Advertisement
E-Paper

সিন্দ্রাণীর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টেকনিশিয়ান ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীই ভরসা গ্রামবাসীদের কাছে

পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে মেডিক্যাল অফিসার (এমও) ও নার্সদের আবাসন। খাঁ খাঁ করছে রোগীদের জন্য তৈরি নতুন ওয়ার্ড। উত্তর ২৪ পরগণার বাগদা থানা এলাকার সিন্দ্রানী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আশপাশের তিরিশটি গ্রামের মানুষের দিনের বেশির ভাগ সময়ের ভরসা চুক্তিভিত্তিক এক টেকনিশিয়ান ও চতুর্থ শ্রেণির এক মহিলা কর্মী। ব্যবস্থা নেই রোগী ভর্তি নেওয়ার। সিন্দ্রানী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কাছের বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৬

পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে মেডিক্যাল অফিসার (এমও) ও নার্সদের আবাসন। খাঁ খাঁ করছে রোগীদের জন্য তৈরি নতুন ওয়ার্ড। উত্তর ২৪ পরগণার বাগদা থানা এলাকার সিন্দ্রানী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আশপাশের তিরিশটি গ্রামের মানুষের দিনের বেশির ভাগ সময়ের ভরসা চুক্তিভিত্তিক এক টেকনিশিয়ান ও চতুর্থ শ্রেণির এক মহিলা কর্মী। ব্যবস্থা নেই রোগী ভর্তি নেওয়ার। সিন্দ্রানী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কাছের বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। আর বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। ফলে সাধারণ মানুষ খুবই সমস্যায় ভোগেন।

এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, স্বাধীনতার পর পর ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তৈরি হয়। তখন সেখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল। ছিল ১০ শয্যার একটি ওয়ার্ড। নার্স ও চিকিৎসকদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছিল কয়েকটি ঘর। সেখানে চিকিৎসক ও নার্সরা থাকতেন। এলাকার মানুষ চব্বিশ ঘন্টা পরিষেবা পেতেন। প্রায় ত্রিশ বছর হতে চলল রোগী ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, জরাজীর্ণ ভবনের কারণেই স্বাস্থ্য দফতর ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

চিকিৎসক ও নার্সদের থাকার ঘরগুলির অবস্থারও জীর্ণ দশা। এখন কোনও চিকিৎসক ও নার্স রাতে এখানে থাকেন না। দীর্ঘ দিন হল নেই কোনও স্থায়ী চিকিৎসকও। যার ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে উত্তরোত্তর। তাঁরা সর্ব ক্ষণ চিকিৎসক থাকা ও পরিষেবা পাওয়ার দাবিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপিও দিয়েছেন নানা সময়ে। তাঁদের আন্দোলনের ফলে কয়েক বছর আগে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চত্বরে শুরু হয় নতুন কয়েকটি কোয়ার্টার তৈরির কাজ। পাশাপাশি ফের রোগী ভর্তি শুরু করার জন্য তৈরি হয় নতুন ওয়ার্ড তৈরির কাজও। বছর দুই হল সেই সব ওয়ার্ড ও কোয়ার্টার তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলেও আজও শুরু হয়নি রোগী ভর্তি নেওয়া। নার্স ও চিকিৎসকদের তৈরি হওয়া কোয়ার্টারেও কেউ থাকেন না। ফলে এলাকার মানুষ হতাশ।

দু’বছরের অব্যবহারে দু’টি নার্স কোয়ার্টার, একটি এমও কোয়ার্টার ও রোগী ভর্তির জন্য তৈরি নতুন ভবনগুলির গা স্যাঁতসেতে হয়ে পলেস্তারা খসে পড়ছে। রবিবার দুপুরে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল বিদ্যুতের লাইন, পানীয় জল সবই রয়েছে সেখানে। নেই শুধু চিকিৎসক ও নার্সরা। চত্বরে গরু চড়ে বেড়াচ্ছে। এখন যে পুরনো ভবনে রোগী দেখা হয়, তার অবস্থা ভয়াবহ। যেখানে ওষুধ রাখা হয় সেখান দিয়ে জল পড়ে। পুরনো চিকিৎসক ও নার্স কোয়ার্টার বন জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। স্থানীয় সিন্দ্রানী সাবিত্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দা গৌর রায় বলেন, ‘‘ভাবতেই অবাক লাগে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আমি জন্মেছিলাম। আর এখন দুপুরের পরে স্কুলের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসক পাওয়া যায় না।’’ জরাজীর্ণ মূল ভবনের গ্রিলে তালা ঝুলছে। জানা গেল, রবিবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তালা বন্ধই থাকে। তবে জরুরি বিভাগ চালু থাকে।

কী রকম সেই বিভাগের পরিষেবা?

এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, দীর্ঘ দিন হল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনও আরএমও নেই। বাগদারই নাটাবেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রোজ এক জন মহিলা চিকিৎসক এসে এখানে বহির্বিভাগে রোগী দেখেন। তবে রবিবার ছাড়া প্রতিদিন দুপুরের পরে ওই চিকিৎসক চলে গেলে গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভার পড়ে চুক্তিভিত্তিক টেকনিশিয়ান আবুল কালাম ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ঝর্ণা ঘোষালের উপরে। জরুরি বিভাগ বলতে এলাকার মানুষ বোঝেন, ঝর্ণাদেবীর ঘর। তাঁকেই ডাকাডাকি করা হয়। এ দিকে, সেখানকার রান্নার কাজের জন্যও তিনি নিযুক্ত। ঝর্ণা দেবী জানালেন, দীর্ঘ দিন এখানে থাকতে থাকতে তিনিও প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা শিখে ফেলেছেন। আবুল কালামেরও একই অবস্থা। তিনিও ওষুধ দেন। পায়খানা, জ্বর, সদির্, কাশি এই সবের ওষুধই দিতে তিনি রীতিমতো সিদ্ধহস্ত। মাঝে মধ্যে কাটাছেঁড়া সেলাইও করতে হয়। সে জন্য বেশ নামডাকও হয়েছে। স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দার কথায়, “বিপদে আপদে ওঁরাই তো আমাদের ভরসা।’’

সিন্দ্রানী, কমলাবাগ, খয়রামারী, পুস্তিঘাটা, আকন্দতলা-সহ প্রায় ত্রিশটি গ্রামের মানুষের ভরসা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গেল, বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখন এক জন করে চিকিৎসক, নাসর্, টেকনিশিয়ান ও দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন। তার মধ্যে চিকিৎসক ও নার্স দুপুরের পর চলে যান। একজন ফার্মাসিস্ট ছিলেন। তাঁকেও বেশ কিছু দিন হল অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চত্বরে ছাগল চড়াচ্ছিলেন এক মহিলা। তিনি জানালেন, ‘‘বহির্বিভাগে রোগী দেখে চিকিৎসক চলে যাওয়ার পর আমরা কার্যত অনাথ হয়ে পড়ি। প্রসূতি, দুর্ঘটনা বা সাপে কাটার মতো ঘটনা ঘটলে আমাদের খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। এখান থেকে নদিয়ার দত্তফুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটার। সেখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ওখানে গেলে ওখানকার কর্তৃপক্ষ অন্য জেলা থেকে আসি বলে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। ফলে আমরা সেখানেও যেতে পারি না।’’

আশার কথা শুনিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয়কুমার আচার্য জানিয়েছেন, ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে ফের রোগী ভর্তি শুরু করা হবে। ১০টি শয্যা থাকছে। নরম্যাল ডেলিভারি হবে সেখানে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে অস্ত্রোপচার করারও ব্যবস্থা করা হবে। সর্ব ক্ষণের জন্য চিকিৎসক ও নার্স থাকবেন। চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োগের নির্দেশও বেরিয়ে গিয়েছে। সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।

bagda sindrani health center fourth class staffs
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy