Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শম্ভুনাথে সাপে কাটার ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বিনামূল্যে

সাপে কামড়ানোর জীবনদায়ী ওষুধ রোগীদের বাজার থেকে কেনানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এই ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনম’ (এএসভি) সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় সব স্তরের সরকারি হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা। বাজারে তা কিনতে গেলে এক-একটি ফাইলের জন্য কমপক্ষে হাজার টাকা লাগে। এত বেশি টাকা দিয়ে এএসভি কিনতে না পেরে মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে হাসপাতাল থেকে রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। ফলে তাঁদের অনেকেরই কিডনি চিরতরে বিকল হতে বসেছে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

সাপে কামড়ানোর জীবনদায়ী ওষুধ রোগীদের বাজার থেকে কেনানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এই ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনম’ (এএসভি) সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় সব স্তরের সরকারি হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা। বাজারে তা কিনতে গেলে এক-একটি ফাইলের জন্য কমপক্ষে হাজার টাকা লাগে। এত বেশি টাকা দিয়ে এএসভি কিনতে না পেরে মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে হাসপাতাল থেকে রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। ফলে তাঁদের অনেকেরই কিডনি চিরতরে বিকল হতে বসেছে।

হুগলির নালীকুলের তারাপদ কোলের কথাই ধরা যাক। তিনি দরিদ্র কৃষক। গত রবিবার জমিতে কাজ করার সময়ে তারাপদবাবুকে সাপে কামড়ায়। প্রথমে সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতালে তিনি নিখরচায় ১৮টি এএসভি পান। অবস্থার অবনতি হওয়ায় শম্ভুনাথ পণ্ডিতে রেফার করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, আরও ৮টি ওষুধ দরকার। তা কিনতে হবে বাজার থেকে। টাকার অভাবে ৪টি-র বেশি কিনতে পারেননি পরিজনেরা। চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই তারাপদবাবুকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। এতে তাঁর দু’টি কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। একই অবস্থা হুগলির দশঘরা গ্রামের দরিদ্র খেতমজুর আরতি মালিকের। গত শনিবার মাঠে সাপে কামড়ানোর পরে তাঁকে প্রথমে ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে ও পরে চুঁচুড়া ইমামবড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই হাসপাতালেই ১০টি করে এএসভি পান তিনি। কিডনির অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁকে শম্ভুনাথে রেফার করা হয়। অভিযোগ, আরও ১০টি এএসভি কিনতে বলা হয়। অত টাকা নেই। তাই কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও ফেরানো হচ্ছে তাঁকে।

প্রতি বছর রাজ্যে সাপের কামড় খান কমবেশি উনিশ থেকে চব্বিশ হাজার মানুষ। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগকেই ডায়ালিসিসের জন্য কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিতে রেফার করা হয়। কারণ, শহরে শম্ভুনাথ-সহ মোট তিনটি সরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিসের সুবিধে আছে। বাকি দু’টি এসএসকেএম ও নীলরতন। এই দু’টি মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় অন্য জটিল রোগের চাপ এত বেশি যে জরুরি ভিত্তিতে সাপে কাটার রোগীর জন্য শয্যা পাওয়া সমস্যার।

কিন্তু জুলাই-অগস্ট মাসের এই ভরা সাপে কামড়ানোর মরসুমে বাইরে থেকে এএসভি কেনানো হচ্ছে কেন?

হাসপাতালের সুপার সৌমাভ দত্ত বলেন, “বাইরে থেকে এএসভি না কিনিয়ে উপায় নেই। হাসপাতালে এএসভি-র আকাল। ভিন্ রাজ্যের একাধিক সংস্থাকে দরপত্র ডেকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। তাদের সরাসরি এই হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ করার কথা। নির্দিষ্ট সময়সীমার পরে আড়াই মাস পার হতে চলল, ওষুধ আসেনি।” কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তা দাবি করেছেন, এএসভি-র কোনও অভাব নেই। তা হলে? সৌমাভবাবুর দাবি, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স-এ বারবার ধর্না দিচ্ছেন। তারা সপ্তাহ তিনেক আগে ১০০টা এএসভি দিতে পেরেছে। এ দিকে শম্ভুনাথে এই মরসুমে রোজ ৮-১২ জন, কখনও কখনও ২০-২৫ জন সাপে কাটার রোগী ভর্তি থাকেন। তাঁর কথায়, “এক-এক জনের ২০-৩০টা করে এএসভি লাগে। কুলোবে কী করে?”

সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা অমিত হালদার জানান, হিমাচল থেকে এএসভি আসতে

একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে খুব আকাল নেই। শম্ভুনাথে যেহেতু অনেক সাপে কাটা রোগী আসেন তাই তাঁদের বেশি এএসভি লাগে। অমিতবাবুর কথায়, “ওদের নিজেদের বাজার থেকে কিছু এএসভি কেনা উচিত।” সৌমাভবাবুর দাবি, “লোকাল পারচেজে দাম ও মানে সংশয় থেকে যায়। আমরা ঝুঁকি নিতে চাই না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE