Advertisement
E-Paper

বহু চিকিৎসকের পদ শূন্য, সঙ্কটে পরিষেবা

অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসকের পদ শূন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়! মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলায় সরকার অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ ২০২টি। অথচ রয়েছেন মাত্র ১০০ জন। শূন্য রয়েছে ১০২টি পদ! ফলে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাবে মিলছে না স্বাস্থ্য পরিষেবা। হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭

অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসকের পদ শূন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়! মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলায় সরকার অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ ২০২টি। অথচ রয়েছেন মাত্র ১০০ জন। শূন্য রয়েছে ১০২টি পদ! ফলে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাবে মিলছে না স্বাস্থ্য পরিষেবা। হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

সরকারি হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা মেলে না, এমন অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। বর্তমান সময়ে নানা ধরনের জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষত, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। চলতি বছরেই এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার দাপটে জেলায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারপরেও চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার ক্ষেত্রে এমন অবস্থা কেন? এ ব্যাপারে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি। শীঘ্রই শূন্য পদ পূরণ হয়ে যাবে বলেও আশ্বাস পেয়েছি।”

রোগী এসে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসকের আর দেখা মেলে না। জেলার অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এমনই দশা। সম্প্রতি চিকিৎসক না থাকার অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দারা চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দু’তিন ঘণ্টা কেটে গেলেও কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। তাই বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। চিকিৎসক মিলবেই বা কী করে? ৬০ শয্যাবিশিষ্ট চন্দ্রকোনা গ্রামীন হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৮টি। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ৩ জন! একই অবস্থা গড়বেতাতেও। দিন কয়েক আগেই গড়বেতার নোয়ারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তালাবন্ধ করে আটকে রাখেন গ্রামের মানুষ। সঙ্গে চলতে থাকে বিক্ষোভ। কেন সেই বিক্ষোভ? ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু ৬০ শয্যা বিশিষ্ট গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে ৮ জনের পরিবর্তে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৪ জন। গ্রামীণ হাসপাতালের চাপ সামলাতে নোয়ারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ব্লক হাসপাতালে সপ্তাহে দু’দিন করে চিকিৎসক নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তা কার্যকরী করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় স্বাস্থ্য কর্মীদের তালাবন্দি করে বিক্ষোভ। গ্রামবাসীদের সাফ কথা, “গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালের সমস্যা মেটানোর দায় স্বাস্থ্য দফতরের। কিন্তু তার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসক তুলে নিলে কিভাবে চলবে। ওই সময় গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে কী করবেন?”

অন্য দিকে, বহু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে কোনও চিকিৎসকই নেই। গড়বেতারই সন্ধিপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু এক জনও নেই। ভরসা কেবল ফার্মাসিস্ট। ফলে রোগীর অবস্থা একটু জটিল হলেই তাঁকে অন্যত্র ‘রেফার’ করা ছাড়া উপায় থাকে না। অথচ ওই স্বাস্থ্যেকেন্দ্রেও দশটি শয্যা রয়েছে। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের মাংরুল ও ডিঙাল, ঘাটালের নতুক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন করে চিকিৎসক থাকার কথা। সেখানেও ১০টি করে শয্যা রয়েছে। কিন্তু কোনও চিকিৎসক না থাকায় সমস্যা বাড়ছে।

জঙ্গলমহলের অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও চিকিৎসক শূন্য। গড়বেতা ২ ব্লকে ছোটতারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসক থাকার কথা। দু’টি পদই শূন্য! বেশিরভাগ গ্রামীণ হাসপাতালেও অর্ধেক চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেও চিকিৎসক নেই। একটি গ্রামীণ হাসপাতাল হোক বা ব্লক হাসাপাতাল, সেখানে এক জন ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের পাশাপাশি এক জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ, এক জন শিশু বিশেষজ্ঞ ও এক জন অ্যানাস্থেটিস্ট রাখা হয়। বাকি সাধারণ মেডিক্যাল অফিসার। ৩০ শয্যার হাসপাতাল হলে ৬ জন ও ৬০ শয্যার হলে ৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলার ২১টি ব্লকের মধ্যে ১২টি ব্লকে ব্লক মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন। ন’টি পদ শূন্য! ১৫টি প্রসূতি ও ১৫টি শিশু বিশেষজ্ঞেরও পদ শূন্য! ১৩টি অ্যানাস্থেটিস্টের পদ শূন্য।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযান প্রকল্পের মাধ্যমে নেওয়া অস্থায়ী চিকিৎসক দিয়ে যা হোক করে কিছুটা সমস্যা মেটানো গিয়েছে। এরকম চলতে থাকলে গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবা যে একেবারে ভেঙে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দ্রুত শূন্য পদ পূরণ করার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদনও জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তবে ওই শূন্য পদগুলি কবে পূরণ হয়, সেটাই দেখার।

suman ghosh medinipur medical infrastructure is in trouble
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy