গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
স্বামীর মৃত্যু হয়েছে তিন বছর আগে। তাঁরই সন্তানের জন্ম দিলেন স্ত্রী।
লড়াইটা খুব সহজ ছিল না সুপ্রিয়া জৈনের।
বিয়ের পাঁচ বছর পরেও সন্তান না হওয়ায় সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকেই আইভিএফ পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করেছিলেন বেঙ্গালুরুর দম্পতি গৌরব আর সুপ্রিয়া। আচমকাই ২০১৫ সালের অগস্টে পথ দু্র্ঘটনায় প্রাণ হারান গৌরব।
স্বামীর মৃত্যুর পরে অনিদ্রা গ্রাস করেছিল তাঁকে। তখন ব্লগ লেখা শুরু করেন তিনি। দিশাহারা হলেও তাঁর সন্তানকে পৃথিবীতে আনতে চেয়েছিলেন মার্কেটিং প্রফেশনাল সুপ্রিয়া। নিজের ব্লগে তিনি লেখেন, রাজস্থানে শিকড় রয়েছে তাঁর স্বামীর পরিবারের। গৌরবের সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে মরিয়া তিনি। সুপ্রিয়ার ব্লগ পড়ে একজন লেখেন মুম্বইয়ের যশলোক হাসপাতালের কথা। গৌরবের মৃত্যুর পর বাড়ির কারও সঙ্গে কথা না বলেই চিকিৎসা চালিয়ে যান সুপ্রিয়া। সাহায্য নেন সারোগেসির (বিকল্প মাতৃত্বের)।
আরও পড়ুন: মাছ বেচে ট্রোল হওয়া সেই ছাত্রী কেরলের বন্যায় দিলেন দেড় লাখ
বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বইয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর আগে এই হাসপাতালেই জিন এডিটিং করে সুস্থ যমজের জন্ম দিয়েছিলেন এক তরুণী। ক্যান্সার মুক্ত হয়েছিল শিশুর জিন। এবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফিরুজা পারিখের কথা জানতে পারেন সুপ্রিয়া। শুরু হয় চিকিৎসা। বেঙ্গালুরু থেকে সংরক্ষিত শুক্রাণু মুম্বইয়ে এসে পৌঁছয়। তবে আইভিএফ পদ্ধতি বারবার ব্যর্থ হওয়ায় সারোগেসি পদ্ধতি ব্যবহার করেন পারিখ।
এই প্রসঙ্গে আমেরিকার হেনরিফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পারিজাত সেন বলেন, প্রচলিত আইভিএফ-এ অনেক ওষুধ ও প্রচুর ইস্ট্রোজেন হরমোন ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে ডিম্বাশয়ে ১০-১২ বা তারও বেশি ফলিকল বা ডিম তৈরি করা হয়। তার মধ্যে অন্তত ৫-৬টি গবেষণাগারে বিশেষ পদ্ধতিতে নিষিক্ত করে ভ্রূণ প্রস্তুত করা হয়। ২-৩টি ভ্রূণকে গর্ভে স্থাপন করা হয়। তার পরেও সাফল্যের হার হয় মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বয়স ৬২, অপরাধ ১১২, দিল্লির মহিলা ডন ‘মাম্মি’ অবশেষে জালে
ড. পারিখ বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে প্রচুর হরমোন প্রয়োগের ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কাও ছ্লি। বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম ছাড়াও ভ্রূণের মানের উপরেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শেষবারের মতো চেষ্টা করি। তখনই আসে সাফল্য।’’
সুপ্রিয়া ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ছিলেন, তখনই পুত্র সন্তান জন্মানোর খবর পান তিনি। সারোগেসি পদ্ধতিতে গৌরবের সন্তানের মা হতে পেরে সবচেয়ে বেশি খুশি তিনি, জানান সুপ্রিয়া। জৈন পরিবারে এখন আনন্দের ঢল। ছেলেকে দেখতেও নাকি তাঁর স্বামীর মতোই, এমনটাই বলেন সুপ্রিয়া।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy