Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Delhi Violence

‘পুলিশই পাথর জোগাড় করে বলেছিল, মারো’

ঘটনাচক্রে, সেই সময়ে আরও একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যাতে আবার দেখা গিয়েছিল, পুলিশই নিশানায়। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে উন্মত্ত জনতা।

দিল্লি পুলিশের পাথর ছোড়ার সেই ভাইরাল ভিডিয়ো।

দিল্লি পুলিশের পাথর ছোড়ার সেই ভাইরাল ভিডিয়ো।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০৩:১৬
Share: Save:

উন্মত্ত ভিড়টাকে যেন পুলিশই নেতৃত্ব দিচ্ছিল। উর্দিধারী ইঙ্গিত দিতেই পড়িমরি ছুট লাগাল জনতা। তার পরেই শুরু দেদার পাথর ছোড়া। গত সপ্তাহে ভাইরাল হওয়া সেই ক্লিপে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল, সে দিন পাথর ছুড়েছিল দিল্লি পুলিশও। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পরে সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব দিল্লির খজুরী খাস এলাকার ওই মহল্লায় যান বিবিসি-র এক সাংবাদিক। তাঁকে হিমাংশু রাঠৌর নামে এক স্থানীয় যুবক জানান, সে দিন পুলিশই তাঁদের পাথর জোগাড় করে দিয়ে বলেছিল— ‘মারো’।

ঘটনাচক্রে, সেই সময়ে আরও একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যাতে আবার দেখা গিয়েছিল, পুলিশই নিশানায়। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে উন্মত্ত জনতা। হিংসাদীর্ণ উত্তর-পূর্ব দিল্লির ঘটনা বলে এই ভিডিয়োটি টুইটারে শেয়ার করেছিলেন বিজেপির সদস্য তথা এক প্রাক্তন সেনা অফিসার। কিন্তু ভিডিয়োটি যে দু’মাস আগেকার এবং গুজরাতের ঘটনা, তা প্রমাণ হয়ে যাওয়ার পরেই ‘পাথর-ছোড়া পুলিশের’ ভিডিয়ো নিয়ে আরও বেশি হইচই শুরু হয়।

গোষ্ঠী সংঘর্ষ চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের প্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে গত কাল সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে কেজরী যে ভাবে দিল্লি পুলিশের ‘গুজব মোকাবিলার’ প্রশংসা করেন, তা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে আবার সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট, নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল দিল্লি পুলিশকে।

খজুরী খাস থানা এলাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা, পুলিশি সহায়তা কেন্দ্রের গা ঘেঁষে সে দিন পাথর ছুড়তে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে ঠিক সেই এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গেই কথা বলেন বিবিসি-র সাংবাদিক। কচুরির দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা গেরুয়া তিলক পরা হিমাংশুর মতো রাস্তার ও-পারে পোড়া বাড়ি আগলে পড়ে থাকা ভুরা খানের কথাতেও উঠে আসে ‘পুলিশি তৎপরতার’ কথা। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশের সঙ্গেই সে দিন আমাদের বাড়ি-দোকান জ্বালাতে এসেছিল ওরা। সব শেষ হয়ে গেল, পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল!’’ সে দিন কোনও রকমে ছাদে পালিয়ে এসে প্রাণে বাঁচেন ভুরা খান।

বিবিসির প্রতিবেদনে গত সপ্তাহের আরও একটি ভিডিয়ো উঠে এসেছে। যেখানে দেখা গিয়েছিল, ফয়জান নামের এক যুবক ও তাঁর জনা চারেক সঙ্গীকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে ‘জনগণমন’ গাইতে বাধ্য করেছিল দিল্লি পুলিশ। দিন চারেক আগে হাসপাতালে মারা যান ফয়জান। যে কর্দমপুরী এলাকায় তাঁর বাড়ি, সেখানেও যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

ভাইয়ের শেষকৃত্য সামলাতে সামলাতেই ফয়জানের দাদা বলেন, ‘‘পুলিশ ভাইটাকে এমন ভাবে মেরেছিল যে ও দাঁড়াতে-বসতেও পারছিল না। মারের চোটে গোটা শরীরটা নীল আর কালো হয়ে গিয়েছিল।’’ প্রাণভয়ে সে দিন ‘জনগণমন’ গাইতে হয়েছিল রফিককেও। ফয়জানের মতো তাঁর শরীর জুড়ে কালশিটে। প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু পুলিশের ওই মার এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে। বললেন, ‘‘সে দিন থেকে বাড়িতেই পড়ে আছি। ভয়ে হাসপাতাল যেতেও পারিনি।’’ ভিডিয়ো ভাইরাল, মুখ খুলছেন স্থানীয়েরাও। পুলিশ তবু তাদের বিরুদ্ধে ওঠা একটি অভিযোগ নিয়েও মুখ খুলতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence Khas Khajuri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE