Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

উত্তর-পূর্বে বাড়ছে মাদক-সন্ত্রাস

বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের কর্তাদের কথায়, আগে মায়ানমার থেকে মণিপুর, মিজোরাম হয়ে মাদক চলে যেত বাংলাদেশে।

উত্তর-পূর্বে প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে মাদক। নিজস্ব চিত্র

উত্তর-পূর্বে প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে মাদক। নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

সীমান্তে কড়া নজরদারির ফলে ভাটা পড়েছে অনুপ্রবেশে। কমেছে অস্ত্র, গরু ও মানুষ পাচারও। কিন্তু উত্তর-পূর্ব, বিশেষ করে গুয়াহাটির ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিপদ সীমান্ত পার হয়ে আসা মাদক। মূলত মায়ানমারের অবাধ সীমান্ত দিয়েই তা আসছে।

বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের কর্তাদের কথায়, আগে মায়ানমার থেকে মণিপুর, মিজোরাম হয়ে মাদক চলে যেত বাংলাদেশে। কিন্তু কড়া মাদক-বিরোধী অভিযানে র‌্যাব ও বিজিবি তাতে লাগাম পড়িয়েছে। কার্যত সীমান্তের দু’শো কিলোমিটারের বেশি এলাকায় মাদক-বিরোধী নজরদারি ‘নিশ্ছিদ্র’ করে তুলেছে তারা। তাই এক দিকে পাচারকারীরা বিকল্প বাজারের সন্ধানে নেমেছে, অন্য দিকে পাচারের সময়ে মিজোরাম, অসমে ছড়িয়ে পড়া মাদক বড়ি কম দামে হাতে আসার ফলে নেশার দাস হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্বের নতুন প্রজন্ম। বিএসএফের কর্তাদের মতে, এখনই রাশ না টানলে আইজল, শিলং, গুয়াহাটির নবীন প্রজন্ম সর্বনাশা নেশার কবলে চলে যাবে।

আসাম রাইফেলসের এক কর্তা জানান, ভারত-মায়ানমার সীমান্তের দু’পারে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় অবাধ গতিবিধি ও বাণিজ্যের অনুমতি রয়েছে। উত্তর ভারত থেকে আসা এফিড্রিন, সিউডো এফিড্রিন জাতীয় ওষুধ মূলত মণিপুর, নাগাল্যান্ডের সীমান্ত পার হয়ে মায়ানমারে পাচার হয়। আপাত নির্দোষ এই ওষুধ থেকেই মায়ানমারে তৈরি হয় ‘মেথামফেটামিন’। যা পরে মাদক ট্যাবলেটের আকার নেয়। মূলত, দু’ধরনের মাদক ট্যাবলেট মিজোরাম ও মণিপুর হয়ে মেঘালয়, শিলচর, গুয়াহাটিতে পৌঁছচ্ছে। একটি হল ‘ইয়াবা’ তাই ভাষায় যার অর্থ ‘পাগলামি ট্যাবলেট’ অন্যটি ‘ওয়ার্ল্ড ইজ ইয়োর্স’ ট্যাবলেট। বিএসএফ জানায়, চার প্রকারের ট্যাবলেট হয়। রঙও আলাদা। এর মধ্যে হালকা গোলাপি ট্যাবলেট সবচেয়ে দামী, ৪০০ টাকা। অন্যগুলির দাম খুবই কম। তাই কিশোর-তরুণরা সহজেই কিনতে পারে।

আরও পড়ুন: বছরে ১২ লক্ষ বায়ুদূষণের বলি, বলছে রিপোর্ট

মিজোরাম ইতিমধ্যেই নেশার কবলে। এরপর আক্রান্ত হয়েছে মেঘালয়। এখন গুয়াহাটির পালা। শুধু তাই নয়, গুয়াহাটি হয়ে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গেও। মেঘালয় পুলিশ মাদক-বিরোধী অভিযান তীব্র করেছে। গত কয়েক মাসে প্রচুর মাদক ও পাচারকারী ধরা পড়েছে। আবার মণিপুর পুলিশ সীমান্তবর্তী মোরে শহরে গত কয়েকমাসে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার হেরোইন ও অন্য মাদক ধ্বংস করেছে। জানা গিয়েছে, একটা সময় সীমান্ত পারাপারে সমস্যা হওয়ায় মোরে শহরেই হেরোইন তৈরির বেশ কয়েকটি কারখানা তৈরি হয়েছিল। প্রশিক্ষণ দিতে আসত মায়ানমারের ড্রাগপিনরা। মেঘালয়ের মাদক-বিরোধী বিশেষ টাস্ক ফোর্সের প্রধান ক্লডিয়া এ লিংগোয়ার মতে, মাদক পাচারকারীরা এখন গুয়াহাটিকে ঘাঁটি বানিয়েছে। গুয়াহাটি-শিলং রোড মাদক পাচারের মূল সংযোগকারী সড়ক। গুয়াহাটি পুলিশ জানায়, শহরের বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। রেল ও সড়ক দুই পথেই শুরু হয়েছে কড়া নজরদারি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE