প্রতীকী ছবি।
ওষুধ ও তার কাঁচামালের ব্যাপারে চিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার জন্য সমস্যায় ভারত।
কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল এবং দেশে ওষুধ উৎপাদন তথা আমদানি-রফতানিতে যুক্ত সংস্থাগুলির সর্ববৃহৎ সংগঠন সূত্রের খবর, অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন, স্টেরয়েড, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, হৃদ্রোগের ওষুধ, ব্যথার ওষুধের মতো ৫৮ ধরনের ওষুধের উপাদানের (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস বা ‘এপিআই’) জন্য মূলত চিনের উপর নির্ভর করে ভারত। কিন্তু চিনে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে সে দেশের কার্যত ৯৯ শতাংশ ওষুধ ও কাঁচামালের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। গত প্রায় এক মাসের বেশি সেখান থেকে ওষুধ আমদানি করতে পারছে না ভারত। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এর আগে সাংবাদিক বৈঠক করে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে ওষুধ সম্পর্কে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
ওষুধ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির একটি সংগঠনের মুখপাত্র (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অবশ্য বুধবার ফোনে বলেন, ‘‘বড় সংস্থাগুলির কাছে ওষুধের যে সঞ্চয় রয়েছে, তা দিয়ে এপ্রিল পর্যন্ত চালানো যাবে। তার পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিপদ রয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, যে ৫৮ ধরনের ওষুধের উপাদান চিন থেকে আমদানি করা হয়, তার মধ্যে ১৩টি আবার উহানের বিভিন্ন কারখানা থেকে আসত। উহানেই করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতে যত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়, তার ৯০ শতাংশ আসে চিন থেকে। ৯০-এর দশক পর্যন্ত এর অনেকটাই ভারতে তৈরি হত। তার পর চিন এত কম দামে তা দিতে শুরু করে যে, ভারতের কারখানাগুলি একে একে বন্ধ হয়ে যায়। ভারত অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্য ওষুধ উৎপাদনে স্বনির্ভর না হলে ভবিষ্যতেও এমন অনিশ্চয়তায় পড়তে হতে পারে।’’
ওষুধ সমস্যার সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই কমিটির মূল কাজ, ভারতে ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামালের সরবরাহে নজরদারি চালানো। এই কমিটির প্রধান ভারতের যুগ্ম ড্রাগ কন্ট্রোলার এস ঈশ্বর রেড্ডি দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রসায়ন ও সার মন্ত্রকের অধীন ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে চিন থেকে ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানিতে গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভারতকে ওষুধ ও তার কাঁচামালে স্বনির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা বোঝা যাচ্ছে। এর জন্য আমরা রিপোর্টে ‘ড্রাগ সিকিয়োরিটি অথরিটি’ (ডিএসএ) তৈরির প্রস্তাব দিয়েছি।’’
নির্ভরতা কতটা?
• ভারতে প্রতি বছর যা ওষুধ আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ আসে চিন থেকে
• চিন থেকে ভারত ৫৮ ধরনের ওষুধের উপাদান আমদানি করে
• ভারতে যত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন তার ৯০ শতাংশ আসে চিন থেকে
• অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও ভিটামিন, স্টেরয়েড, পেন কিলার, অ্যান্টি ডায়াবেটিক, কার্ডিওভাস্কুলার ড্রাগ, হরমোনস আমদানি হয়
চিন থেকে
• ভারতে ওষুধ আমদানির বাজার প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের
• প্রতি বছর ওষুধ আমদানি করতে ভারতের প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। এর বেশির ভাগটাই খরচ হয় চিন থেকে ওষুধ আমদানিতে
ওই কমিটিতে ওষুধ নির্মাণ সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা জানান, চিনে ওষুধ কারখানার জন্য সরকার বিনা পয়সায় জমি দেয় এবং অত্যন্ত কম টাকায় জল, বিদ্যুৎ-এর ব্যবস্থা করে। অর্থের ব্যবস্থাও সহজে হয়। ভারতেও যেন সেই সুবিধা পাওয়া যায়, সেই প্রস্তাবও কমিটি দিয়েছে। প্রথম যে ৫টি উৎপাদক সংস্থা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাঁচামাল তৈরি শুরু করতে আগ্রহ দেখাবে, তাদের পরিকাঠামোয় বাড়তি ছাড়ের সুপারিশ করেছে কমিটি। আরও প্রস্তাব, এদের উন্নত প্রযুক্তি ও বাণিজ্য মডেল ঠিক করে দেবে ডিএসএ। ভারত যে ওষুধ ও কাঁচামাল আমদানি করে, তার মূল্যের উপর এক শতাংশ ‘সেস’ বসানোর প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy