সোনাই রোডে রাস্তার কাজের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। মঞ্চে রয়েছেন পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, অসম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপ পাল। মঙ্গলবার। ছবি: স্বপন রায়।
তরুণ গগৈ থেকে সর্বানন্দ সোনোয়াল— দুর্নীতি দমন ইস্যুতে একেবারে ১৮০ ডিগ্রি ব্যবধানে।
মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তরুণ গগৈ বলেছিলেন, সরকারি কাজকর্মে একশো শতাংশ দুর্নীতি বিতাড়ন একেবারে অসম্ভব। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে তিন মাসের মাথায় আজ সর্বানন্দ সোনোয়াল জোর দিয়ে জানালেন, তাঁর লক্ষ্য দুর্নীতিতে ‘জিরো টলারেন্স’। আর তা সম্ভব বলেই দাবি করেন তিনি। কী ভাবে সম্ভব, এর একটি রূপরেখাও তুলে ধরলেন।
শিলচর সোনাই রোডে অনুষ্ঠান-মঞ্চে তখন তাঁর পাশে পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল ও পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর। পিছনের সারিতে কাছাড়ের তিন বিধায়ক আমিনুল হক লস্কর, অমরচাঁদ জৈন ও কিশোর নাথ এবং বিলাসীপাড়ার বিধায়ক অশোক সিঙ্ঘী। দর্শকাসনের সামনের সারিতে পুরসভার বিজেপি সদস্যদের অধিকাংশ।
সর্বানন্দ শোনান, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের প্রধান শর্ত, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দুর্নীতিতে জড়াবেন না। পঞ্চায়েত সদস্য, পুর কমিশনার থেকে বিধায়ক, সাংসদ সবাইকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সে জায়গায় মন্ত্রীদের দায়িত্ব যে অনেক বেশি, জানান তাও। দাবি করেন, এখনও তাঁর মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কারও আঙুল তোলার সুযোগ মেলেনি, আর মিলবেও না।
দুর্নীতি দমনে পরবর্তী দায়িত্ব চাপান প্রশাসনিক কর্তাদের কাঁধে। সর্বার কথায়, কিছুদিন আগেও মানুষ জানতেন, যে কোনও কাজে বিডিও থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এই অবস্থার পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনকে গতিশীল করে তুললে সাধারণ মানুষের কাজ এমনিতেই সহজ হয়।’’ তাই নীচুতলার কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে তিনি মুখ্যসচিব, পুলিশ প্রধান-সহ বিভাগীয় কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বা বলেন, ‘‘যে কোনও দিন মুখ্যসচিব এখানকার কোনও সরকারি পিয়নকে ফোন করে কাজের খোঁজখবর জানতে পারেন। ডিজিপি কোনও কনস্টেবলকে তাঁর এলাকার আইনশৃঙ্খলা, থানার হালহকিকতের কথা জিজ্ঞাসা করতে পারেন।’’
দুর্নীতি ধরা পড়লেই জেলে যেতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী অফিসারদের কড়া সতর্ক করে দেন। স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘সাড়ে তিন মাসে বেশ কিছু অফিসার জেলে গিয়েছেন। আরও কয়েক জন যাবেন।’’ জানিয়ে দেন, উৎকোচ আদায় করলে তাঁর আমলে রেহাই নেই। উপস্থিত জনগণকে তিনি আশ্বস্ত করেন, দালাল-মধ্যভোগী বলে কিছু থাকবে না গেরুয়া প্রশাসনে।
১০০ দিনের কাজের উপলব্ধির কথা জানিয়ে সোনোয়াল বলেন, কেন্দ্র থেকে প্রচুর অর্থ আসে রাজ্যে। অসম নিজেও প্রাকৃতিক সম্পদে কম ভরপুর নয়। এর পরও চারদিকে এত সমস্যা কেন, তা খুঁজতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, দালাল-মধ্যভোগীরাই আত্মসাৎ করে মোটা টাকা। সে-জন্যই কাজ হয় না।
ভোটারদের মা-বাবার আসনে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রশাসন যন্ত্রের আসল মালিক রাজ্যের সাধারণ মানুষ। মন্ত্রীদের শুধু তাঁদের হয়ে কাজ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।’’ ফলে কোথাও ভুলত্রুটি হলে সন্তান-শাসনের ঢঙে সতর্ক করে দিতে হবে তাঁদের।
সোনোয়াল এ দিন সোনাই রোডে শিলচর-মিজোরাম জাতীয় সড়কে রাঙ্গিরখাড়ি থেকে সোনাবাড়িঘাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার অংশের কাজের শিলান্যাস করেন। মন্ত্রী-বিধায়ক ছাড়াও সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, পূর্ত দফতরের কমিশনার অজয়চন্দ্র বরদলৈ ও বরাক উপত্যকা বিভাগের কমিশনার আনোয়ারউদ্দিন চৌধুরী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাস্তাঘাটের কাজ শুরু হয়ে গেল। যোগাযোগ সমস্যা শীঘ্র মিটে যাবে। ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর নির্মাণে বনবিভাগের ছাড়পত্র নিয়ে একদশক ধরে যে জটিলতা চলছিল, এরও সমাধান হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেই ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে। এনএইচআইডিসিএল এই কাজ করবে।’’ তিনি দ্রুত কাজ শুরু করতে তাঁদের বলেন। মুখ্যমন্ত্রীর আশা, করিডর নির্মাণের কাজ যেটুকু বাকি রয়েছে, তা শেষ হয়ে গেলে ছয় থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টায় গুয়াহাটি যাবেন এখানকার মানুষ।
৬ থেকে সাড়ে ছয় ঘন্টায় শিলচর-গুয়াহাটি চলাচলই তাঁদের লক্ষ্য বলে জানান পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য এবং তাঁর বিভাগীয় কমিশনার অজয়চন্দ্র বরদলৈ। পরিমলবাবু বলেন, ‘‘বরাক উপত্যকা এখনও একটা দ্বীপের মতো। চার দিকে বেরনোর রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সব বেহাল। মিজোরাম, মণিপুর, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের সঙ্গে জাতীয় সড়কে জুড়ে রয়েছে এই অঞ্চল। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। এমনকী, হাফলং হয়ে গুয়াহাটি যাওয়ার রাস্তাটিও অকেজো।’’
এই অবস্থার পরিবর্তনে সারাক্ষণ তিনি ভেবে চলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন মুশকিল হল বৃষ্টি। কাজ ধরার সুযোগ মিলছে না।’’ তিনি আরও কিছুদিন সময় চেয়ে নিয়ে বলেন, ‘‘সব রাস্তায় কাজ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy