শালীনতার সীমা লঙ্ঘন নাকি নীতি-পুলিশি, ফের বিতর্ক বলিউডে।
শুরুটা করেছিলেন পরিচালক-প্রযোজক কর্ণ জোহর, অভিনেতা রণবীর সিংহ ও অর্জুন কপূর। সম্প্রতি একটি রঙ্গরসিকতার আসরে অশালীন কথাবার্তা বলার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।
এবং এখানেই শুরু দ্বিতীয় দফার বিতর্ক। অভিযোগ, শো’টির নিন্দা করতে গিয়ে কর্ণ জোহরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন চিত্রপরিচালক তথা সেন্সর বোর্ডের নয়া সদস্য অশোক পণ্ডিত। কর্ণের পাশে দাঁড়িয়েছে বলিউডের বড় অংশই। এ বার তাঁদের আক্রমণের মুখে পড়েছেন অশোক। কিন্তু মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, নিজের মন্তব্য থেকে এক চুলও নড়বেন না। উল্টে তাঁর প্রশ্ন, “মঞ্চে দাঁড়িয়ে যদি তুমি স্বমেহনের ভঙ্গি করো, তা হলে সেটা পর্নোগ্রাফির থেকে কম কিছু নয়।” কর্ণ আবার পাল্টা এ দিন তোপ দেগেছেন, “এ সব যাঁদের হজম হবে না, তাঁরা খাবেন না! ব্যস!’’
কিন্তু ঠিক কী বলেছিলেন কর্ণ-অর্জুন-রণবীর? আর তার জবাবে অশোকই বা কী বলেছেন?
সেন্সর বোর্ডের এই সদস্যের অভিযোগ, হাসিঠাট্টার অছিলায় চরম অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছিলেন কর্ণরা। সঙ্গে ছিল আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি। এমনকী এক অভিনেত্রীকে নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেন তাঁরা। সামনে তখন অন্তত চার হাজার দর্শক। প্রথম সারিতে বসে হাসছিলেন কর্ণ জোহরের মা হীরু জোহর। এমন দৃশ্য দেখেই অশোক টুইট করেন, “কর্ণ জোহর চাইলে প্রকাশ্যে এত কিছু না করে আড়ালে নিজের মায়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতেন।” এই টুইট নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। তথাকথিত অশালীনতার সমালোচনা করতে গিয়ে অশোক নিজে এত বড় অশালীন কথা কী করে বললেন, তাই নিয়ে শুরু হয়ে যায় হইচই। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়। অশোক এমন কথা লিখলেন কেন? আনন্দবাজারের কাছে তিনি দাবি করছেন, টাইপ করার ভুলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে। আদতে এমন কথা তিনি মোটেও বলতে চাননি। তাঁর দাবি, “আমি লিখতে চেয়েছিলাম, কর্ণ যদি মাকে হাসাতেই এমনটা করে থাকেন, তা হলে প্রকাশ্যে না করে আড়ালে করতে পারতেন।”
কিন্তু বলিউড তা মানবে কেন? অশোকের টুইট তো জ্বলজ্বল করছে! সেখানে যা লেখা রয়েছে, তার ভিত্তিতেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তারকারা। তবে তাঁদের আসল নালিশ, ‘নীতি পুলিশি’কে ঘিরে। যেমন টুইটারে সোনাক্ষী সিন্হার কটাক্ষ, “দেখে মন ভরে যাচ্ছে যে টুইটারে এমন মানুষও রয়েছেন যাঁরা কখনও অশালীন কথা বলেননি, অশ্লীল ঠাট্টায় হাসেননি।” অনেকে আবার অশোকের সেন্সর বোর্ড থেকে পদত্যাগ করা উচিত বলেও মনে করছেন।
অভিযুক্ত নিজে কী বলছেন?
অশোকের কথায়, “ইস্তফার প্রশ্নই নেই। কারণ যা বলেছি, তাতে মোটেও অনুতপ্ত নই।” অশোকের আরও দাবি, কোনও নীতি পুলিশি তিনি করছেন না। এই শো প্রসঙ্গে যা বলেছেন, সবটাই তাঁর ব্যক্তিগত মত। এবং সে অবস্থানে এখনও তিনি অনড়। অশোকের বয়ানে, “কমেডি বুঝি না এমন তো নয়। ‘ইয়েহ জো হ্যায় জিন্দেগি’-র মতো জনপ্রিয় কমেডি সিরিয়ালের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর ছিলাম।” কিন্তু ওই শোয়ে কমেডির নামে যা হয়েছে, তা সর্ব অর্থেই অশ্লীল, মত তাঁর।
এক অভিনেত্রীর প্রশ্ন, এ দেশের জনপ্রতিনিধিরা তো বিধানসভায় বসে পর্ন দেখেন। তা হলে একটা শো নিয়ে এমন শোরগোল কেন? জবাবে অশোকের দাবি, জনপ্রতিনিধিরা ভুল করেছিলেন। কিন্তু একটা ভুল তো আর একটা ভুলকে বৈধতা দেয় না।
সমালোচকদের পাল্টা দাবি, বিদেশে এমন ‘রোস্ট শো’ হামেশা হয়ে থাকে। আমাদের দেশ যদি এমন শো মেনে নিতে না পারে, তা হলে প্রগতিশীল হবে কী করে? অশোকের কটাক্ষ, “বিদেশে তো ছেলেমেয়ের সামনে বাবা-মারা চুমুও খায়। আমরা কি তা-ই করব?” তাঁর যুক্তি, যে বলিউড ধর্ষণের প্রতিবাদে মোমবাতি মিছিলে সামিল হয়েছিল, সেই বলিউডেরই অন্যতম ‘আইকন’ কর্ণ জোহরের সামনে কি না রসিকতা করা হচ্ছে, “ভাগ্যিস পরিণীতি চোপড়া এখানে নেই। না হলে দশ জন মিলে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ত!” এ কেমন দ্বিচারিতা, প্রশ্ন অশোকের।
কর্ণদের বিরুদ্ধে অশালীনতার অভিযোগ রুজু হয়েছে সোমবার। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। অনুষ্ঠানটির জন্য পুলিশি অনুমতি ছিল কি না, দেখা হবে। রাজ্যের শাসক দল বিজেপি-র সাংস্কৃতিক মন্ত্রী বিনোদ তাওড়ে এবং মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীস জানিয়ে রেখেছেন, আইনবিরুদ্ধ যদি কিছু মেলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy