বিরোধী দলগুলিকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে যখন রোজ আক্রমণ করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, ঠিক তখনই বিজেপির বিরুদ্ধেই বিরাট অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ। উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুর বিরুদ্ধে ৪৫০ কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। একটি অডিও টেপ প্রকাশ্যে এনে কংগ্রেস রিজিজুর ইস্তফা দাবি করতে শুরু করেছে। রিজিজু অবশ্য কংগ্রেসের সব অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। এবং তা করতে গিয়ে শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগকে ভুয়ো খবর বলে দাবি করে রিজিজুর মন্তব্য, ‘‘যাঁরা এ সব বলছেন, অরুণাচলে এলে তাঁদের জুতো মারা হবে।’’
অরুণাচলের কামেং জেলায় ৬০০ মেগাওয়াটের একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য দু’টি বাঁধ গড়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের অন্যতম সাব-কন্ট্রাক্টর কিরেন রিজিজুর আত্মীয় গোবোই রিজিজু। বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প এলাকা থেকে বড় বড় পাথর এবং বোল্ডার সরিয়ে ফেলার বরাত পেয়েছিলেন গোবোই রিজিজু সহ কয়েক জন। ট্রাকে করে সেই বোল্ডার ও পাথর সরানো বাবদ বিদ্যুৎ মন্ত্রকে বিপুল অঙ্কের বিল জমা দেন গোবোই রিজিজুরা। সেই বিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আটকে দিয়েছিল। কিরেণ রিজিজু বিদ্যুৎ মন্ত্রকে চিঠি লিখে বিল বাবদ প্রদেয় অর্থ মিটিয়ে দিতে বলেন।
আরও পড়ুন
কোটি কোটি টাকার পুরনো নোট অবৈধ ভাবে বদলে দিচ্ছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তাই!
দুর্নীতির গন্ধ পেয়েই কিন্তু বিদ্যুৎ মন্ত্রক বিল আটকে দিয়েছিল। বিদ্যুৎ প্রকল্পটির নির্মাতা সংস্থা নিপকোর চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার সতীশ বর্মা ২০১৫ সালেই রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন, ট্রাকে করে পাথর ও বোল্ডার সরানো বাবদ যে খরচ দেখানো হয়েছে, তা প্রকৃত খরচের চেয়ে অনেক বেশি। মনগড়া বিল জমা দিয়ে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে গায়েব করার চেষ্টা হচ্ছে বলে তিনি রিপোর্টে জানান। অবিশ্বাস্য বিলের টাকা মেটানোর আগে তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিপকো। কিন্তু কিরেণ রিজিজু সরাসরি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে চিঠি লিখে বিলের টাকা ঠিকাদারদের মিটিয়ে দিতে বলেন।
কংগ্রেস যে অডিও সিডিটি সামনে এনেছে, তাতে গোবোই রিজিজুর সঙ্গে সতীশ বর্মার একটি কথোপকথন শোনা যাচ্ছে (যদিও অডিও ক্লিপের সত্যতা আনন্দবাজার সংস্থা যাচাই করেনি)। ২০১৫-র ডিসেম্বরে সেই কথোপকথন হয়েছে । তাতে শোনা গিয়েছে, গোবোই রিজিজু সতীশ বর্মাকে বলছেন, অরুণাচলে আর কংগ্রেসের শাসন থাকবে না, খুব শীঘ্রই বিজেপি সে রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে। যে তারিখে এই কথোপকথন হয়েছে, তার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অরুণাচল প্রদেশে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটানো হয় এবং সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়। ছক কষেই যে অরুণাচলে কংগ্রেস সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিল, সতীশ ও গোবোইয়ের কথোপকথনের অডিও ক্লিপ থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে কংগ্রেসের দাবি।
কিরেণ রিজিজু কিন্তু স্বীকার করেছেন যে বিল মিটিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে তিনি বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু কিরেণের বক্তব্য, যাঁদের টাকা আটকে ছিল, তাঁদের তিনি টাকা পেতে সাহায্য করেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কাউকে সাহায্য করার অর্থ কি দুর্নীতি করা?’’ কিরেণ রিজিজু আরও জানিয়েছেন, বিলের বেশিরভাগ টাকাই বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেটুকু আটকে ছিল, তিনি শুধু সেটুকু মিটিয়ে দেওয়ার জন্য চিঠি লিখেছিলেন।
কংগ্রেস বলছে, কিরেণের আত্মীয় গোবোই এবং অন্য ঠিকাদাররা মিলে যে ৪৫০ কোটি টাকার ভুয়ো বিল জমা দিয়েছিলেন, কিরেণ বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে চিঠি লিখে সেই বিলকেই বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শুধু তাই নয়, চক্রান্ত করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যে রাজ্যের সরকারকে উৎখাত করেছেন, তাও অডিও ক্লিপ থেকে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বলে কংগ্রেসের দাবি। কিন্তু কিরেণ রিজিজু সমালোচকদের ‘জুতোপেটা’ করার হুমকি দিচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy