Advertisement
১১ মে ২০২৪

ঘাটতি সামলাতে স্বাস্থ্যে বড় কোপ

জিডিপি-র অন্তত আড়াই শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচের দাবি অনেক দিনের। সেই অনুপাতে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে আগামী তিন বছর খরচ করার জন্য টাকা দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু রাজকোষ ঘাটতির কথা মাথায় রেখে আপাতত সেই দাবি খারিজ করে দিল কেন্দ্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪৬
Share: Save:

জিডিপি-র অন্তত আড়াই শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে খরচের দাবি অনেক দিনের। সেই অনুপাতে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে আগামী তিন বছর খরচ করার জন্য টাকা দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু রাজকোষ ঘাটতির কথা মাথায় রেখে আপাতত সেই দাবি খারিজ করে দিল কেন্দ্র।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, তারা আগামী তিন বছরে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের জন্য ১.৫৯ লক্ষ কোটি টাকা চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রকের কাছে। অনুমোদন মিলেছে মাত্র ৮৫ হাজার কোটি টাকার। এর ফলে আগামী দিনগুলিতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, মূলত গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে বলেই মনে করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ।

নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যোজনা কমিশন উঠে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও। তার বদলে নীতি আয়োগের মাধ্যমে শুরু হয়েছে তিন বছরের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’। ২০১২ থেকে ২০১৭, সর্বশেষ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে ১.৯৪ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। যা গোটা স্বাস্থ্য বাজেটের প্রায় ৬০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সেই অনুপাতেই চলতি তিন বছরে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বাজেট বাড়িয়ে ১.৫৯ লক্ষ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল অর্থ মন্ত্রকের কাছে। সরকার জিডিপি-র আড়াই শতাংশ খরচের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তার ভিত্তিতেই ওই বাজেট বানিয়ে অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের অধীনে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যয় কমিটি সেই দাবি না মেনে, মাত্র ৮৫ হাজার ২১৭ কোটি টাকা মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বরাদ্দ কমানোর পিছনে অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, রাজকোষ ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জিএসটি চালু করার পরে সরকারের আয় নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

পেট্রো পণ্যে উৎপাদন শুল্ক কমানোয় ওই খাতেও আয় কমবে বলেই মনে করছে সরকার। নোট বাতিল এবং জিএসটির কারণে ধাক্কা খেয়েছে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিও। বৃদ্ধিকে ফের চাঙ্গা করার জন্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অনেক বেশি টাকা ঢালতে হচ্ছে সরকারকে। রাজকোষ ঘাটতি ৩.২ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ছিল সরকারের। সেই লক্ষ্য ছুঁতে হলে সামাজিক ক্ষেত্রে খরচ কাঁটছাঁট করাটাই একমাত্র উপায় বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রক। যে কারণে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন থেকে মিড ডে মিলের মতো সামাজিক পরিকল্পনাগুলি এর শিকার হচ্ছে।

অথচ, ইউপিএ সরকারের আমল থেকেই স্বাস্থ্য বা শিক্ষার মতো সামাজিক ক্ষেত্রে জিডিপি-র অন্তত আড়াই শতাংশ খরচের দাবি তুলে আসছে বিভিন্ন শিবির। সরকারও ২০২৫ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্য ছোঁয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, তাঁদের সার্বিক পরিকল্পনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন। তাই ওই পরিকল্পনায় যে টাকা দাবি করা হয়েছিল আর যা মিলছে, সেটা খুবই হতাশাজনক।’’

জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনেই শুধু কোপ পড়েনি, প্রত্যাশিত অঙ্কের চেয়ে অনেক কম বরাদ্দ করা হয়েছে অ-সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্য কর্তাদের আক্ষেপ, আগামী বছরগুলিতে এই ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি জোর দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। অথচ আগামী তিন বছরে এই খাতে মাত্র ৯ হাজার ৩৮ কোটি টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।

দেশের সব ক’টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ ওই সামান্য টাকায় কোনও পরিকল্পনাই সুষ্ঠু ভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অনেক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Health Mission Central Health Ministry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE