Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘ব্রাহ্মণেরা শ্রেষ্ঠ’ বলে বিতর্কের ঝড়ে স্পিকার

রাজস্থানের কোটায় অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ মহাসভায় যোগ দিয়েছিলেন ওম। সেখানে গত রবিবার তিনি বলেন, ‘‘ত্যাগ ও তপস্যার কারণে ব্রাহ্মণেরা বরাবরই সমাজে উচ্চ স্থানে আসীন।

স্পিকার ওম বিড়লা।

স্পিকার ওম বিড়লা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২৮
Share: Save:

ব্রাহ্মণেরা সমাজে শ্রেষ্ঠ বলে মন্তব্য করে বিতর্ক বাধালেন স্পিকার ওম বিড়লা। নিরপেক্ষতার শপথ নিয়ে যিনি সাংবিধানিক পদে বসেছেন, তিনি কী ভাবে একটি বর্ণের শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে সওয়াল করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবিলম্বে ওমকে স্পিকারের পদ থেকে সরানোর দাবিও উঠেছে। যদিও অনেকের আশঙ্কা, সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির সুরে কথা বললে এখন সাত খুন মাফ হয়ে যায়। ওমও ছাড় পেয়ে যেতে পারেন। কারণ বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের কাছে তাদের আদর্শই শেষ। সংবিধান মূল্যহীন।

রাজস্থানের কোটায় অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ মহাসভায় যোগ দিয়েছিলেন ওম। সেখানে গত রবিবার তিনি বলেন, ‘‘ত্যাগ ও তপস্যার কারণে ব্রাহ্মণেরা বরাবরই সমাজে উচ্চ স্থানে আসীন। তাঁরা সমাজে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছেন।’’ লোকসভা পরিচালনার ভার যাঁর কাঁধে, তাঁর এমন মন্তব্য থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। ওম যে ভাবে জাতিভেদ প্রথা ও ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরেছেন তা আদৌও মানতে রাজি নন ইতিহাসবিদ গৌতম ভদ্র। তাঁর মতে, ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হলেই কেউ ব্রাহ্মণের গুণের অধিকারী হন না। তাঁর কথায়, ‘‘ব্রাহ্মণ বলতে কিছু সদাচারকে বোঝায়। ব্রাহ্মণের গুণ থাকলে যে কেউ ব্রাহ্মণ হতে পারেন। এক জন চণ্ডালও সদ্‌গুণ থালে ব্রাহ্মণ হতে পারেন।’’ এই সূত্রে গৌতমবাবু স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বৌদ্ধ দার্শনিকদের মতে ব্রাহ্মণদের মতো অত্যাচারী আর কেউ নেই। ধর্মপদে বলা হয়েছে, মন্ত্র দিয়ে ব্রাহ্মণ হয় না। গুণ থাকতে হয়। তা ছাড়া ব্রাহ্মণ্যবাদ জাতিভেদ প্রথাকে তুলে ধরে। বিজেপি ব্রাহ্মণ্যবাদের সমর্থক। ব্রাহ্মণের মূল ক্ষমতা ছিল যজ্ঞের অধিকার। তাই বুদ্ধদেব যজ্ঞের বিরোধী ছিলেন। যজ্ঞের বিরোধিতার মাধ্যমেই সমাজে ব্রাহ্মণদের কার্যত অর্থহীন করে দেওয়া হয়েছিল।’’

স্পিকারের ওই বক্তব্যের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পিপল্‌স ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস (পিইউসিএল)-এর রাজস্থান শাখার সভাপতি কবিতা শ্রীবাস্তব। তাঁর দাবি, স্পিকারকে ওই মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। কবিতা বলেন, ‘‘ একটি বর্ণ বা জাতকে অন্যদের চেয়ে ভাল বলা বা একটি জাতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এটা এক দিকে অন্য বর্ণকে খাটো করে দেখায় তথা জাতিভেদ প্রথাকে আরও উৎসাহিত করে।’’

বর্তমান রাজনৈতিক শাসক শিবির যে ভাবে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের জয়গান করছে, তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে আলাদা কিছু আশা করেন না সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র। তিনি মনে করেন, ‘ব্রাহ্মণ’ একটি ধারণা মাত্র। এক জন ব্যক্তি— যিনি গুণের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘যে কেউ ব্রাহ্মণ হতে পারেন। যিনি গুণের অধিকারী এবং যে গুণ মঙ্গলময়— তিনিই ব্রাহ্মণ। তিনি যে কোনও শ্রেণির প্রতিনিধি হতে পারেন। জ্ঞানের দিক থেকে একটি উচ্চতায় পৌঁছলে সেই ব্যক্তিকে ব্রাহ্মণ হিসেবে ধরা হত। সেটাই ছিল ধারণা।’’ অভিজিৎবাবুর বক্তব্য, ‘‘বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ব্রাহ্মণেরা ব্যর্থ হয়েছেন। ফারাক আছে ব্রাহ্মণে-ব্রাহ্মণও। যিনি অপরের কাছ থেকে বেশি দান গ্রহণ করেন, তাঁদের ব্রাহ্মণেরাই নিচু চোখে দেখেন। এটা ব্রাহ্মণেরাই সৃষ্টি করেছেন।’’ ব্রাহ্মণ হওয়ার অধিকার একটি বর্ণের হাতে কুক্ষিগত করে রাখার কোনও যুক্তি নেই বলে মনে করেন অভিজিৎবাবু। যে কোনও গোষ্ঠীর মানুষ সেই উচ্চতায় উঠতে পারেন। প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্রাহ্মণ্যবাদের কথা না বলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচিত উত্তরণের কথা প্রচার করা। রাজস্থানে হয়েছে ঠিক তার উল্টো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Brahmin Lok Sabha Speaker Om Birla Controversy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE