মার্চ মাসের শেষে লকডাউন ঘোষণার সময়ে ‘তিনি’ বলেছিলেন, এটা ২১ দিনের কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধ। এতে জিতলে করোনার বিরুদ্ধে জয় অবশ্যম্ভাবী। বাস্তবে জুলাই-শেষে এসে প্রতি দু’দিনে গড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক রোগী। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে আজ দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ১৩.৮৫ লক্ষ হলেও রাতে আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় তা ১৪ লক্ষ পেরিয়েছে। যা ১৩ লক্ষে পৌঁছেছিল দু’দিন আগে।
আইসিএমআর সম্প্রতি জানায়, ১৫ অগস্টের মধ্যে কোভিডের টিকা আনার চেষ্টা হচ্ছে। সেটা শোনার পরে জল্পনা শুরু হয়ে যায়, তবে কি স্বাধীনতা দিবসে রোগমুক্তির ‘উপহার’ দিতে ‘তিনি’ ব্যগ্র? এ ভাবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে টিকা আনা আদৌ সম্ভব কি না, প্রশ্ন উঠতে থাকে সর্বত্র।
আজ ‘মন কি বাত’-এ সেই ‘তিনি’ অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদী বললেন, গোড়ায় করোনাভাইরাস যতটা শক্তিশালী ছিল, এখনও ততটাই শক্তিশালী। দেশ জুড়ে সংক্রমণের সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী। সরকার বুঝতে পারছে, ১৫ অগস্টের মধ্যে টিকা বাজারে ছাড়া কার্যত অসম্ভব। ফলে প্রধানমন্ত্রী রেডিয়োয় বললেন, এ বছর স্বাধীনতা দিবস আসছে সংক্রমণের মধ্যেই। যুব সমাজ যেন ১৫ অগস্টে করোনা থেকে মুক্তির প্রতিজ্ঞা নেয়। আগের মতোই সাবধানতা মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ মুক্ত ভারত গড়ার সংকল্প নিতে হবে।
আরও পড়ুন: করোনার প্রতিষেধক সন্ধানের প্রথম পর্বে আশা, মত গবেষকদের
আরও পড়ুন: ‘আত্মনির্ভর’ ভারত দেখালেন মোদী
এরই মধ্যে করোনা পরীক্ষা বাড়াতে কলকাতা, নয়ডা ও মুম্বইয়ে আগামিকাল তিনটি অত্যাধুনিক পরীক্ষাগার ও যন্ত্রের উদ্বোধন করতে চলেছেন মোদী। অনুষ্ঠানে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা। অত্যাধুনিক পরীক্ষাগারে রোজ ১০ হাজার করোনা পরীক্ষা সম্ভব। বর্তমানে দেশে রোজ প্রায় ৫০ হাজার নতুন রোগীর সংখ্যাটা স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্বেগে রাখলেও প্রধানমন্ত্রী আজ বলেন, ‘‘ভারতে সংক্রমিতদের সুস্থ হওয়ার হার অন্য দেশের তুলনায় ভাল। আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি ঠিকই, কিন্তু সংক্রমণ-কাল এখনও কাটেনি। গোড়ার দিকে করোনা যতটা ভয়ঙ্কর ছিল এখনও ততটাই।’’ লাগাতার মাস্ক পরা নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে। অনেকেই জনবহুল এলাকায় মাস্ক খুলে কথা বলছেন। পর্যাপ্ত দূরত্ব মানছেন না। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা মাস্ক খোলার কথা ভাবছেন, তাঁরা এক বার চিকিৎসক ও অন্য কোভিড যোদ্ধাদের কথা ভাবুন, যাঁরা ২৪ ঘণ্টা মাস্ক পরে লড়াই করে যাচ্ছেন।’’
করোনা-পরীক্ষার নিরিখে জাতীয় গড়ের চেয়ে পিছিয়ে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য। কলকাতা ও নয়ডায় তাই অত্যাধুনিক যন্ত্র এবং পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা হচ্ছে। মুম্বইয়েও একই পরিকাঠামো রাখা হচ্ছে। তিনটি শহরে হাই থ্রুপুট পরীক্ষাগার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। বিদেশ থেকে আনা অত্যাধুনিক রোবটিক যন্ত্রে দিনে ১০ হাজার করোনা পরীক্ষা সম্ভব। ওই যন্ত্রের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচআইভি, যক্ষ্মা, ডেঙ্গির পরীক্ষাও করা যাবে। কাল ভিডিয়ো কনফারেন্সে এগুলির উদ্বোধন করবেন মোদী।