Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘জানি না, ছেলেমেয়ে আর কত দিন স্কুলে যাবে’

মন্দার ছায়া ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে দেশের গাড়ি শিল্পে। বিক্রি কমছে, ফলে উৎপাদনও। কাজ হারাচ্ছেন হাজার হাজদেশ জুড়ে গাড়ি বিক্রি কমেছে। হরিয়ানার গুরুগ্রাম ওরফে গুড়গাঁওয়ে মারুতি, হন্ডার মতো গাড়ি-মোটরবাইকের কারখানায় কাজ কমেছে।

গুরুগ্রামের বিনোলায় গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার সামনে ধর্নায় অলোক কুমার (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)। নিজস্ব চিত্র

গুরুগ্রামের বিনোলায় গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার সামনে ধর্নায় অলোক কুমার (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)। নিজস্ব চিত্র

প্রেমাংশু চৌধুরী
গুরুগ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

রোজ সকালে ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরে কারখানার পথে রওনা হন অলোক কুমার। কারখানার সামনে এসে বসে পড়েন শামিয়ানার নীচে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বুকে কালো ব্যাজ বেঁধে ধর্না। রাম নিরঞ্জন ‘ভুখ হরতাল’-এ। খাটিয়ায় শুয়ে। অলোকেরা বসে হাইওয়ের ধারে, মাটিতে শতরঞ্চি পেতে।

দেশ জুড়ে গাড়ি বিক্রি কমেছে। হরিয়ানার গুরুগ্রাম ওরফে গুড়গাঁওয়ে মারুতি, হন্ডার মতো গাড়ি-মোটরবাইকের কারখানায় কাজ কমেছে। গুরুগ্রাম, মানেসর, বিনোলায় শত শত গাড়ি যন্ত্রাংশ কারখানার গাড়ি সংস্থার বরাত পায়। সেখানেও কাজ কমেছে। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা রোজগার কমে গিয়েছে। কারণ কাজের চাপ কম। ওভারটাইম মিলছে না।

বেতন বাড়ানোর কথা বলতে গিয়ে অলোকদের মতো অনেকে সাসপেন্ড। অস্থায়ী শ্রমিকদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজ খুইয়ে যে যার গ্রামে ফিরছেন। কেউ বিহারে, কেউ উত্তরপ্রদেশে, কেউ বাংলা বা ওড়িশায়।

বছর বারো আগে উত্তরপ্রদেশের ফারুকাবাদ থেকে হরিয়ানায় আসা অলোক কুমার অবশ্য ফিরতে পারেননি। ‘‘কী করে ফিরব?’’ বছর চল্লিশের অলোক প্রশ্ন ছোড়েন। ‘‘দুই ছেলে, এক মেয়ে তো এখানেই স্কুলে পড়ে। তবে আর কত দিন স্কুল যেতে পারবে, জানি না।’’ কেন? অলোক শুকনো মুখে বলেন, ‘‘তিন জনের মোট ৩২ হাজার টাকা ফি বাকি পড়েছে। স্কুল থেকে এসএমএস পাঠিয়েছে, দু’মাসের মধ্যে ফি জমা দিতে হবে।’’

নম্বর জোগাড় করে উত্তরপ্রদেশের কনৌজে সুধীর যাদবকে ফোনে ধরা গেল। কাজ চলে যাওয়ায় মাসখানেক আগে গুরুগ্রাম থেকে রাজপুর গ্রামে ফিরেছেন। বললেন, ‘‘অন্য সময় ছুটিতে গ্রামে এলে সঙ্গে টাকাপয়সা থাকে। সংসারে খরচা করি। এখন তো হাতে পয়সা নেই। তাই একশো দিনের কাজ জোগাড়ের চেষ্টা করছি।’’ হরিয়ানার সিটু নেতা সতবীর সিংহ বলেন, ‘‘বুঝতে পারছেন তো, গ্রামের বাজারে কেন বিক্রিবাটা নেই! গ্রাম থেকে শহরে আসা শ্রমিকেরা রোজগার হারিয়ে গ্রামে ফিরছেন। যেমনটা নোটবন্দির পরে হয়েছিল।’’

বিনোলায় অলোকদের কারখানা ব্যতিক্রম। গুরুগ্রাম-মানেসরের বাকি সব গাড়ির যন্ত্রাংশ কারখানায় কোথাও কোনও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নেই। সতবীরের প্রশ্ন, ‘‘কারা প্রতিবাদ করবে?

কাজ হারানো অস্থায়ী শ্রমিকেরা তো গ্রামে ফিরেছে। ম্যানেজমেন্ট বলেছে, গাড়ি বিক্রি, কাজের বরাত বাড়লেই ফের ডেকে পাঠানো হবে। সবাই সেই ভরসায় রয়েছে। কিন্তু কবে?’’

হরিয়ানায় মারুতির তিনটি কারখানা— মানেসরের দু’টি, গুরুগ্রামে একটি। মারুতি উদ্যোগ কামগার ইউনিয়নের সভাপতি রাগেশ কুমার প্রথমেই স্বীকার করে নেন, ‘‘খুব কঠিন সময় চলছে।’’ কেন? রাগেশের জবাব, ‘‘তিনটি কারখানায় প্রায় ১২ হাজার অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। তার মধ্যে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারের কাজ গিয়েছে। গাড়ি বিক্রি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। ম্যানেজমেন্ট বলেছে, উৎসবের মরসুমে গাড়ি বিক্রি বাড়তে পারে। মার্কেটিং, সেলস বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। খরচ কমানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

শিল্পপতিরা আঙুল তুলছেন মোদী সরকারের দিকেই। গুরুগ্রামের সুরি অটো প্রাইভেট লিমিটেড গাড়ি-বাইকের কারখানায় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অতুল সুরি বললেন, ‘‘গত বছর দীপাবলির পর থেকেই বিক্রি পড়তির দিকে। সরকারই মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে ইলেকট্রিক গাড়ি, বাইক চালুর কথা বলে। লোকের ভয় হয়েছে, পেট্রল-ডিজেলের গাড়ি-বাইক আর চলবে না। তার সঙ্গে জিএসটি কমার জল্পনায় অনেকে দাম কমার অপেক্ষা করছেন। দুইয়ে মিলিয়ে শতকরা ৪০ ভাগ বিক্রি কমেছে। তার খেসারত আমাদেরও দিতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Automobile Industry Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE