Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রায় নির্বিঘ্ন ভোট অসমে

দ্বিতীয় পর্বে ভোট পড়ল ৮৫ শতাংশ

আগে আসতেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। এবারে দিসপুর হাইস্কুলের ২০৭ নম্বর বুথে প্রবেশটা একই কায়দায় হলেও সঙ্গে নেই স্ত্রী এবং সেই জৌলুস। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সরুমটোরিয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার ভাড়াটে মনমোহন সিংহ বেলা একটা নাগাদ ভোট দেওয়ার পরে, চিরপরিচিত ‘মৃদুকণ্ঠে’ শুধু বলে গেলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি অসমের জন্যে অনেক কাজ করেছি।

গণতন্ত্রের উৎসবে। অসমে দ্বিতীয় দফার বিধানসভা নির্বাচনে গুয়াহাটির একটি ভোটকেন্দ্রে। সোমবার। ছবি: পিটিআই

গণতন্ত্রের উৎসবে। অসমে দ্বিতীয় দফার বিধানসভা নির্বাচনে গুয়াহাটির একটি ভোটকেন্দ্রে। সোমবার। ছবি: পিটিআই

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৩
Share: Save:

আগে আসতেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। এবারে দিসপুর হাইস্কুলের ২০৭ নম্বর বুথে প্রবেশটা একই কায়দায় হলেও সঙ্গে নেই স্ত্রী এবং সেই জৌলুস। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সরুমটোরিয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার ভাড়াটে মনমোহন সিংহ বেলা একটা নাগাদ ভোট দেওয়ার পরে, চিরপরিচিত ‘মৃদুকণ্ঠে’ শুধু বলে গেলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি অসমের জন্যে অনেক কাজ করেছি। বিজেপি অপপ্রচার চালাচ্ছে। আশা করি ১৫ বছরের উন্নয়ন দেখে মানুষ কংগ্রেসকেই ক্ষমতায় ফেরাবে।’’

একটি ভোট এবং তিনটি বাক্যের জন্য বিস্তর সময় ও অর্থ খরচ করে দিল্লি থেকে এলেন মনমোহন। দিসপুর স্কুলের বাইরে জড়ো ভোটাররা তখন বলছেন, ভোটার হিসেবে কর্তব্য যথাযথ পালন করলেও সাংসদ হিসেবে মনমোহন মন জয়ে ব্যর্থই।

রাজ্য জুড়ে বিজেপি-অগপ-বিপিএফ জোটের ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগানের মুখে প্রথম পর্বকে ছাপিয়ে দ্বিতীয় তথা শেষ পর্বে আরও বেশি ভোট পড়ল। প্রথম পর্যায়ে ভোট পড়েছিল ৮২.২০ শতাংশ, আজ পড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ।

বরপেটা জেলার দু’টি স্থানে ভোটারদের সঙ্গে সিআরপিএফের মধ্যে সংঘর্ষে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকজন জখম হয়েছেন। এ ছাড়া, বিভিন্ন স্থানে ইভিএমে গোলযোগের ঘটনা বাদ দিলে রাজ্যে শেষ পর্যায়ের ভোটও মোটামুটি নির্বিঘ্নেই মিটল। রাজ্যের ১৫টি জেলায় ভোটারের সংখ্যা ছিল ১,০৪,৫৩,২৩১ জন। ১২,৬৯৯টি বুথের মধ্যে ১৬৭১টি বুথ ছিল অতি সংবেদনশীল ছিল। ১৭৪৯টি বুথে ভিভিপিএটি ব্যবহার করা হয়েছে। আদর্শ বুথ ছিল ১৪৮টি। পুরোপুরি মহিলা পরিচালিত বুথ ছিল ৭৩টি। এদিন বিকেল পাঁচটাতেও বিভিন্ন বুথের সামনে লম্বা লাইন থাকায় নির্দিষ্ট সময়ের পরেও ভোটগ্রহণ চলে। বিকেল চারটের হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ধুবুরিতে, ৮৮.৫ শতাংশ। ‘ঐতিহ্য’ না ভেঙে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে কামরূপ মহানগরে, ৭১ শতাংশ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দু’দফায় ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার ঘটনা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ায় পরিবর্তনেরই একটি ইঙ্গিত। ভোট পড়ার এই হার অসমের ক্ষেত্রে এক নজির। অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত এখনও বলছেন, ‘‘দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০টি ও প্রথম পর্যায়ে ৪০টি আসন কংগ্রেস পাচ্ছেই।’’ সেই সঙ্গে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে ইভিএম কারচুপি ও পোলিং অফিসারদের কাজে লাগানোর অভিযোগও আনেন। প্রদেশ বিজেপি সভাপতি সর্বানন্দ সোনোয়াল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা রিগিংয়ের অভিযোগ আনেন।

আজ সকালে, বরপেটা জেলার সরভোগের চাপকামারি এলাকায় একদল মানুষের সঙ্গে সিআরপিএফের খণ্ডযুদ্ধে ৯০ বছরের আব্দুল রশিদ মারা যান। লাঠির ঘায়ে গুরুতর জখম হন আব্দুল মতলেব নামে এক যুবক। কংগ্রেসের দাবি, মৃত বৃদ্ধ তাদেরই সমর্থক। কামরূপের নগরবেরায় ভোটকেন্দ্রে গোলমাল ঠেকাতে সিআরপিএফ শূন্য গুলি চালায়। লাঠি চলে। গুলির ঘায়ে জখম হন রাবেয়া খাতুন নামে এক মহিলা। দু’জন সিআরপি জওয়ান-সহ বেশ কয়েকজন জখম হন। জুরিয়ার হালধিবাড়িতেও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে সিআরপিএফের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন জখম হন। দলগাঁওয়ের বরকুয়া এল পি স্কুলের বুথে লাইন দেওয়া নিয়ে অশান্তির জেরে সিআরপি লাঠি চালালে চার জন জখম হন। বাক্সার আটিয়াবাড়িতে ইউপিপি ও বিপিএফের সংঘর্ষে দুই বিপিএফ কর্মী জখম হন। চামাগুড়ির কাঠমারা পঞ্চায়েতের সামনে কংগ্রেস সমর্থকদের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিজেপি প্রার্থী জিতু গোস্বামীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জিতুবাবু পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছেন।

এ দিন ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরে ধর্মপুর, পশ্চিম গুয়াহাটি, নলবাড়ি, জাগি রোড, কলাইগাঁও, লাহরিঘাট, মানকাচর, কমলপুর, জালুকবাড়ি, সোনাপুর, হোজাই, ছয়গাও, সরুক্ষেত্রী, মঙ্গলদৈ, আজারা, কাহিকুচি, বশিষ্ঠ, বঙাইগাঁও, সরভোগ-সহ বহু এলাকায় ইভিএম গোলযোগে ভোটগ্রহণ বিঘ্নিত হয়। সরভোগের রাজপুরে সিপিএম অভিযোগ তোলে, ইভিএমে যে কোনও বোতাম টিপলেই পদ্মচিহ্নে ভোট পড়ছে। উলুবাড়িতে সচিত্র পরিচয়পত্র থাকা এক ভোটারের ভোট পড়ে যাওয়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। চাপাগুড়ির উজিরবাড়িতে প্রিসাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান ভোটাররা। সামাগুড়িতে ভোটার তালিকায় ১০৪ জনের নাম না থাকায় তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। নলবাড়ির একটি বুথে ১৮০ জন সচিত্র পরিচয়পত্র থাকা ভোটারের নামের পাশে ‘ডি’ (ডাউটফুল) লেখা থাকায় তাঁদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। তা নিয়ে বাদানুবাদও হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poll Second Phase
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE