Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এখনও ভরসা অশীতিপর ডাক্তার-দাদা

গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো অশীতিপর বৃদ্ধকে দেখলে সাধারণ বাঙালির ‘ডাক্তার অগ্নীশ্বর মুখোপাধ্যায়ের’ কথা মনে হতে পারে। যদিও বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত প্রবাসীরা তাঁর মধ্যে ‘জীবন মশায়’-এর ছায়াই দেখেন।

সেবা: রাঁচীর লালপুরে নিজের চেম্বারে। নিজস্ব চিত্র

সেবা: রাঁচীর লালপুরে নিজের চেম্বারে। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৭
Share: Save:

গলায় স্টেথোস্কোপ ঝোলানো অশীতিপর বৃদ্ধকে দেখলে সাধারণ বাঙালির ‘ডাক্তার অগ্নীশ্বর মুখোপাধ্যায়ের’ কথা মনে হতে পারে। যদিও বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত প্রবাসীরা তাঁর মধ্যে ‘জীবন মশায়’-এর ছায়াই দেখেন। বয়স হয়েছে বলে এখন আর রোগী দেখতে গ্রামেগঞ্জে হুটহাট চলে যেতে পারেন না ঠিকই, কিন্তু রাঁচীর লালপুরে তাঁর চেম্বারে রোজ সন্ধ্যায় তিনি এখনও টানা চার ঘণ্টা বসেন, রোগী দেখেন। গত সাড়ে চার দশক ধরে একই ফি, পাঁচ টাকা।

তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। গোটা রাঁচী তাঁকে চেনে ‘বাঙালি ডাক্তার-দাদা’ নামে। শুধু রাঁচী কেন, আশপাশের খুঁটি, লোহারদাগা, রামগড়ের গরিব মানুষদের কাছেও এই বাঙালি ডাক্তার ভগবান। গত ৪৫ বছর ধরে লালপুরের চেম্বারে ডাক্তারি করছেন পটনা মেডিক্যাল কলেজের এই প্রাক্তনী। কর্মজীবনে রাঁচীর রাজেন্দ্র মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সের (রিমস) চিকিৎসক ও শিক্ষক ছিলেন। অবসর নিয়েছেন ২৪ বছর আগে।

শ্যামাপ্রসাদবাবুর কথায়, ‘‘১৯৭৩ সাল থেকে এই চেম্বার চলছে। রিমসে ছিলাম যখন, তখনও রোজ সন্ধ্যায় এই লালপুরের চেম্বার খুলতাম। অবসর নেওয়ার পরেও নিয়মিত চেম্বার খুলি।’’ মূলত গরিব মানুষদের চিকিৎসার জন্য চেম্বার খুললেও সুনামের কারণেই সব শ্রেণির মানুষের ভিড় তাঁর কাছে। ডাক্তার দেখিয়ে টেবিলে রাখা বাক্সে রোগীরা পাঁচ টাকা দিয়ে যান। যাঁরা তা-ও পারেন না, দেন না। ডাক্তারবাবু তাকিয়েও দেখেন না।

আদি বাড়ি ছিল বীরভূমের লাভপুরে। কিন্তু তাঁর বাবা বহুদিন আগেই কর্মসূত্রে পটনায় চলে আসেন। তবে লাভপুরের মাটির গুণ রয়েই গিয়েছে তাঁর চরিত্রে। ‘নিদান’ না হাঁকলেও তারাশঙ্করের ‘আরোগ্যনিকেতন’-এর জীবন মশায় যেন শ্যামাপ্রসাদবাবুর চরিত্রে জীবন্ত। চারিদেকে এত সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ঝাঁ-চকচকে এসি চেম্বারের পাশে সেই পুরনো ঘরটিতে, পুরনো টেবিলে বসেই শেষ দিন পর্যন্ত গরিব মানুষগুলির চিকিৎসা করে যাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে বাঁচেন রাঁচীর ‘ডাক্তারদাদা’। প্রবাসী এই বাঙালি ডাক্তারের কথা রাঁচী ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন শহরে। ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’তে অমিতাভ বচ্চন তাঁকে বিশেষ অতিথি হিসাবে সম্মানিত করেছিলেন। ডাক্তার-দাদার কথায়, ‘‘এখন ৮৩ চলছে। শরীর সুস্থ নয়। তবু রোজ ৪০ জন করে রোগী দেখি।’’ ম্লান হাসেন, ‘‘তার বেশি আর পারি না।’’ স্ত্রী উমা ও কন্যা মালবিকা তাঁকে সমানে উৎসাহ দিয়ে যান।

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে চলা সাম্প্রতিক বিতর্ক সম্পর্কে প্রবাসী এই চিকিৎসক সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। প্রশ্ন শুনে তাঁর জবাব, ‘‘চিকিৎসকের সহানুভূতিটা ফিরে এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Humanity Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE