Advertisement
E-Paper

শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি আক্রান্ত ৩৮

পাঁচ দিন আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানালেও বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পৌঁছে শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ডেঙ্গির প্রকোপ সব চেয়ে বেশি শিলিগুড়িতে। চলতি অক্টোবর মাসে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ জন বলে গত শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল। তখনও নার্সিংহোমগুলি থেকে প্রাপ্ত সমস্ত রিপোর্ট তাদের হাতেই ছিল না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও জানিয়েছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০৫
উদাসীন সমাজ। দক্ষিণ দিনাজপুরের পণ্ডিতপুরে জমা জলে আবর্জনা।

উদাসীন সমাজ। দক্ষিণ দিনাজপুরের পণ্ডিতপুরে জমা জলে আবর্জনা।

পাঁচ দিন আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানালেও বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পৌঁছে শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী।

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ডেঙ্গির প্রকোপ সব চেয়ে বেশি শিলিগুড়িতে। চলতি অক্টোবর মাসে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ জন বলে গত শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল। তখনও নার্সিংহোমগুলি থেকে প্রাপ্ত সমস্ত রিপোর্ট তাদের হাতেই ছিল না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও জানিয়েছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। এ দিন শিলিগুড়িতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে বৈঠকে জেলা স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়ে দেন এই মাসে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ নয়, ৩৮ জন। এবং তাঁদের অধিকাংশ শিলিগুড়ি পুরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় তাঁদের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। গত জানুয়ারি থেকে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ জন। শিলিগুড়ি পুরসভার ওই সমস্ত ওয়ার্ড এবং লাগোয়া কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গির সংক্রমণ নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে এ দিন তাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। এ দিন তিনি বলেন, “শিলিগুড়ির কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গির সংক্রমণ হয়েছে। প্রতিরোধের জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “কোথায় কত জন আক্রান্ত, তা খতিয়ে দেখতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে।”

উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। ওই এলাকাগুলি হল, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি। উপরন্তু, গত ২৮ অক্টোবর থেকে তিন দিনের মধ্যে মালদহে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিন জনের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য কর্তাদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। মালদহের নয়াবাঁধা গ্রামে মৃত্যু হয়েছে ওই তিন জনের। এরা ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া না অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ কুমার মণ্ডল বলেন, “জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পরই জানা যাবে কী ধরনের জ্বরে নয়াবাঁধ গ্রামের বাসিন্দারা আক্রান্ত হয়েছেন।” ওই গ্রামে শতাধিক গ্রামবাসী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর বুধবার ওই গ্রামে মেডিক্যাল’টিমও পাঠিয়েছে। আক্রান্তদের রক্তের নমুনা ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে পুর কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে শহরে কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। চলতি অক্টোবর মাসে শিলিগুড়ি পুর এলাকায় ৩৮ জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। যে সমস্ত ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে অবিলম্বে সেখানে সচেতনতা প্রচারের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মালদহ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচকের নয়াবাঁধ গ্রামে যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের নাম আহমেদ শেখ (২৮), রিজবা বিবি(২৪) এবং সাহেব শেখ (৩০)। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৮ অক্টোবর জ্বরে আক্রান্ত আহমেদ শেখ ও রিজবা বিবিকে কালিয়াচকের সিলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে দু’ জনকেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। আত্মীয়েরা তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শিলিগুড়ি পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর আধিকারিকদের একটি দল ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করে। তাতে অনেক জায়গায় আবর্জনা পড়ে থাকার বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে। মশা মারতে ধোঁয়া ছড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দুটি নতুন যন্ত্র কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ডেঙ্গির হানা দিয়েছে ডুয়ার্সের আলিপুরদুয়ারেও। হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম মিলিয়ে সেখানে ডেঙ্গি আক্রান্ত তিন জন রয়েছেন। এনএসওয়ান পরীক্ষায় তাঁদের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে এক জন মহিলা এবং একজন পুরুষ ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন। অপর একজন মহিলা ভর্তি রয়েছেন নার্সিংহোমে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে ভর্তি দুজনের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে এনএসওয়ান পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে।

জলপাইগুড়ি শহরের একটি নার্সিংহোমে এক বিএসএফ জওয়ানকেও ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুরজ ছেত্রী নামে ওই জওয়ান জলপাইগুড়ি শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বর্তমানে মালদহে কর্মরত। গত ২৮ অক্টোবর তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, “ওই জওয়ান কয়েকদিন আগে ছুটিতে বাড়িতে ফিরেছেন। তিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত কিনা সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। ওই রোগীর উপরে নজর রাখা হচ্ছে।’’


পণ্ডিতপুরেই ডেঙ্গি উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ পুষ্প বর্মন। নিজস্ব চিত্র।

ডেঙ্গি প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর অঞ্চলের বাসিন্দাদের। এলাকার অন্তত সাত জন ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি।

স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে দুই মহিলা-সহ তিন জনের রক্তে ম্যাকঅ্যালাইজা পরীক্ষার পর ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। এক মহিলার পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। বাকিদের দ্বিতীয়বার রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মন্ডল জানিয়েছেন। এ দিন বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর অঞ্চলের পন্ডিতপুর, বাদামাইল ও কুতুবপুর এলাকায় মশা মারতে ধোঁয়া ছড়ানো হয়।

dengue siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy