েক দিনের মধ্যে বকেয়া টাকা না পেলে একই ভাবে পরিষেবা বন্ধ করে অন্দোলন করা হবে। চলবে জেলা জুড়ে।

agitation suri nishchayjan vehichle service unavailable
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy