Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Narendra Modi

চাষির ভাল চাই বলেই রাগ: মোদী ॥ হাথরসে চুপ কেন, প্রশ্ন বিরোধীদের

কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, দরিদ্র-দলিতদের জন্য এত ভাবা মোদী কেন এখনও হাথরস প্রসঙ্গে নীরব?

সম্পত্তি-কার্ড দেওয়ার ভিডিয়ো অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই

সম্পত্তি-কার্ড দেওয়ার ভিডিয়ো অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২২
Share: Save:

তাঁর ছ’বছরে দেশের অর্থনীতি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর সরকারেরই দেওয়া নানা তথ্য। রেকর্ড বৃদ্ধি হয়েছে বেকারত্বে। তাঁর পরেও নরেন্দ্র মোদীর দাবি, তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বে গ্রাম, গরিব এবং সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকাদের জন্য তিনি আপ্রাণ লড়াই করছেন বলেই অকারণ বিরোধিতা করে তার সরকারকে নিশানা করছেন বিরোধীরা! তা করতে গিয়ে চাষিদের ‘ভাগ্য বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখা’ নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতাও করছেন তাঁরা। রবিবার গ্রামের মানুষকে সম্পত্তি-কার্ড দেওয়ার সরকারি ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে এ ভাবেই বিরোধীদের নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের কটাক্ষ করলেন ‘মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রতিনিধি’ হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রী হওয়া ইস্তক মোদী সাংবাদিক বৈঠক করেন না। তাঁকে প্রশ্নও করা যায় না। তার পরেও মোদী সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যেমন এ দিন মোদীর দাবির পরে কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের পাল্টা প্রশ্ন, এপিএমসি তুলে দেওয়া নতুন কৃষি আইনে চাষিদের ভাগ্য যদি এত ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে কেন দেশের নানা প্রান্তে তাঁরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন? তাঁদের কটাক্ষ, দরিদ্র-দলিতদের জন্য এত ভাবা মোদী কেন এখনও হাথরস প্রসঙ্গে নীরব?

মোদীর দাবি, শৌচালয়, উজ্জ্বলা প্রকল্পে নিখরচার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এই সম্পত্তি কার্ড— তাঁর ছ’বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে গ্রাম এবং গরিবের জন্য যত কাজ হয়েছে, বিরোধীদের ছ’দশকে তা হয়নি। তাঁর অভিযোগ, ক্ষমতায় থাকার সময়ে এখনকার বিরোধীরা মুখে ক্রমাগত দরিদ্রদের ভাল করার কথা বললেও আসলে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা জারি রাখতে তাঁদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে চেয়েছেন অভাবের শিকলে। যাতে বিভিন্ন প্রয়োজনে হাত পাতার প্রয়োজন পড়ে। তার সুবিধা লুটতে পারে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “দরিদ্রদের অভাবের শিকলে বেঁধে রাখার রাজনীতি হয়েছে এত দিন। বিরোধীরা জানতেন, গ্রাম-গরিব-দলিত-আদিবাসীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলে, অভাব থেকে মুক্তি পেলে, তাঁদের (দুর্নীতির) ‘দোকান’ চলবে কী করে? তাই তাঁরা চাইতেন গ্রামের সমস্যা বেঁচে থাক।”

আরও পড়ুন: হিমাচলি গানে ভারত জয় কেরলের মেয়ের, দেবিকার গানে মুগ্ধ মোদীও

বিরোধীদের বিঁধতে গিয়েই নতুন কৃষি আইনের প্রসঙ্গ টেনেছেন মোদী। বলেছেন, “কৃষিতে এমন ঐতিহাসিক সংস্কারের পরেও নিছক বিরোধিতার জন্য বিরোধিতায় নেমেছেন প্রতিপক্ষ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাঁদের রাজনীতি ঘুষখোর, ফড়ে, মধ্যস্বত্বভোগীদের (স্বার্থরক্ষার উপরে) নির্ভরশীল।…এখন কোনও পক্ষপাতিত্ব ছাড়া সকলের উন্নয়নে তাই গায়ে ফোস্কা পড়ছে তাঁদের।…কিন্তু গ্রামের মানুষ, চাষিরা ওই স্বার্থান্বেষীদের চিনে গিয়েছেন।”

কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, এর আগে নোটবাতিল বা জিএসটি চালু করতে গিয়েও মোদী সেগুলির বিপুল গুণগান করেছেন। কিন্তু তাতে আখেরে দেশের অর্থনীতিরই সর্বনাশ হয়েছে। কৃষি আইনও দেশের কৃষক সমাজকে সেই পথেই ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। বিরোধীদের বক্তব্য, মুখে ফড়েদের হাত থেকে চাষিদের নিষ্কৃতি দেওয়ার কথা বললেও আসলে মুকেশ অম্বানী, গৌতম আদানিদের মতো ধনকুবেরদের কাছে তাঁদের দাসখত লিখে দেওয়ার বন্দোবস্ত করছেন মোদী। রাহুল একাধিক বার প্রশ্ন তুলেছেন, “যে চাষিরা ফড়েদের সঙ্গে দর কষাকষিতে পেরে ওঠেন না, তাঁরা পেল্লায় দেশি সংস্থা কিংবা বহুজাতিকের সঙ্গে দামের পাঞ্জা কষবেন কী ভাবে? তা আদৌ সম্ভব?” সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব থেকে শুরু করে কৃষি আইনের বিরোধিতায় শামিল বহু জনের বক্তব্য, “ফসলের ভাল দাম পাওয়ানোই যদি উদ্দেশ্য হয়, তা হলে আইনে লেখা হোক যে, খোলা বাজারে চাষিদের থেকে ফসল বা আনাজ কিনতে হলে, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের থেকে কম দর দেওয়া যাবে না। অথবা কেউ তা দিলে, সেই ফারাক ভরাট করে দেবে কেন্দ্র। কিন্তু এর কোনওটিই মোদী সরকার মানতে নারাজ!” তা হলে কিসের কৃষক-মঙ্গলের দাবি করছেন মোদী?

বিরোধীরা বলছেন, বিহার ভোটে জাতপাতের অঙ্ক মাথায় রেখেই এ দিন বারবার ‘দলিত-পীড়িত-বঞ্চিতের’ মতো শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন মোদী। তাঁদের কটাক্ষ, “এমন সংবেদনশীল প্রধানমন্ত্রীর মুখে হাথরসের নির্যাতিতার কথা যদি অন্তত এক বার শোনা যেত!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE