Advertisement
০১ মে ২০২৪

অসমে বিক্ষোভের আঁচ পর্যটনে, রেলে

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে গিয়ে কোথাও লাইন উপড়ে দিয়েছে ক্ষিপ্ত জনতা।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৭
Share: Save:

বিক্ষোভে উত্তপ্ত অসমে শুধু পর্যটন ক্ষেত্রেই প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে গত দু’মাসে। আর রেলের ক্ষতির অঙ্ক ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে গিয়ে কোথাও লাইন উপড়ে দিয়েছে ক্ষিপ্ত জনতা। কোথাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্টেশন, কন্ট্রোল রুম। তার জেরে ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কখনও সম্পূর্ণ, কখনও আবার আংশিক বন্ধ রাখতে হয়েছে বিভিন্ন ডিভিশনের ট্রেন চলাচল। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলেও এখনও মেরামতির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশনগুলির। ফলে সিএএ সংক্রান্ত আন্দোলনের ধাক্কায় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি বেশি।

মুখপাত্র শুভানন চন্দ জানান, তিনসুকিয়া, কাটিহার, লামডিং, রঙিয়া ডিভিশন মিলিয়ে স্টেশন পোড়ানো, কন্ট্রোল রুমে আগুন লাগানো, লেভেল ক্রসিং জ্বালিয়ে বা ভেঙে দেওয়া, লাইন উপড়ে ফেলা, গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সামগ্রী ও বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম নষ্ট করার ধাক্কায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দশ কোটি টাকা। ট্রেন না-চলার ফলে ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। পণ্যবাহী ট্রেন না-চলায় ৬৩ কোটি ৪২ লক্ষ, পার্সল ভ্যান না-চলায় ৫ কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি শুধু রেলেরই হয়নি, কম নাকাল হননি যাত্রীরও। রেলের হিসেব, বিক্ষোভের জেরে ৩৮ লক্ষ ৮৬ হাজার মানুষ ট্রেনে যেতে পারেননি।

সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের জেরে অসম পর্যটনেরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অসম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান জয়ন্তমল্ল বরুয়া জানান, গত দু’মাস মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, গুয়াহাটিতে ও উজানি অসমে আন্দোলনের নামে হিংসা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পর্যটকেরা ব্যাপক হারে অসম সফর বাতিল করেছেন। এই সময় পর্যটন সংস্থাগুলি ট্রেনে পর্যটকদের দল আনে। আন্দোলনের জেরে প্রায় দু’সপ্তাহ ট্রেন বন্ধ থাকায় পর্যটকদের দলগুলি আসতে পারেনি। অসমে ঘুরতে আসা নিয়ে বিভিন্ন দেশও পর্যটকদের সতর্ক করেছে। তাই বিদেশি পর্যটকের সংখ্যাও এ বছর উল্লেখযোগ্য ভাবে কম।

আরও পড়ুন: ‘রাজনীতি থেকে দূরে থাকে সেনা’, জবাব রাওয়তের

কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানের অধিকর্তা পি শিবকুমার জানান, সাধারণত ডিসেম্বরে তিন কোটি টাকার পর্যটন রাজস্ব আদায় হয়। এই বছর সেই পরিমাণ মাত্র এক কোটি ৮০ লক্ষ। পর্যটন দফতর ও বন দফতরের আক্ষেপ, অসমে ঘুরতে আসা পর্যটকদের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের। সংবাদমাধ্যমে অসমে আন্দোলনের চেহারা দেখে তাঁরা সফর বাতিল করেন। আন্দোলনে বাংলার বিভিন্ন অংশও উত্তপ্ত ছিল।

শুধু বাইরের পর্যটক নয়, শীত ও বর্ষশেষের এই মরশুমে বনভোজনের দলও সরগরম রাখে পবিতরা, তেঘেরিয়া, চাঁদডুবি সরোবরের মতো এলাকাগুলি। কিন্তু এই বছর আন্দোলনের ডাকে বেশিরভাগ বন ভোজনই বাতিল হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বনভোজনে আসা দলকে তাড়িয়েও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজ্যে এত বড় বিপদ, মানুষ আন্দোলন করছে, এই অবস্থায় বনভোজন, প্রমোদভ্রমণ চলবে না। বাধ্য হয়ে বার্ষিক চাঁদডুবি উৎসবও বাতিল করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAA NRC Assam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE