রাফাল-চুক্তি নিয়ে সিএজি-র রিপোর্ট সংসদের টেবিলে জমা পড়েনি। তার আগেই এ নিয়ে রাজনীতির টক্কর শুরু হয়ে গেল।
এই সপ্তাহেই সংসদে রাফাল নিয়ে সিএজি-র রিপোর্ট আসতে চলেছে। রাফাল-চুক্তিতে কোনও দুর্নীতি হয়নি বলে সিএজি রিপোর্ট দেবে আশঙ্কা করে আজ আগাম তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। রাফাল চুক্তির সময় যিনি কেন্দ্রে অর্থসচিব ছিলেন, সেই রাজীব মহর্ষিই এখন সিএজি। কংগ্রেসের প্রশ্ন— রাফাল-চুক্তির দুর্নীতি তিনি কী ভাবে প্রকাশ করবেন?
মহর্ষির হয়ে মাঠে নেমেছেন অরুণ জেটলি। জেটলির যুক্তি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ফাইলের সঙ্গে মহর্ষির সম্পর্ক ছিল না। রাফাল নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য রাহুল গাঁধীকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন জেটলি। ব্লগে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ফেল করা ছাত্র সব সময়ে ক্লাসের সেরা ছাত্রকে হিংসা করে। রাফাল নিয়ে সংসদে রাহুলের দু’টি বক্তৃতা বিশ্লেষণ করে দেখা যাবে, তার ভিত্তি হল প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিদ্বেষ। তার সারবস্তুও একেবারে কলেজ-স্তরের লুম্পেনবৃত্তি!’’
কংগ্রেস তবু পিছু হঠেনি। কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল রাজীব মহর্ষির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে কংগ্রেস আজ তাঁকে রাফালের অডিট থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি তুলেছে। কপিল সিব্বলের অভিযোগ, মহর্ষির ক্ষেত্রে ‘স্বার্থের সংঘাত’ হচ্ছে। তিনি মোদী জমানায় অর্থসচিব নিযুক্ত হন। তার পরেই নরেন্দ্র মোদী প্যারিসে গিয়ে আচমকা ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। মহর্ষি অর্থসচিব থাকাকালীনই ১২৬টি রাফাল কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছিল। এমনকি রাফালের দাম নিয়ে দর কষাকষিতেও অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা যুক্ত ছিলেন। সিব্বলের প্রশ্ন, ‘‘এর পরে মহর্ষি কী ভাবে নিজের বিরুদ্ধে নিজে তদন্ত করবেন? কী ভাবে তিনি বলবেন, রাফাল অনেক বেশি দামে কেনা হয়েছে? আগে তো তিনি নিজেকে বাঁচাবেন!’’
অরুণ জেটলির অভিযোগ, কংগ্রেস মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার অভিযোগ করছে। বাস্তবে কংগ্রেসই মিথ্যাচার করে আর একটি প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা করল। তাঁর যুক্তি, অর্থ মন্ত্রকের সচিবদের মধ্যে প্রবীণতম অফিসারই অর্থসচিব হন। মহর্ষি সেই হিসেবে অর্থসচিব হলেও, আসলে ছিলেন আর্থিক বিষয়ক দফতরের সচিব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ফাইলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। বিজেপির বক্তব্য, ইউপিএ সরকার নিজে ২০১৩-য় প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব শশীকান্ত শর্মাকে সিএজি নিয়োগ করেছিল। শশীকান্ত সিএজি হিসেবে ইউপিএ-জমানায় অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড চপার কেনার মতো একাধিক চুক্তিকে দুর্নীতিমুক্ত বলে ছাড় দিয়ে দেন।
সরকারি সূত্রের খবর, সিএজি রিপোর্টে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় থাকলেও, তাতে দাম প্রকাশ করা হবে না। হ্যাল-কে বাদ দিয়ে অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত দেওয়ার বিষয়েও মন্তব্য করা হয়নি। রাফাল-চুক্তিতে তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলার সময়েই প্রথম সিএজি রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক হয়। সরকারের হলফনামা থেকে উদ্ধৃত করে সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলে— সিএজি ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিমানের দামের হিসেব পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিয়েছে। সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে। বাস্তবে এর কোনওটাই ঘটেনি। সরকার জানিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট সরকারের দেওয়া তথ্য ভুল বুঝেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy