Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সংখ্যা রাখতে হিমশিম, হাতজোড় করে শরিক ও ‘বন্ধু’ নেতাদের অনুরোধ অমিতের!

সংখ্যা থাকা সত্ত্বেও অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এককাট্টা বিরোধীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে এ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কালঘাম ছুটে গেল মোদীর সেনাপতি অমিত শাহের।

বিক্ষোভ: সংসদে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কংগ্রেস সাংসদদের।  বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

বিক্ষোভ: সংসদে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কংগ্রেস সাংসদদের।  বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর ‘মুখোশ’ খুলতে শুক্রবার অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্কে বিরোধীদের নেতৃত্ব দেবেন খোদ রাহুল গাঁধী। আর সংখ্যা থাকা সত্ত্বেও অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এককাট্টা বিরোধীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে এ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কালঘাম ছুটে গেল মোদীর সেনাপতি অমিত শাহের।

শুক্রবার অনাস্থা ভোটের আগে কংগ্রেস অভিযোগ আনল, অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতি এবং এয়ারসেল-ম্যাক্সিস দুর্নীতিকে অস্ত্র করে সনিয়া গাঁধীকে ফাঁসানোর জন্য নোংরা চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। রাতে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার অভিযোগ করলেন, কোনও মহিলা পুলিশ ছাড়াই তাঁর বাড়িতে গিয়ে দিল্লি পুলিশ খোঁজখবর করেছে। অনাস্থার আগে চাপে ফেলতেই এমন কাজ বলে অভিযোগ তাঁর। অভিযোগের এই আবহে ভোটাভুটির আগেই উত্তাপ বাড়ল অনেকটা।

এর মধ্যেই দলের জনা কুড়ি সাংসদ এ দিন সংসদে গরহাজির থেকে চাপ বাড়ালেন অমিত শাহের। পরিস্থিতি বুঝে উদ্ধব ঠাকরে, চন্দ্রশেখর রাও, নবীন পট্টনায়েক, এডিএমকে-র মতো শরিক ও ‘বন্ধু’ নেতাদের অনেকটা হাতজোড় করে অমিত অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন ভোটদানে বিরত না থেকে সরকারের পক্ষেই ভোট দেন। কিন্তু সেই কৌশলই বা কাজে এল কই! আগের দিন মোদী সরকারকে সমর্থন করা নিয়ে জারি করা হুইপ প্রত্যাহার করে বৃহস্পতিবার রাতে শিবসেনা জানাল, কাল সকালে সমর্থনের বিষয়টি তারা চূড়ান্ত করবে। তবে হাল না-ছেড়ে রাত পর্যন্ত সংসদ ভবনে থেকে নিজের দলের সাংসদদেরও প্রত্যেককে ফোন করেন অমিত। আজ নৈশভোজ থেকে কাল মধ্যাহ্নভোজ— একসঙ্গে করতে হবে। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি এক সাংসদকে তুলে এনে ভোট করানোর কথা ভাবছে অমিত-শিবির।

বিজেপির এমন দশা দেখে কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘এতই যদি সংখ্যার দম্ভ, তা হলে কেন জনে জনে প্রণাম করতে হচ্ছে অমিত শাহকে? গত লোকসভার সংখ্যা ধরে রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে! দেশের মানুষ মোদীর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বসে আছেন। অপেক্ষা শুধু আগামী লোকসভা ভোটের।’’ কংগ্রেসের আর এক নেতার কথায়, ‘‘লড়াইটা কৌরব-পাণ্ডবের। কৌরবের সংখ্যা আর দম্ভ দুটোই বেশি। আখেরে জয় হয় পাণ্ডবের সত্যেরই।’’ সাংসদ সংখ্যার অনুপাতে কাল বিজেপি সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় পেলেও কংগ্রেসের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ৩৮ মিনিট!

বৃহস্পতিবার রাতের দিকে বিজেপি অনেকটাই নিশ্চিত। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘লোকসভার ভোট নির্ধারিত সময়েই হবে। জনতা পাঁচ বছরের জনমত দিয়েছে। তার এক ঘণ্টা আগেও গদি ছাড়ব না।’’ সেটা সুনিশ্চিত করতেই অমিত চান, কোনও ভাবে যাতে সংখ্যা না কমে। সংখ্যা কমলেই বিরোধীরা চেপে ধরবে। তাতে পরের ভোটে ‘ব্র্যান্ড মোদী’তে শান দিতে সমস্যা বাড়বে অমিতের।

জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা আরও কমাতে অন্য পথও নিল বিজেপি। দীর্ঘ দিন ফেলে রাখার পরে আজ হঠাৎই বিজেডি-র জয় পন্ডার ইস্তফা গৃহীত হয়েছে! এমনকি বিদ্রোহী নেতা শত্রুঘ্ন সিন‌্‌হাকেও হুইপ মেনে সরকারের পক্ষে ভোট দেওয়াতে রাজি করানো গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে শত্রুঘ্নের এই ভোলবদল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে মোদী সরকারকে তুলোধোনা করলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে চুপ শত্রুঘ্ন। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁকে ওয়াই ক্যাটিগরি নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরেই বিজেপির ‘শত্রু’র আচরণে বদল এসেছে বলে অনেকের দাবি।

বিজেপির আর এক বিদ্রোহী কীর্তি আজ়াদ এখন বিদেশে। সাবিত্রী ফুলে-সহ ৬ বিজেপি সাংসদকে নিয়ে সংশয় দলেই। তবে শরিক ও ‘বন্ধু’দের সমর্থন নিয়ে বাজিমাত করা যাবে বলেই আশা বিজেপির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE