ছবি: পিটিআই।
উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঁশের বোতল থেকে জম্মুতে বলবীর কৌরের নিভৃতবাস। বিহারের মধুবনি মুখাবরণ (মাস্ক) থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের মুক্তো চাষ। রবিবার রেডিয়ো-বক্তৃতা ‘মন কি বাত’-এ এই সমস্ত কিছুকেই ‘আত্মনির্ভর ভারতের সুতোয়’ গাঁথলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দাবি করলেন, এই আত্মনির্ভরতার মন্ত্রেই করোনার কঠিন সময়েও বিপদকে সুযোগ আর বাধাকে উন্নতির সোপান হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, বিপদ যুঝে স্বাবলম্বী হওয়ার এই চেষ্টায় আমজনতা কেন্দ্রকে পাশে পাচ্ছে কোথায়? নাকি আত্মনির্ভরতার ‘হাওয়া তুলে’ নিজেদের যাবতীয় দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার?
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ছোট-ছোট উদ্যোগে ভর করে কী ভাবে বড় বদলের সূচনা হচ্ছে, এ দিন তার বেশ কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন মোদী। যেমন, বলেছেন জম্মুর ত্রেবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বলবীর কৌরের কথা। জনা কয়েক স্বেচ্ছাসেবীকে সঙ্গী করে নিজের এলাকায় নিজেদের উদ্যোগে ৩০ শয্যার নিভৃতবাস তৈরি করেছেন তিনি। খাট-বিছানা-জল সমেত পরিকাঠামো তো রেখেছেনই, নিজে পিঠে ওষুধের ট্যাঙ্ক চড়িয়ে বেড়িয়ে পড়েন এলাকা স্যানিটাইজ়ের কাজে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েও বিরোধীদের প্রশ্ন, দীর্ঘ সময় লকডাউন করেও কতটুকু করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো বাড়িয়েছে কেন্দ্র? সারা দেশে হাসপাতালের বেড, আইসিইউয়ের শয্যা বেড়েছে কতগুলি? কতখানি বেড়েছে নিভৃতবাসের সংখ্যা? কেন্দ্রের পাশাপাশি এই দায় সমস্ত রাজ্যেরও। গত কয়েক মাসে সারা দেশে চিকিৎসা-পরিকাঠামো কতটুকু বেড়েছে, তার স্পষ্ট পরিসংখ্যান এখনও পর্যন্ত মোদী সরকারের তরফ থেকে কোথায়? জম্মুর এক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান যদি জনা কয়েককে সঙ্গী করে এমন তারিফযোগ্য পরিকাঠামো তৈরি করতে পারেন, তা হলে সরকারের কাছ থেকে তা আরও অনেক বেশি প্রত্যাশিত ছিল না কি?
আরও পড়ুন: মেধাবীদের ধারালো জবাব মোদীর সওয়ালে
করোনা-কালেও সাধারণ মানুষের নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবন এবং জীবিকার লড়াইয়ের একের পর এক উদাহরণ বক্তব্যে তুলে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, কী ভাবে কাশ্মীরের গান্ধেরবালে চাষের জন্য ফসলের বীজ, আপেলের চারা বিলি করছেন জয়তুনা বেগম। শুনিয়েছেন, ৬ লক্ষ টাকায় স্প্রেয়িং মেশিন কিনতে না-পেরে কী ভাবে মাত্র ৫০ হাজারে তা তৈরি করে ফেলেছেন অনন্তনাগের মহম্মদ ইকবাল। কী ভাবে বাজার ধরার চেষ্টা করছে বিহারের মধুবনি মাস্ক আর উত্তর-পূর্বের বাঁশের বোতল ও টিফিন বক্স। লে-লাদাখের খোবানি চাষ থেকে শুরু করে গুজরাতের কচ্ছে ড্রাগন ফলের চাষ- সবই উঠে এসেছে তাঁর কথায়। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ভিন্ রাজ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরা বিহারের কিছু যুবক নিজেদের গ্রামে মুক্তোর চাষ তো শুরু করেছেনই, উপরন্তু সেখানে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন ঘরে ফিরতে বাধ্য হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের।
বিরোধীদের কটাক্ষ, গ্রামের মানুষ কাজ হারিয়ে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে টেনে নিতে চাইলেও সরকার তাঁদের জন্য ভাবেনি। বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের বার বার সওয়াল সত্ত্বেও এই কঠিন সময়ে টিকে থাকার জন্য তাঁদের হাতে নগদ ছোঁয়ায়নি তারা। সম্প্রতি চালু হওয়া গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযানও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। বাকি উদ্যোগও যাতে বড় সংস্থার সঙ্গে যুঝে বাজার ধরতে পারে, পায় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো- সেই সমস্ত নিশ্চিত করতেও সরকার কী করছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy