সোয়াইন ফ্লু পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পড়ুয়াদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি উঠল। শনিবার জুনিয়র চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের একাংশ ওই দাবি তুলেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দেন। তাদের অভিযোগ, সোয়াইন ফ্লু রাজ্যে ছড়াচ্ছে।
এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও দু’জন রোগী ভর্তি হন। তাঁদের চিকিৎসা করতে গিয়ে দু’জন এমডি-র ছাত্রও জ্বর, সর্দিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের থুতুর নমুনা নাইসেডে পাঠানোও হয়েছে। যদিও তাঁদের শরীরে সোয়াইন ফ্লু-র জীবাণু মেলেনি বলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে। আলাদা ভাবে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে হস্টেলে। তা ছাড়া স্নাতক স্তরের হস্টেলের কয়েকজন পড়ুয়ার জ্বর, সর্দিও হয়েছে। উদ্বিগ্ন ছাত্রছাত্রী, জুনিয়র চিকিৎসকরা।
তাই এ দিন অধ্যক্ষের দফতরে গিয়ে রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দাবি তুলেছেন। তা ছাড়া সোয়াইন ফ্লু নির্ণয়ে পরীক্ষা ব্যবস্থা এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চালু করার দাবিও তুলেছেন। অধ্যক্ষ সমীর ঘোষরায় বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ছাত্ররা তাদের মতো কিছু মরামর্শ দিয়েছে। তাদের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
জুনিয়র চিকিৎসক, পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী যাদের আইডি ওয়ার্ডে যেতে হচ্ছে তাদের অবিলম্বে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা ছাড়া রোগ সংক্রমণ এড়াতে ‘মাস্ক’ সরবরাহের কথা জানান তাঁরা।
অন্য দিকে, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এ দিন ময়নাগুড়ি কলেজের ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিমের (এনএসএস) ৪৫ জন সদস্য গ্রামে ঘুরে বেড়ান। একশোটি পরিবারের উপরে সমীক্ষা চালিয়ে জানার চেষ্টা করলেন জ্বর, কাশি হলে তাঁরা ঠিক কী ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। কুসংস্কার কাটাতে প্রচার করলেন রোগের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়। তাদের সাতটি দল উত্তর মৌয়ামারি গ্রামে যান। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রামের একটি ক্লাব ঘরে তাঁদের ক্যাম্প হয়। এ দিন দ্বিতীয় বর্ষের সানি সাহা, পারমিতা রায়, উদয়কৃষ্ণ রায়ের মতো পড়ুয়ারা কাগজ কলম হাতে নিয়ে এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমস্ত তথ্য টুকে নেন। তাঁদের হাতে ছিল ‘ওঝা, গুণিন দূর হঠো’ অথবা ‘জ্বর হলে তেল পোড়া নয়, হাসপাতালে যাও’ লেখা পোস্টার। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কাগজে প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞপ্তির জেরক্স। উদয়কৃষ্ণ বলেন, “আমাদের জেলায় এখনও সোয়াইন ফ্লু দেখা দেয়নি। ওই রোগ নিয়ে যেন কেউ বিভ্রান্ত না হয় এবং সময় মতো হাসপাতালে যায় সেটা জানাতে প্রচার করা হয়।”
ছাত্রছাত্রীদের প্রচার কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার এবং বাংলার অধ্যাপক কালীশঙ্কর রায়। মধুসূদনবাবু বলেন, “সোয়াইন ফ্লু রোগের উপসর্গ কী, রোগ প্রতিরোধের জন্য খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, জল ও সবুজ পুষ্টিকর সবজি খাওয়ার কথা গ্রামের বাসিন্দাদের এদিন বলা হয়েছে। কলেজ পড়ুয়াদের প্রচার দেখে প্রথমে অবাক হলেও পরে অনিমা রায়, মমতা বর্মণ, সুমতি অধিকারীর মতো চাষি বধূরা নিজেরাই এগিয়ে যান কথা বলতে। রোগ সম্পর্কে জানতে সুমতি দেবী বলেন, “প্রচারে অনেকেই সচেতন হবেন।”
শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে সভা করে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। জেলা পরিষদ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩ মার্চ নার্সিং হোমের চিকিসকদের ওই বিষয়ে জানানো হবে। রোগ সনাক্ত করার জন্য হাসপাতালে ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া (ভিটিএম) নামে বসানো হয়েছে। শনিবার ময়নাগুড়ি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের প্রচারের কথা শুনে খুশি জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি নূরজাহান বেগম বলেন, “ভাল উদ্যোগ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy