Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এনডিটিভি কাণ্ডে একজোট হয়েই প্রতিবাদের ডাক

সভায় হাজির হয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তুলোধোনা করলেন প্রবীণ আইনজ্ঞ ফলি নরিম্যান এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণ শৌরি।

বৈঠক: অরুণ শৌরির সঙ্গে ফলি নরিম্যান। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

বৈঠক: অরুণ শৌরির সঙ্গে ফলি নরিম্যান। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০৩:৫২
Share: Save:

সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে কণ্ঠরোধের চেষ্টার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একজোট হল সংবাদমাধ্যমগুলির একাধিক সংগঠন। আর সেই সভায় হাজির হয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তুলোধোনা করলেন প্রবীণ আইনজ্ঞ ফলি নরিম্যান এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণ শৌরি। চলতি সপ্তাহেই খবরের চ্যানেল এনডিটিভি-র প্রতিষ্ঠাতা-সাংবাদিক প্রণয় রায়ের দিল্লির বাড়িতে তল্লাশি চালায় সিবিআই। নরিম্যান ও শৌরি দু’জনেই নিঃসন্দেহ, শুধু এনডিটিভি নয়— সামগ্রিক ভাবে সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখাতেই সিবিআইকে কাজে লাগাতে চাইছে মোদী সরকার।

এনডিটিভি-র বিরুদ্ধে সিবিআই তল্লাশির প্রতিবাদে আজ দিল্লিতে প্রেস ক্লাব, ইন্ডিয়ান উইমেন্স প্রেস কোর, এডিটরস গিল্ড, ফেডারেশন অব প্রেস ক্লাবস, প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের মতো একগুচ্ছ সং‌গঠন প্রতিবাদ-সভার আয়োজন করে। সেখানে নরিম্যান বলেন, ‘‘বাক্-স্বাধীনতার আসল অর্থ, বক্তব্য রাখার পরে স্বাধীনতা। অর্থাৎ, কাউকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কথা বলার পরে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কি না, সেটা দেখা দরকার। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপট থাকলেই যে কোনও সরকারের সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার প্রবণতা আসে। একে আটকাতেই হবে।’’ নরিম্যানের যুক্তি, যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধেই তদন্ত হতে পারে। কিন্তু এনডিটিভি-র বিরুদ্ধে তল্লাশির ঘটনাক্রম থেকেই স্পষ্ট, এটি সংবাদমাধ্যমের বাক্-স্বাধীনতার উপরে আক্রমণ।

প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সাংবাদিক অরুণ শৌরি এই সভায় মোদীকে কটাক্ষ করে উর্দু কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘তুঝসে পহলে জো ইয়াহাঁ তখত-নশিন থা, উসকো ভি অপনে খুদা হোনে কা ইতনা হি ইয়াকিন থা।’’ অর্থাৎ, তোমার আগে এই সিংহাসনে যে বসত, সে-ও নিজেকে এ ভাবেই ঈশ্বর মনে করত। তার পরেই মজা করে শৌরি বলেন, ‘‘এ আবার পাকিস্তানি কবির লেখা। নিজেকে বাঁচাতে বরং গ্রন্থসাহিব থেকে বলি, ‘রাম গয়ো, রাবণ গয়ো।’ এরাও যাবে। কিন্তু সরকারের প্রচারের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির ফারাক যত স্পষ্ট হবে, ততই সংবাদমাধ্যমের উপরে আক্রমণ বাড়বে।’’ ‘সাংবাদিক বন্ধুদের’ একজোট করার জন্য মোদীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন শৌরি। সেই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘মোদী জমানায় কার্যত আড়াই জন সরকার চালাচ্ছে। বাকিরা সবাই বাঁধা শ্রমিক।’’

আরও পড়ুন:আয়করে আধার: কিছু স্বস্তি কোর্টে

নরিম্যান বলেন, ২০০৮-’০৯-এ বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে এনডিটিভি-র নেওয়া ঋণে সুদ কমিয়ে দেওয়ার তদন্তে ২ জুন এফআইআর করেছিল সিবিআই। তার আগের দিনই ওই চ্যানেলের অনুষ্ঠান থেকে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রকে চলে যেতে বলায় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এত বছর পরে এক জন ‘চতুর্থ ব্যক্তির’ সরাসরি অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই মামলা শুরু করল। নরিম্যানের যুক্তি, ‘‘এ ক্ষেত্রেও তল্লাশির আগে এনডিটিভি-র বক্তব্য জানতে চাওয়া উচিত ছিল। এটা সৌজন্য দেখানো নয়, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।’’ সভায় দেশের প্রথম সারির সম্পাদকেরা সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের নিন্দা করেন। প্রণয় রায় বলেন, এনডিটিভি যে কোনও অভিযোগের জবাব দিতে তৈরি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে এই তদন্ত শেষ হোক।

মোদী সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু আগেই দাবি করেছিলেন, সিবিআই তল্লাশির নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। আজ সরকারের কোনও মন্ত্রী মুখ খোলেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE