Advertisement
E-Paper

মানসিক হাসপাতালের দিকে ‘মন’ দিচ্ছে রাজ্য

রাজ্যের মানসিক হাসপাতালগুলি যেন এক-একটি ‘নো ম্যান্‌স ল্যান্ড’! এই স্বীকারোক্তি স্বয়ং রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মানসিক হাসপাতালগুলির হাল ভয়াবহ। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাও তা মেনে নিয়েছেন। আর সেই মেনে নেওয়া থেকেই এ বার শুরু হয়েছে পালাবদলের চেষ্টা। যদিও তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, সে নিয়ে গোড়াতেই সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৬

রাজ্যের মানসিক হাসপাতালগুলি যেন এক-একটি ‘নো ম্যান্‌স ল্যান্ড’! এই স্বীকারোক্তি স্বয়ং রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে-র। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মানসিক হাসপাতালগুলির হাল ভয়াবহ। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারাও তা মেনে নিয়েছেন। আর সেই মেনে নেওয়া থেকেই এ বার শুরু হয়েছে পালাবদলের চেষ্টা। যদিও তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, সে নিয়ে গোড়াতেই সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার তিরস্কার করেছিল রাজ্যকে। আদালতের বক্তব্য ছিল, যা হওয়ার কথা তার অনেক কিছুই এ রাজ্যে হয় না। সে কথা মেনে নিয়েই মলয়বাবু জানান, এ বার কঠোর প্রশাসনিক নজরদারি শুরু করবেন তাঁরা। তাঁর কথায়, “মানসিক হাসপাতালগুলিতে দিনের পর দিন এমন অনেক কিছুই ঘটেছে যা ঘটা উচিত নয়। এ বার নিয়মিত আমরা হাসপাতালগুলিতে নজর রাখব। প্রতি দু’মাস অন্তর স্বাস্থ্য ভবনে রিভিউ মিটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অসংখ্য ছোট ছোট সমস্যাও ওই সব হাসপাতালে সমাধান না হয়ে পড়ে থাকে। আমরা চাই এ বার তার দ্রুত সমাধান হোক।”

স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির কর্তাদের নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে নিয়মিত বৈঠক হয়। অন্য হাসপাতালের সুপারদেরও প্রায়ই ডাক পড়ে। কিন্তু মানসিক হাসপাতালকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনা হয় না। ভিতরে কী ঘটছে, পরিষেবার মান কেমন, তার কোনও তথ্য স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে নেই। নিয়মিত রিভিউ মিটিং হলে সেই সমস্যা অনেকটাই কমবে বলে তাঁদের আশা।

পাশাপাশি স্থির হয়েছে, মানসিক হাসপাতালগুলির সঙ্গে ধাপে ধাপে সাধারণ হাসপাতালকে জুড়ে দেওয়া হবে, যাতে সকলের নজরের বাইরে থেকে হাসপাতালগুলিতে যথেচ্ছাচার না চলে। এতে মানসিক রোগীদের শারীরিক চিকিত্‌সার প্রয়োজন হলে প্রতি পদে যে ভাবে তাঁদের প্রত্যাখাত হতে হয়, তা ঠেকানো যাবে। প্রথমেই পাভলভ মানসিক হাসপাতালকে ন্যাশনাল মেডিক্যালের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ন্যাশনালের সাইকিয়াট্রি বিভাগটির কাজ শুরু হয়েছে পাভলভ চত্বরেই। পাশাপাশি ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রিকে রাজ্যে মানসিক রোগের ‘রেফারল’ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে যে কোনও জায়গা থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থার মনোরোগীদের রেফার করে ওখানে পাঠানো যাবে।

মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের পক্ষে রত্নাবলী রায় বলেন, “এই উদ্যোগকে স্বাগত। তবে মানসিক রোগীরা এখানে এতটাই বঞ্চনার শিকার যে, যতক্ষণ এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা স্বস্তি পাব না।”

একই সংশয় স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশেরও। তাঁদের বক্তব্য, মানসিক হাসপাতালগুলিতে সুপারের পদ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরা তা যথাযথ ভাবে পালন করছেন কি না তার খবর কেউ রাখে না। মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধিকর্তার পদও রয়েছে, কিন্তু তাঁকে মানসিক হাসপাতালে দেখা যায় না। ২০১১ সালে তৈরি হয়েছিল ‘স্টেট মেন্টাল হেল্‌থ অথরিটি’। সেটাও এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ওই অথরিটিকে ফের চাঙ্গা করতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দিয়েছিল। তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, মেন্টাল হেল্‌থ অথরিটির কোনও সুপারিশই মানা হয়নি। ওই অথরিটির সদস্য হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন মনোবিদ মোহিত রণদীপ। তিনি বলেন, “যত দিন কোনও মনোরোগ চিকিত্‌সককে মানসিক হাসপাতালের সুপার করা না হবে, তত দিন এই সমস্যা মিটবে না। অন্য চিকিত্‌সকের পক্ষে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বোঝাই সম্ভব নয়। তাই শুধু প্রশাসক নিয়োগ করে কাজ হবে না। নার্স এবং অন্যান্য কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণও জরুরি।”

স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “পুরোপুরি জোড়াতালি দিয়ে চলেছে এত দিন। মনোরোগীরা নিজেদের অধিকার নিয়ে সরব হতে পারেন না বলে তাঁদের নিয়ে আমরাও মাথা ঘামাইনি। সুপ্রিম কোর্ট কঠোর মনোভাব নেওয়ায় আমাদেরও নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে। এত দিনে সত্যি কোনও পরিবর্তন আসে কি না দেখা যাক।”

soma mukhopadhay mental hospital state government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy