শ্রীনগরের রাস্তায় জওয়ানদের নজরদারি। ছবি: পিটিআই।
অশান্ত-কাশ্মীর নিয়ে বিরোধীদের সমবেত আক্রমণ সামাল দিতে গিয়ে পাকিস্তানকেই নিশানা করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উপত্যকায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য ইসলামাবাদের উস্কানিমূলক আচরণকেই দায়ী করে বলেন, ‘‘আসলে ওরা নামেই পাক, কিন্তু ওদের কাজকর্ম সবই না-পাক (অপবিত্র)!’’ উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
সেনার গুলিতে হিজবুল জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যু ঘিরে গত দু’সপ্তাহ ধরেই অশান্ত উপত্যকা। প্রতিবাদী জনতার সঙ্গে নিরাপত্তবাহিনীর সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন ৪২ জন নাগরিক। এই পরিস্থিতিতে সব দলের দাবি মেনে রাজ্যসভায় আলোচনা শুরু হতেই বিরোধীরা একযোগে চেপে ধরে সরকারকে। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গেও জঙ্গিদের মতোই ব্যবহার করছে সরকার! বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পেলেট বুলেট ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিরোধীদের অভিযোগ, কোমরের বেশি উচ্চতায় পেলেট বুলেট ছোড়া হয়েছে বলেই মৃত্যুর সংখ্যা এত বেশি। জল-কামান বা কাঁদানে গ্যাসের বদলে কেন এই বুলেট ব্যবহার হচ্ছে, সে প্রশ্নও ওঠে।
সরকারের আচরণে ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে মোদীর লাহৌর যাত্রাকে কটাক্ষ করেন। ইয়েচুরি বলেন, শুধু পাকিস্তানকে দুষলে কাশ্মীর সমস্যা মিটবে না। চাই রাজনৈতিক সমাধান। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, শুরুতেই বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে মোকাবিলা না করায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। এক জঙ্গির মৃত্যুর প্রতিবাদ থামাতে গিয়ে এই ঘটনায় সরকার আরও জঙ্গির জন্ম দিচ্ছে।
কাশ্মীর নিয়ে বিরোধীরা যে ছেড়ে কথা বলবে না, তা বুঝতে পারছিলেন মোদী-রাজনাথরা। কৌশল রচনায় দুপুরে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বৈঠকে বসেন মোদী, রাজনাথ, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন মিশ্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সেখানেই ঠিক হয়, কাশ্মীরে অশান্তির দায় পাকিস্তানের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হবে। নওয়াজ যে ভাবে বুরহানের সমর্থনে মুখ খোলেন, তা-ও ভাল ভাবে নেয়নি দিল্লি। এ নিয়েও জবাব দেওয়ার দায় ছিল সরকারের।
জঙ্গি বুরহানকে অন্তত ১৫টি অভিযোগে পুলিশ খুঁজছিল দাবি করে রাজনাথ বলেন, ‘‘সেই জঙ্গির মৃত্যুতে এখন মাথা ঘামাচ্ছে পাকিস্তান! প্রকাশ্যে ইসলামাবাদ বুরহানের পাশে দাঁড়াচ্ছে! কাশ্মীরের আজাদির নামে উস্কানি দিচ্ছে!’’ পেলেট বুলেট ব্যবহারের দায় আগের সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনাথ বলেন, ‘‘এখন রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে জল-কামানের ব্যবহার বাড়াতে।’’
উপত্যকা অবশ্য এখনও অশান্তই। সোমবারও কাজিগুন্দে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাতেই পিডিপি বিধায়ক মহম্মদ খালিল ব্যান্ডের গাড়ি লক্ষ করে এক দল বিক্ষোভকারী পাথর ছোড়ে বলে অভিযোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy