কনকনে ঠাণ্ডা। বরফে ঢাকা পাহাড়চূড়া। পাথরে ঢাকা শীর্ণ একটা নদী। তারই পাশে ছোট্ট গ্রাম মেনচুখা। বরফগলা ওষধি গুণ মেশানো জলের ধারা— বাংলায় ওই গ্রামের নামের মানে এটাই। মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরেই চিন-সীমান্ত।
শেষ বিকেলের আলোয় এ পারে ভারতের ওই শেষ জনবসতির গা ঘেঁষে সদ্য তৈরি রানওয়েতে ঘনঘন ওঠানামা করছে ধ্রুব, এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, বিমানবাহিনীর ছোট বিমান। মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক উধাও।
অন্য দিন সূর্য পাটে গেলেই ঘুমিয়ে পড়ে মেনচুখা। রবিবার ছবিটা ছিল একেবারেই অন্য রকম। নরেন্দ্র মোদী সরকারের দুই মন্ত্রী, বলিউডের গায়ক আদনান সামির সঙ্গে স্থানীয় মানুষ মাতলেন রঙিন আসরে। সবাই মিলে একসুরে ‘জয় হিন্দ’ রব তুললেন। সেই আওয়াজ চিন পর্যন্ত পৌঁছল কি না, তা জানার উপায় ছিল না। কিন্তু সীমান্তের সেই গ্রামে দাঁড়িয়ে চিনকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, সাংসদ নিনং এরিং।
সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, পর্যটন মানচিত্রে এখনও অপরিচিত মেনচুখা বা মেচুকা। সদ্য সপরিবার আমির খান এখানে বেড়াতে আসায় শিরোনামে আসে নামটা। কিন্তু অরুণাচলের রাজধানী শহর থেকে যেখানে পৌঁছতে প্রায় ২০ ঘণ্টা লাগে, সেখানে দেশ-বিদেশের পর্যটক টেনে আনা কঠিন কাজ। তবুও বমডিলা-তাওয়াংয়ের বাইরে, চিন সীমান্তের মেচুকাকে রাজ্যের নতুন পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে অরুণাচল সরকার। একই ইচ্ছা কেন্দ্রেরও।
সে দিকে তাকিয়েই মেনচুখায় তিন দিনের ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ফেস্টিভাল’-এর আয়োজন করা হয়েছে। তারই উদ্বোধনে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর ও গায়ক আদনান সামি।
সড়কপথে গুয়াহাটি বা ইটানগর থেকে মেচুকা দু’দিনের পথ। হেলিকপ্টারে নাহারলাগুন থেকে সময় লাগল প্রায় ২ ঘণ্টা। ২০০৪ সালে প্রথম বার গাড়ি পৌঁছেছিল মেচুকায়। আরোহী ছিলেন স্বয়ং রিজিজু। সে দিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, “১২ বছরেও তেমন এগোতে পারেনি মেচুকা। কখনও কেন্দ্র-রাজ্য সমণ্বয়ের অভাব, কখনও রাজ্য সরকারের অবহেলায় ফিরে গিয়েছে সীমান্ত উন্নয়নের টাকা। কিন্তু এখন কেন্দ্র-রাজ্যে একই দলের সরকার। তাই মেচুকার উন্নয়ন আর বাধা পাবে না।” ইটানগর থেকে রোয়িং, মেচুকা হয়ে বিজয়নগর পর্যন্ত ট্রান্স-অরুণাচল হাইওয়ে তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প বলে জানান রিজিজু। কিন্তু সে জন্য দরকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, তা নিয়ে ধাপে ধাপে এগোনোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। মেচুকায় পর্যটনের উন্নয়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে সীমান্তে ট্রেকিং, সরোবরগুলিকে পর্যটনস্থল হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করার আশ্বাসও দেন রিজিজু।
সাংসদ নিনং এরিং বলেন, “চিনের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সফর মেচুকার গুরুত্ব বোঝায়। আমরা ভিন্ন দলের হতে পারি, কিন্তু রাজ্যের উন্নয়নে কোনও রং দেখা হবে না।” রাজ্যবর্ধন বলেন, “সেনাবাহিনীতে ছিলাম বলে প্রত্যন্ত এলাকার কষ্ট বেশি বুঝি। এখানে ছোট যাত্রিবাহী বিমান নামলে পর্যটন বাড়বে। দেশ ও বিদেশের পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনতে হবে মেচুকাকে।”
বন্ধু রিজিজুর অনুরোধে কোনও বাদ্যযন্ত্র বা সঙ্গী ছাড়াই চলে এসেছেন আদনান। অসমের গায়িকা নাহিদ আফ্রিনের দলের সঙ্গে থাকা কি-বোর্ডেই মঞ্চে যাদু দেখালেন তিনি। গলা ঠান্ডায় বসে গিয়েছে। তাঁর দাবি মেনে ‘তেরা চেহরা’ বা ‘লিফট করা দে’ গানে শ্রোতারা গলা মেলালেন। মুগ্ধ আদনান যখন বলছেন ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিতে, তখন মেচুকাবাসীর উচ্ছাস দেখে কে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy