রায়পুরের শ্রীরাম মন্দির। নিজস্ব চিত্র
রামের জন্মভূমি অযোধ্যা হলে রামের মামাবাড়ি ছত্তীসগঢ়।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে অযোধ্যার রামজন্মভূমিতে নতুন করে রামমন্দির তৈরির আন্দোলন তৈরি করতে চাইছে বিজেপি-আরএসএস। রামের মামাবাড়ি ছত্তীসগঢ়ের রাজধানী রায়পুরে রামমন্দির কিন্তু ইতিমধ্যেই তৈরি। শহরের ভিআইপি রোডে ১৫ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি ১০৮ ফুট উঁচু সেই মন্দিরের গত বছরই উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ।
এ বার রামপুরের এই রামমন্দির দেখিয়েই ছত্তীসগঢ়ের মানুষের মধ্যেও মন্দির ঘিরে আবেগ উস্কে দিতে চাইছেন যোগী আদিত্যনাথ। ছত্তীসগঢ়ে একের পর এক সভায় ভোটের প্রচারে এসে তিনি বলছেন, “ভগবান রামের মামাবাড়িতে তাঁর মন্দির তৈরি হয়ে গিয়েছে। তা হলে এ বার রামের জন্মভূমিতেও অবশ্যই মন্দির তৈরি হয়ে যাবে”।
ছত্তীসগঢ়ের মানুষের একটা বড় অংশের আদিবাসী নাথ সম্প্রদায়ভুক্ত। সেই নাথ সম্প্রদায়ের প্রধান তীর্থক্ষেত্র গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মন্দিরের বর্তমান পীঠাধীশ্বর হলেন যোগী আদিত্যনাথ। দুইয়ে মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর পরেই বিজেপির তারকা প্রচারক হিসেবে উত্তরপ্রদেশের গেরুয়াধারী মুখ্যমন্ত্রীর চাহিদা সবথেকে বেশি। কথিত আছে, ছত্তীসগঢ়ের আগে নাম ছিল কোশল প্রদেশ। সেই কোশল প্রদেশের রাজা সুকোশলের কন্যা কৌশল্যা। রামায়ণের কাহিনিতে অযোধ্যার রাজা দশরথের প্রধান মহিষী, রামের মা। সেই হিসেবেই অযোধ্যা রামের জন্মভূমি, ছত্তীসগঢ় মামাবাড়ি।
আরও পড়ুন: রামমন্দির-আইনে অনড়, জোট ভাঙতেও মাঠে সঙ্ঘ
রায়পুর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে পথরিয়ার চন্দ্রখুরি গ্রামে কৌশল্যার মন্দিরও রয়েছে। মন্দিরে কৌশল্যার কোলে রামের মূর্তি। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, এই চন্দ্রখুরি গ্রামেই কৌশল্যার জন্ম হয়েছিল। রামায়ণের কাহিনি অনুসারে, ১৪ বছর বনবাসের বেশির ভাগ সময়ই রাম কাটিয়েছিলেন দণ্ডকারণ্যে। সেটাও ছত্তীসগঢ়ে। এই দণ্ডকারণ্য থেকেই রাবণ সীতাকে অপহরণ করেন। জটায়ুর সঙ্গে রাবণের যুদ্ধও এই দণ্ডকারণ্যের আকাশেই।
আরও পড়ুন: বিপজ্জনক দল বিজেপি? রজনীকান্ত বললেন...
ছত্তীসগঢ়ের মানুষের মধ্যে রামকে ঘিরে এই আবেগ বিজেপির অজানা নয়। যোগী আদিত্যনাথকে মাঠে নামিয়ে সেটাই পুরো দমে কাজে লাগাতে চাইছেন তারা।
২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে রায়পুরের ভিআইপি রোডের ১০ একর জমিতে তৈরি রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে রমন সিংহ, ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল বলরাম দাস টন্ডন, আরএসএস নেতা ইন্দ্রেশ কুমারের সঙ্গে হাজির ছিলেন যোগী আদিত্যনাথও। সে দিনও রায়পুরের রামমন্দিরের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তিনি। তখন তিনি শুধুই গোরক্ষপুরের সাংসদ। এক মাস পরেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেন যোগী।
এ বার রমনের হয়ে প্রচারে এসে যোগী বলছেন, “রায়পুরে এমন সুন্দর রামমন্দির তৈরির জন্য ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দাদের ধন্যবাদ। এ বার অযোধ্যাতেও রামমন্দির তৈরি হবে”।
ছত্তীসগঢ়ের ভোটে বিজেপি কী ভাবে যোগীকে কাজে লাগাতে চাইছে, তার সবথেকে বড় প্রমাণ হল রমন সিংহের মনোনয়ন জমার দিনেও যোগী হাজির ছিলেন। প্রথম দফার ভোটের আগে ১০ ও ১১ নভেম্বর ছত্তীসগঢ়ে আটটি জনসভা করেছিলেন যোগী। এ বার দ্বিতীয় দফায় ১৪ ও ১৫ নভেম্বর ফের প্রচারে আসছেন তিনি। ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের শেষবেলায় ওস্তাদের মার হিসেবে ১৮ নভেম্বর ফের তাঁকে প্রচারে নামাচ্ছে বিজেপি।
রামের মামাবাড়ি থেকে জন্মভূমি পর্যন্ত রামমন্দিরের আবেগে ঢেউ ভোটের বাক্সে আছড়ে পড়ে কি না, ছত্তীসগঢ়ে তারও অ্যাসিড টেস্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy