ভোট দেওয়ার পরে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রেমকুমার ধুমল এবং কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ। ধুমলের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর ছেলে তথা বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরও। ছবি: পিটিআই।
এ ভাবেও ভোট হয়!
বাংলা থেকে ভোট দেখতে এসে দিনের শেষে এটাই মনে হচ্ছে। কোথাও একটা বোমা নেই। একটা গুলি নেই। নিদেন পক্ষে একটা মারামারির ঘটনাও নেই!
এ কেমন নির্বাচন! আমাদের ওখানে তো এমনটা হয় না!
ঠিক সকাল সাতটায় শুরু হয়েছিল। এক এক জন করে ভোট দিতে আসছিলেন। বেলার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ভোটারের সংখ্যাও। তবে বুথের সামনে ভোটারের সংখ্যা ২০-তে পৌঁছতেও দেখা গেল না এক বারের জন্যও। ভোটের জন্য জীবন থমকে রয়েছে একটা গোটা দিন, এমনটা নয় একেবারেই। যেন ঘোরাফেরার ফাঁকে টুক করে নিজের ভোটটা দিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যেকে। তা সে শিমলা হোক বা কুফরি, সাঞ্জোলি হোক বা ঢাল্লি— ছবিটা মোটের উপর একই। একে অপরের সঙ্গে হেসে কথা বলছেন। পরিবারের খবর নিচ্ছেন। বয়স্কদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কোথাও কোনও উষ্মা নেই। এমন শান্তির দুনিয়া ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে থাকতে পারে! বিকেল পাঁচটায় এত বড় একটা লড়াই যখন শেষ হল, তখনও চতুর্দিকে সেই শান্তি বিরাজ করছে। বাড়ছে ঠান্ডাটাও। তার মধ্যেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর থেকে খবর এল, ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। হিমাচল প্রদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক।
দিনের শেষে প্রশ্ন হল, জিতছে কে? বিজেপি না কংগ্রেস? আভাস পাওয়ার সুযোগ হল ম্যাল রোড পেরিয়ে আরও কিছুটা নীচের দিকে নামার সময়ে। তখন সিপিএম অফিসটা খুঁজে বেড়াচ্ছি। বেলা পড়ে আসছে। পিছন থেকে ডাকটা এল, ‘‘ভাইয়া, ইয়ে আপকা হ্যায়?’’ হন হন করে হাঁটার সময় কখন যে পড়ে গিয়েছে ছোট্ট নোটবুকটা, খেয়ালই করিনি। বছর তিরিশের যুবকের হাতে প্রথমে নোটবুকটা দেখে অবাকই হয়েছিলাম। ওঁর হাত থেকে নিয়ে পাতা উল্টে নিজের হাতের লেখা দেখে নিশ্চিত হলাম— ‘‘হাঁ, মেরা হ্যায়। থ্যাঙ্ক ইউ।’’ কৃতজ্ঞতার বশেই আলাপটা আর একটু বাড়াতে ইচ্ছে করল।
নাম ব্রিজমোহন ঠাকুর। ম্যাল লাগোয়া এক হোটেলে কাজ করেন। ডিউটি শেষে বাড়ি যাচ্ছেন। দুপুরে এক ফাঁকে গিয়ে ভোট দিয়ে এসেছেন। কে জিতবে? প্রশ্ন শুনে চটজলদি জবাব দিলেন। যেন র্যাপিড ফায়ারের প্রশ্ন ছিল।—‘‘বিজেপি।’’ সারা দিনে এমন স্পষ্ট জবাব মেলেনি! সকালে প্রশ্নটা করলে এই উত্তর দিতেন? ব্রিজমোহন বললেন, ‘‘না ভাইয়া। সকালে জিজ্ঞেস করলে বলতাম, জানি না।’’ কেন? এ বারের জবাবটা এমন হবে আশা করিনি। ব্রিজমোহন জানালেন, ভোট চলাকালীন এই জবাব দিলে সহনাগরিকরা প্রভাবিত হতে পারতেন, তাই। চমকে যেতে হল আবার— এমনটাও হয়!
ভোট শেষ, তল্পিতল্পা গুটিয়ে বুথ ছাড়ছেন ভোটকর্মীরা। এ বার ফলপ্রকাশের অপেক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।
কুফরিতে এ দিন দুপুরে যে ঘোড়াওয়ালার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, এই বিকেলে দেখা হলে তিনি তা হলে বলে দিতেন, কে জিতছে? সতীশ দুই ঘোড়াকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বলেছিলেন, ‘‘এদের রেখে ভোট দিতে যাব। কে জিতল তাতে আমার কাজ নেই। আমাকে তো এই করেই খেতে হবে। ভোট দিতে হয়, তাই দেব।’’
আরও পড়ুন: আচ্ছা, এখানে ছাপ্পা ভোট হয় না? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলল পুলিশ
এ জি চকে যে পান-সিগারেটের দোকান, সেই দোকানিকে সিপিএম অফিসের ঠিকানা জিজ্ঞেস করার সঙ্গে বাড়তি একটা প্রশ্ন করলাম। কে জিতছে? তিনিও যেন এক শ্বাসে বললেন, ‘‘বাঁ দিকের কাঁচা রাস্তা ধরে নেমে গিয়ে একটা গেস্ট হাউস পড়বে। তারই পিছনের বাড়ি। কংগ্রেস।’’ দুটো উত্তর একসঙ্গে এসেছে বুঝতে পারিনি। আবার জিজ্ঞেস করায় একই উত্তর মিলল। তখন বুঝলাম, উনি ঠিকানার সঙ্গে কংগ্রেসের জেতার কথা বলছেন।
গাড়ি পার্কিং সেন্টারের কাছেই কংগ্রেস অফিস। সেখানে শীর্ষ থেকে মাঝারি নেতারা রয়েছেন। ফল নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট আশাবাদী। কংগ্রেস ফের আসছে। ৬৮টার মধ্যে অন্তত ৫০টি আসন মিলবে।
বিজেপি-র অফিস কর্মকর্তাদের ভিড়ে ঠাসা। ভোট শেষ হতেই সকলে জমা হচ্ছেন। নির্বাচন ভাল হয়েছে। মানুষ নাকি ঢেলে বিজেপিকেই ভোট দিয়েছেন। ৫০টি আসন পাবেন বলে বিজেপি নেতারাও দাবি করছেন।
আরও পড়ুন: মাইনাস ১৫তে ভোট দিচ্ছে হিমাচলের লাহৌল-স্পিতি
সিপিএম অফিসে কিন্তু ভিন্ন চেহারা। অনেক কষ্টে দেখা মিলল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের। বাকিরা ভোট করাতে গিয়েছেন। ভোট করানো শুনে, প্রথমে একটু আঁতকে উঠেছিলাম। কিন্তু, টিকেন্দর সিংহ পাওয়াঁর ব্যাখ্যা শুনে আশ্বস্ত হলাম। ভোট করানো মানে পোলিং এজেন্ট হওয়া। কে জিতছে? টিকেন্দরের কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে বন্ধুরা সহমত নয়। তবু আমি বলব বিজেপি আসছে না। ৯০-এর পর থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এখানে পালা করে সরকার গড়ে কংগ্রেস, বিজেপি। এ বার সেটা হচ্ছে না। কংগ্রেসই থাকছে।’’ কারণটা কী? টিকেন্দরের দাবি, এখানে মোদী ম্যাজিক কাজ করেনি। করবেও না। আর বীরভদ্রের ‘চতুর’ পলিসিই তাঁকে ফের ক্ষমতায় রেখে দেবে। গত পাঁচ বছরে তিনি যে ভাবে খুল্লমখুল্লা সরকারি চাকরি বিলিয়েছেন, তার ‘সুফল’ যাবে কংগ্রেসের ঝুলিতে। টিকেন্দরের কথায়, ‘‘সেই সুফলের ভোগান্তি পরবর্তী বছরগুলিতে ভুগতে হবে রাজ্যবাসীকে।’’
কে সরকার গড়বে, তার জন্য রাজ্যবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে ১ মাস ৯ দিন। ভিন্রাজ্য থেকে ভোট দেখতে এই সাংবাদিকের অপেক্ষা আরও বড়। এমন রাজ্য আর কবে কোথায় মিলবে, যেখানে এমন ভাবে ভোট হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy