Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হিরের দুনিয়ার পাশেই এক নেই-রাজ্য

এখানে থামলেও ঠিক ছিল। ধমকে ওঠেন ইলা বেন— “আমরা কাকে পুজো করব, সেটাও কি বাবুরা ঠিক করে দেবে?”

নিজস্বী: অমদাবাদে ভোটের প্রচারে স্মৃতি ইরানি। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্বী: অমদাবাদে ভোটের প্রচারে স্মৃতি ইরানি। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায়
সুরাত শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৮
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর নামগন্ধও এখানে নেই। কিন্তু তকতকে করে নিকোনো রয়েছে মাটির দাওয়া। ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’-র চিত্রনাট্য এখানে তৈরির চেষ্টা ছিল ভরপুর। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত ফ্লপই থেকে গিয়েছে। উন্নয়ন একটি অজানা শব্দ এখানে, কিন্তু এঁরা কাকে পুজো করবেন তার জন্যও রয়েছে চাপ!

হীরকরাজ্য সুরাত থেকে পুব দিকে কিলোমিটার বিশেক দূরে আদিবাসী গ্রাম দেরোদ। শহর ছাড়িয়ে মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে-তে পড়ার আগেই বাঁদিকে পিচ রাস্তা। ৫০০ মিটারের পরেই সেই পিচ উধাও। ভোটবাবুদের পায়ের ধুলো আর এগোয় না বলেই হয়তো! মাটির এবড়োখেবড়ো রাস্তা এগিয়েছে দু-পাশে মখমল সবুজ মানুষপ্রমাণ উচ্চতার জোয়ার খেতকে সঙ্গী করে। শেষ পর্যন্ত সাইকেল-অসাধ্য রাস্তাটি গিয়ে পড়েছে গ্রামে। “তিন বছরে এক বারই সরপঞ্চের দেখা পেয়েছিলাম। তা-ও ভোটের সময়ে। বলেছিল, টয়লেট বানানোর কাজ শুরু কর, টাকা দেব। কাজ শুরু করেও ফেলে রাখতে হল। সরপঞ্চ আর টাকা, কোনওটাই আসেনি”— বলছেন ইলা বেন। সেই সঙ্গে ঝাড়ু দিচ্ছেন দাওয়ায়, দোলনায় শিশুকে সামলাচ্ছেন, ছুটন্ত মুরগির দলকে দানাও দিচ্ছেন। উঠোনে ঝিম ধরে বসে থাকা দশভুজা যুবতীর মরদ সম্ভবত। রক্তচক্ষু পাকিয়ে বললেন, “ছাপা মে আওসে?” অর্থাৎ, কাগজে প্রকাশিত হবে কি না।

হলেও যে কিছু ইতরবিশেষ হবে না দু্র্দশার, সেটাও স্পষ্ট করে দিলেন কিছুটা ঝাঁঝিয়েই! আতা, সিম, সবেদা গাছের ছায়ায় ঢাকা দাওয়ায় আগন্তুক দেখে ভিড় বাড়ছে। ক্ষোভ এবং অভিযোগ ভাঙা হিন্দি আর গুজরাতির মিশ্রণে। পাতিদারদের বিঘার পর বিঘা জমি চারপাশে। সপ্তাহে তিন দিন খেতে কাজ থাকে গ্রামের মেয়ে জোয়ানদের। দিনে মেলে ১০০ টাকা— রাজ্যের ন্যূনতম মজুরির থেকেও ১২৩ টাকা কম।

ছাগল পাকড়ে সামনে দাঁড়িয়েছেন চেতন ভাসাভা। গোলগলা গেঞ্জি না থাকলে অবিকল মৃগয়ার মিঠুন চক্রবর্তী! জানাচ্ছেন, “সরকারি স্কুল রয়েছে গাঁয়ে। তালাবন্ধ বছরভর। অসুস্থ হলে যেতে হয় বিশ কিমি দূরে সরকারি হাসপাতালে।”

এখানে থামলেও ঠিক ছিল। ধমকে ওঠেন ইলা বেন— “আমরা কাকে পুজো করব, সেটাও কি বাবুরা ঠিক করে দেবে?” জানা গেল, মাঝে মাঝে সঙ্ঘের প্রচারকরা আসেন। হনুমান আর শবরী দেবীর ছবি আঁকা পাথর দেন পুজো করতে। বলেন, এরাই আসল বনদেবতা, বনবাসীদের তো এঁদেরই পুজো করার কথা। সেই সঙ্গে প্রচ্ছন্ন হুমকির স্বরে মনে করিয়ে দেন, দু’জনেই কিন্তু রামের দাস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE