Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ডেঙ্গি-সঙ্কট

সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে শুধু সতর্কতা, মত ডাক্তারদের

ঘুসঘুসে জ্বর। গা-হাত-পায়ে ব্যথা। উপসর্গটাকে আমল দেননি লেকটাউনের দেবব্রত সাধুখা।ঁ শেষে এক রাতে খাওয়ার পরে বমির সঙ্গে রক্ত পড়তেই ডাক্তার দেখানোর কথা মনে পড়ল ২৮ বছরের ওই তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ারের। চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন সকালে ভর্তি হলেন হাসপতালে। ততক্ষণে মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

ঘুসঘুসে জ্বর। গা-হাত-পায়ে ব্যথা। উপসর্গটাকে আমল দেননি লেকটাউনের দেবব্রত সাধুখা।ঁ শেষে এক রাতে খাওয়ার পরে বমির সঙ্গে রক্ত পড়তেই ডাক্তার দেখানোর কথা মনে পড়ল ২৮ বছরের ওই তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ারের। চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন সকালে ভর্তি হলেন হাসপতালে। ততক্ষণে মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করেছে। এক পরজীবী-বিশেষজ্ঞের পরামর্শে প্রথমেই রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ দেখা হল। তা নেমে এসেছে ৪০ হাজারে (সাধারণত তা দেড় লক্ষের উপরে থাকে)। তখনও রক্তের ডেঙ্গি-নির্ণায়ক পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। পরজীবী-বিশেষজ্ঞ জানিয়ে দিলেন, দেবব্রতবাবুর হেমারেজিক ডেঙ্গি হয়েছে। শুরু হল চিকিৎসা।

ডেঙ্গির কোনও প্রতিষেধক নেই। আবার ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়ার মতো পরজীবী-আক্রান্ত রোগের ক্ষেত্রে যেমন নিরাময়ের নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে, তা-ও নেই। তাই ডেঙ্গির চিকিৎসায় অভিজ্ঞেরা বলেন, উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়, ততই ভাল। প্রতিদিন রক্তের প্লেটলেটের পরিমাণ নির্ণয় করা, বাইরে থেকে রক্ত বা প্লেটলেট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো প্রাথমিক চিকিৎসা তাড়াতাড়ি শুরু করলে হেমারেজিক ডেঙ্গির রোগীও হেসেখেলে বাড়ি ফিরতে পারেন সপ্তাহ দু’য়েকে। যেমন কালীপুজোর দিন বাড়িতে ফিরে ইতিমধ্যেই কাজে যোগ দিয়েছেন দেবব্রত।

কিন্তু দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা আট মাসের শিশু বাপনের ক্ষেত্রে তা হয়নি। বাপনের জ্বর চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। শিশু চিকিৎসকের পরামর্শে তার ওষুধ চলছিল। ইতিমধ্যে মলের সঙ্গে রক্ত বেরোনোয় পেটের রোগের ওষুধ দেওয়া হয়। এক পরে তার গায়ে লাল চাকা চাকা বেরোয়। মুখ-নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে শুরু করে। এর পরেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। দেখা যায়, তার রক্তে প্লেটলেট নেমে গিয়েছে ছ’হাজারে। যে পরজীবী-বিশেষজ্ঞের দেখানো পথে চিকিৎসা করে দেবব্রত বাড়ি ফিরেছিলেন, তিনিই তিন রাত জেগেও বাঁচাতে পারেননি বাপনকে।

বাপনের মৃত্যুর পরে রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েন ওই পরজীবী বিশেষজ্ঞ। তাঁর কথায়, “ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে শিশুটিকে বাঁচানো যেত। আসলে মানুষ এবং চিকিৎসকদের একাংশ এখনও এই রোগটি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নন। জ্বরের সঙ্গে শরীর থেকে রক্ত বেরোচ্ছে, এই উপসর্গ দেখেও যদি ডেঙ্গির কথা কোনও চিকিৎসকের মাথায় না আসে, তা হলে কিন্তু বাপনদের মৃত্যু ঠেকানো যাবে না।” ডেঙ্গি সংক্রমণের হার যতই কমুক, মানুষকে সচেতন করার অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে বলে পরামর্শ দেন ওই পরজীবী-বিশেষজ্ঞ।

ডেঙ্গি রোগটা আসলে কী? ডেঙ্গি ভাইরাস বহনকারী কোনও এডিস প্রজাতির মশা কাউকে কামড়ালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডেঙ্গি রোগ হয়। এডিস মশা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে এই রোগ ছড়ায়। উপসর্গ থেকেই রোগটা ধরা পড়ে। জ্বর প্রথমে কম থাকে, পরে হঠাৎ বেড়ে যায়। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। ব্যথা হয় চোখের পিছনে ও গাঁটে। অনেক ক্ষেত্রেই গায়ে লাল লাল দাগ হয়। চোখ লাল হয়। কিছু ক্ষেত্রে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা ও বমি হয়। অনেকের শরীর থেকে রক্তপাতও শুরু হয়। দেহে জলের পরিমাণ কমে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েন রোগী।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। প্যারাসিটামল খেতে হয়। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন। রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ ঘনঘন মাপতে হয়। প্লেটলেট কমতে থাকলে রক্ত দিতে হয়। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে হেমারেজিক ডেঙ্গি (যেখানে শরীর থেকে রক্তপাত হয়) মৃত্যু ঘটাতে পারে। ম্যালেরিয়ার মতো এই রোগ প্রতিরোধেরও একমাত্র উপায় মশা নিয়ন্ত্রণ। কারণ, এই রোগের কোনও প্রতিষেধক এখনও বেরোয়নি। তাই উপসর্গ মিললেই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া সব থেকে বড় দাওয়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dengue virus dengue treatment doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE