চন্দ্রবাবু নায়ডু।— ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে চন্দ্রবাবু নায়ডুর রাজনৈতিক যুদ্ধে এ বার নতুন মোড়।
এনডিএ ছেড়ে মোদী-বিরোধী জোট তৈরির চেষ্টায় নামার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডি-আয়কর দফতরকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন চন্দ্রবাবু। অন্ধ্রপ্রদেশে তদন্তে সিবিআইয়ের ঢালাও ছাড়পত্রও প্রত্যাহার করে নেন তিনি। এ বার সিবিআই অভূতপূর্ব ভাবে বিবৃতি জারি করে চন্দ্রবাবুর সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলল। অন্ধ্র পুলিশ সিবিআইয়ের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে বলে তাদের দাবি। সে বিবৃতির মাথায় একই সঙ্গে লেখা, ‘প্রেস নোট’ এবং ‘কনফিডেনশিয়াল’। সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করার জন্য তৈরি বিবৃতি কী করে ‘গোপনীয়’ হয়, তা নিয়েও এ দিন দিনভর জল্পনা চলে।
এর আগে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে সিবিআই সূত্রে সারদা তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয়েছে। আদালতেও নালিশ করেছে সিবিআই। কিন্তু কখনও তা নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি জারি করেনি। চন্দ্রবাবু সিবিআইয়ের ঢালাও ছাড়পত্র প্রত্যাহার করার পরে মমতার সরকারও সেই পথে হাঁটে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ, অন্ধ্রে নিযুক্ত এক কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ পেয়ে সিবিআই ফাঁদ পেতে তাঁকে বমাল ধরতে চাইছিল। তার জন্য রাজ্যর অনুমতি চাওয়া হয়। ৮ নভেম্বর অন্ধ্র সরকার সিবিআই তদন্তের ঢালাও অনুমতি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে প্রতিটি তদন্তের ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে সিবিআইকে অনুমতি চাইতে হচ্ছে। অনুমতি চাওয়ার সঙ্গে অন্ধ্রের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে এই তথ্য ফাঁস না করার অনুরোধও জানানো হয়।
সিবিআইয়ের দাবি, তাঁদের অনুমতি দেওয়ার বদলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর ওই খবর রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখাকে জানিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় কর পর্ষদের ওই অফিসার জিএসটি রিটার্ন নিয়ে আপত্তি না তোলার বিনিময়ে অন্ধ্রের এক ব্যবসায়ীর থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। রাজ্য পুলিশ তাঁকে ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করে। সিবিআইয়ের নালিশ, তাঁদের তথ্য পেয়ে গ্রেফতার করে অন্ধ্র পুলিশ এখন তা নিয়ে বড়াই করছে। সিবিআই মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের এ হেন অসহযোগিতায় আমরা দুঃখিত। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠবে। কেন্দ্র ও রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থাগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসও চলে যাবে।’’
অভিযোগের জবাবে মুখ খুলেছেন অন্ধ্র পুলিশের ডিজি আর পি ঠাকুর। তিনি রাজ্যের দুর্নীতিদমন শাখারও প্রধান। তাঁর যুক্তি, ‘‘সিবিআইয়ের এসপি স্বরাষ্ট্রসচিবকে ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করেছিলেন, যদি রাজ্য সরকার অনুমতি না দেয়, তা হলে সিবিআই নিজেই দুর্নীতি দমন শাখাকে ফাঁদ পাতার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়ে দেবে।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সিবিআই অভিযোগকারীর নাম ফাঁস করে দিয়েছে। আমরা বরং সিবিআইয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই ওই দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারকে গ্রেফতার করেছি। অসহযোগিতার প্রশ্নই নেই।’’
আরও পড়ুন: ফসল বিমায় দুর্নীতি! মোদীর বিরুদ্ধে নতুন তোপ দাগলেন রাহুল
ক’দিন আগেই টিডিপি-র রাজ্যসভা সাংসদ ওয়াই এস চৌদরির বাড়িতে ইডি আর আয়কর দফতরের কর্তারা তল্লাশি চালিয়েছিলেন। তখন চন্দ্রবাবু বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রকাশ বলেই অভিযোগ তুলেছিলেন। এ দিনও সিবিআই যে রকম বেনজির বিবৃতি জারি করে অসহযোদিতার অভিযোগ তুলল, সেটাও একই রকম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে টিডিপি। এ দিন হায়দরাবাদে চন্দ্রবাবু তাঁর রোডশো-তে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই-আয়করের ত্রিফলা হানার অভিযোগে ফের সরব হন। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদিও দাবি করছেন, সিবিআই-ইডি তাদের কাজ স্বাধীন ভাবে করছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy