ই-মেল, ফেসুবক, টুইটার থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রক্ষা পায়নি কোনওটাই। কিন্তু তা বলে পেসমেকারের মতো জীবনদায়ী যন্ত্রও হ্যাকিং থেকে সুরক্ষিত নয়? বাইরে থেকে তার কার্যক্ষমতাও ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করে খুন করা যায় যে কোনও কাউকে? দরকার শুধু হ্যাকিং। অবিশ্বাস্য হলেও মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার (ডিএইচএস) দাবি, এমনটা সম্ভব। শুধু তাই নয়, ডিএইচএসের আশঙ্কা, এ বার থেকে খুনের এই অভিনব পথ ব্যবহার করতে পারে জঙ্গিরাও।
সম্প্রতি মার্কিন টেলিধারাবাহিক ‘হোমল্যান্ড’-এ দেখানো হয়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ওয়াল্ডেনকে (কল্পিত নাম) এ ভাবেই খুন করার ছক কষছে জঙ্গিরা। তবে সেটা নেহাতই গল্প ছিল। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানাচ্ছেল, এ গল্পের গোটাটাই বাস্তবেও হতে পারে। তাঁদের মতে, পেসমেকারের মতো আরও কুড়িটি এমন যন্ত্র রয়েছে যেগুলিকে চেষ্টা করলেই বাইরে থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমনকী খুনও করা যায়। গোয়েন্দা মহলের আশঙ্কা, অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় এই পথ অনেকটাই কম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে এ বার থেকে জঙ্গিরা এই পদ্ধতিতেই খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
তা যাতে না হয়, সে জন্যই তোড়জোড় শুরু করেছ ডিএইচএস। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়ে তারা এমন একটি সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা করছে যা দিয়ে পেসমেকারে কোনও ধরনের ইচ্ছাকৃত বদল করা হয়েছে কিনা তা ধরা যেতে পারে। ওকলাহোমার ইউনিভার্সিটি অব টুলসার কম্পিউটর সুরক্ষা ইঞ্জিনিয়ার সুজিত শেনোয়ের বয়ানে, “এ ধরনের ছোট যন্ত্রগুলোকে বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করার রাস্তা নিশ্চয়ই রয়েছে। তার মানে চাইলে বাইরে থেকে এগুলোর কার্যক্ষমতাও বদলানো যায়। সমস্যাটা হচ্ছে যাঁরা এই যন্ত্রগুলো বানান, তাঁরা এই সম্ভাব্য বিপদ রুখতে কিছুই করছেন না।” আপাতত তাই তৈরি হচ্ছে ডিএইচএস। ইতিমধ্যে একটি তালিকাও বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। তাতে ঠিক কী রয়েছে?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনেকেরই হৃদ্যন্ত্রের সঙ্কোচন হয় না। সে ক্ষেত্রে ‘ডিফাইব্রিলেটর’ যন্ত্র ব্যবহার করে হৃদ্যন্ত্রের সঙ্কোচন করানো হয়। এই ডিফাইব্রিলেটর’ও হ্যাক করা যেতে পারে বলে ধারণা ডিএইচএসের। সেটা রুখতেই তারা ওই তালিকা তৈরি করেছেন। ডিফাইব্রিলেটর যাঁরা ব্যবহার করেন, তাঁদের ঠিক কী কী কারণে মৃত্যু হতে পারে, তারই বিবরণ দেওয়া আছে তাতে। এখন এই তালিকাটিকে শুধু সফটওয়্যারে ভরার অপেক্ষা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এর পর যদি কোনও ডিফাইব্রিলেটর ব্যবহারকারীর সন্দেহজনক মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সফটওয়্যারে তালিকাবদ্ধ কারণের সঙ্গে মৃত্যুর কারণ মিলিয়ে দেখবেন। যদি কোনও অসঙ্গতি মেলে, তা হলে তার ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে।
এই ভাবনার সূত্রপাত অবশ্য ২০০৭-এ। মূলত হ্যাকিংয়ের ভয়েই তদানীন্তন মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি বাইরে থেকে তাঁর পেসমেকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন ‘ওয়্যারলেস রিপ্রোগ্রামিং’ ব্যবস্থাকে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে সম্ভবত টেলিধারাবাহিকটি খুনের এমন পন্থার খোঁজ পায়। যার সম্প্রচারের পর এখন কালঘাম ছুটছে মার্কিন গোয়েন্দা কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy