রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভাঙচুর।
পেটে ব্যথা হওয়ায় তিন দিন আগে রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল দু’বছরের একটি শিশুকে। রবিবার আচমকাই শিশুটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। এই ঘটনার জেরে সোমবার তার আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। তারা সুপারের ঘরের টেবিলের কাচ, একাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, জানলা ভাঙচুরের পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিও তছনছ করে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের সহকারী সুপারের ঘরেও ভাঙচুরের চেষ্টা হয় বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতাল সুপার অনুপ হাজরা ওই ঘটনায় রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’বছরের ওই শিশুর নাম আয়ুষ শর্মা। গত শুক্রবার আয়ুষকে রায়গঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করান তার পরিবারের লোকেরা। রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ অবস্থার অবনতি হওয়ায় আয়ুষকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসকরা। সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগে রায়গঞ্জ হাসপাতালেই তার মৃত্যু হয়। এরপরেই চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে হাসপাতালে প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখান মৃত শিশুর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। কিন্তু ওই দিন হাসপাতালের সুপার অনুপবাবু ছুটিতে থাকায় তাঁরা লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেননি। সোমবার সকালে অনুপবাবু কাজে যোগ দেওয়ার পর মৃত শিশুর বাবা অনিকেত শর্মা তাঁর কাছে লিখিতভাবে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ জানান। সেই সময় আয়ুষের মৃতদেহ নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। সেই সময়েই সুপার ও সহকারী সুপারের ঘরে ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ।
সুপার বলেন,“চিকিৎসার গাফিলতিতে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে একদল মানুষ এদিন আমার ও সহকারী সুপারের চেম্বারে ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়। যেহেতু আমি অভিযুক্তদের চিনি না, তাই ভাঙচুরের কারণ উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় একদল মানুষের নামে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।” রায়গঞ্জের ডিএসপি (সদর) শুভেন্দু মন্ডল এদিন ঘটনার তদন্ত করতে হাসপাতালে যান। তিনি বলেন, “ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় সরকারি সম্পত্তি নষ্টের মামলা দায়ের করা হবে।”
এ দিকে হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রায়গঞ্জের শ্যামপুরহাট এলাকার বাসিন্দা মৃত শিশুর বাবা অনিকেত শর্মা। তিনি বলেন, “কে বা কারা কী কারণে সুপার ও সহকারী সুপারের ঘরে ভাঙচুর করেছে, তা আমাদের জানা নেই।”
অনিকেতবাবুর অভিযোগ, প্রায় দু’দিন বিনা চিকিৎসায় তাঁর ছেলেকে হাসপাতালে ফেলে রাখা হয়েছিল। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁর ছেলেকে দেখেননি। ঠিক মতো ওষুধ, স্যালাইন ও অক্সিজেন দেওয়া হয়নি তাঁকে। আগেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে তাকে অকালে মরতে হত না। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে আয়ুষের চিকিৎসা চলছিল। তিনি বলেন, “শিশুটি গত এক বছর ধরে অন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিল। আমরা তাকে বাঁচাতে সব রকম চেষ্টা করেছি। তবে বাঁচানো যায়নি।” সুপার অনুপবাবুর দাবি, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোনও চিকিৎসক বা নার্সের বিরুদ্ধে গাফিলতির কোনও প্রমাণ মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy