প্রতীকী ছবি।
কয়েক দিন আগে পর্যন্ত যেখানে সম্প্রীতির হাওয়া বইত, সেই গ্রামই বদলে গিয়েছে এখন! দু’সপ্তাহ আগে রাজস্থানের এই দন্তাল গ্রামে এক মুসলিম লোকসঙ্গীত শিল্পীকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। অভিযোগের আঙুল গ্রামেরই এক পুরোহিত ও তাঁর দুই ভাইয়ের দিকে। সেই ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে গ্রামছাড়া ২০টি মুসলিম পরিবারের প্রায় ২০০ জন! তাঁদের ঠাঁই হয়েছে জয়সলমেরের একটি শরণার্থী শিবিরে।
এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে পহেলু খানের হত্যার কথা। চলতি বছরের গোড়ায় এই রাজ্যেরই অলওয়রে গরু পাচারকারী সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছিল বছর পঞ্চান্নর পহেলুকে। যে ঘটনায় বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফের সেই রাজস্থানেই এই ধরনের ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় পুলিশ-কর্তা জানাচ্ছেন, কয়েক প্রজন্ম ধরে দন্তাল গ্রামে হিন্দু-মুসলিম পরিবার মিলেমিশে থাকত। কিন্তু লঙ্গা মঙ্গানিয়ার সম্প্রদায়ের সদস্য আহমদ খানের খুনের পরেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। আধাসেনা পাঠানো হলেও ভিটেয় ফেরার সাহস পাচ্ছে না মুসলিম পরিবারগুলি।
ঘটনার সূত্রপাত নবরাত্রিতে। কয়েক দশক ধরে মন্দিরে মন্দিরে ভক্তিমূলক ও ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন লঙ্গা মঙ্গানিয়ার সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। সেই মতো গত ২৭ সেপ্টেম্বর দন্তাল গ্রামের মন্দিরে গান গেয়েছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের আহমদ খান। মন্দিরের পুরোহিত রমেশ সুথারের দাবি ছিল, বিশেষ একটি রাগে গাইলে দেবী তাঁর শরীরে ভর করবেন। কিন্তু পরে তিনি অভিযোগ করেন, আহমদ ঠিকঠাক গাইতে না পারায় দেবী তাঁকে ছেড়ে গিয়েছেন। এর পরে পুরোহিত রমেশ ও তাঁর দুই ভাই মিলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে আহমদকে। ভেঙে দেওয়া হয় বাদ্যযন্ত্র। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায় এই ঘটনায়। গ্রেফতার করা হয় রমেশকে। তাঁর দুই ভাই এখনও ফেরার। এর পরেই গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন জয়সলমেরে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলির লোকজন। অভিযোগ, প্রথমে ওই গ্রামের কুড়িটি পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়। তার পর থেকে চলতে থাকে শাসানি।
জয়সলমেরের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় জুটলেও তাঁদের চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। পুলিশ অভিযুক্তদের ধরার আশ্বাস দিলেও কাজ হয়নি। পরিবারগুলির আশঙ্কা, ওই পুরোহিত ও তাঁর লোকেরা প্রভাবশালী। তাই গ্রামে ফিরলে ওই পুরোহিতের লোকেরাই তাঁদের মেরে ফেলতে পারে। আহমদের দাদা চুগ্গা খানের কথায়, ‘‘খুনের হুমকি পাচ্ছি। তাই আর ওই গ্রামে ফিরতে চাই না।’’
জেলাশাসক কে সি মিনা জানিয়েছেন, সকলকে একসঙ্গে বসিয়ে বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু নিহত আহমদের আর এক ভাই রাখা খান জানালেন স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারি কর্তারাই তাঁদের একটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। খাবারও তাঁরাই জোগাচ্ছেন। তবে একই সঙ্গে রাখা ও আহমদের স্ত্রী কেনকু বলেন, ‘‘গানের সামান্য একটু ভুলের জন্য মেরে ফেলল! ওই গ্রামে আমরা আর থাকতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy