তিন তালাক প্রথা বেআইনি কি না, তা নিয়ে শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। তার মধ্যে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট আজ এই প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করল। উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে অতএব তিন তালাক নিয়ে রাজনীতির আঙিনা নতুন করে সরগরম হয়ে উঠতে চলেছে।
তিন তালাক মামলা যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাই তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে যেতে চাননি হাইকোর্টের বিচারপতি সুনীত কুমার। তবে তিনি বলেন, এই প্রথা মুসলিম মহিলাদের অধিকারে আঘাত। বিচারপতির কথায়, ‘‘কোনও পার্সোনাল ল-ই সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়।’’ মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। ল বোর্ডের তরফে মৌলানা খালিদ রশিদ ফিরঙ্গি মহালি হাইকোর্টের বক্তব্য শুনে বলেন, ‘‘পার্সোনাল ল ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দু’টিকে আলাদা করে দেখা যায় না।’’
যে মামলার সূত্রে হাইকোর্ট আজ এত কথা বলল, সেখানে আবেদনকারী ছিলেন বুলন্দশহরের এক দম্পতি। ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে পুনর্বিবাহ করেছেন ২৩ বছরের এক যুবতীকে। প্রাক্তন স্ত্রী তাই নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। হাইকোর্টের কাছে দম্পতির আবেদন ছিল, তাঁরা যেন পুলিশি হেনস্থার মুখে না পড়েন। আদালত সেই আবেদন খারিজ করে বলেছে, এ দেশে যে ভাবে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন চালু রয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে মহম্মদের উপদেশ বা পবিত্র কোরানের বিরোধী। যতক্ষণ না স্ত্রী স্বামীর বিশ্বাসভঙ্গ করছেন, ততক্ষণ ইসলাম বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দেয় না। আদালতের মতে, তালাক নিয়ে নানা ভুল ধারণাই স্ত্রীর অধিকার সংক্রান্ত আইনকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এই বক্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে বিজেপি-র গলার জোর আরও বাড়িয়ে দিল। দলের জাতীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এ দিন আদালতের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘‘হাইকোর্টের কথায় আমাদের অবস্থানই দৃঢ় হল। যে সব দল রাজনৈতিক ফায়দার জন্য তিন তালাককে সমর্থন করছেন, তাঁরা সাবধান হোন।’’ বিরোধীদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, বিজেপি তিন তালাকের বিরোধিতা করে আসলে মেরুকরণের রাজনীতিই করছে। ভোটের মরসুমে তালাক নিয়ে এই তরজা এখন আরও জোরালো হবে। বিজেপির যোগী আদিত্যনাথ এ দিন আদালতের বক্তব্য শুনেই বলেছেন, ‘‘অনেক মুসলিম দেশেই তিন তালাক নিষিদ্ধ। তিন তালাক, চার বিবাহ দেশের সংবিধান-বিরুদ্ধ। এতে ভারতীয় মহিলাদের অধিকার খর্ব করা হয়।’’ জবাবে ল বোর্ডের সদস্য কামাল ফারুকি আবার পাল্টা বলেছেন, ‘‘মহিলাদের অধিকারের বিষয়ে সবথেকে প্রগতিশীল ধর্ম ইসলাম। তালাক শরিয়ত আইনের অঙ্গ। সংবিধান আমাকে আমার ধর্মাচরণের অধিকারও দিয়েছে।’’
ঘটনা হল, মহিলাদের অধিকারের বিষয়টিকে সামনে রেখে মোদী সরকার তিন তালাক নিয়ে সরব হয়েছে বেশ কিছুদিনই। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিজেপির দীর্ঘদিনের দাবি। আপাতত প্রধানমন্ত্রী তিন তালাককে নিশানা করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে সরকার হলফনামা দিয়ে তার অবস্থান জানিয়েছে। মোদী নিজে আশা করছেন, আধুনিকমনস্ক হিন্দু ও মুসলিম মহিলারা তাঁকে সমর্থন করবেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমার মুসলিম বোনেদের কী অপরাধ যে তাদের টেলিফোনে তিন তালাক দেওয়া হচ্ছে? মুসলিম মা-বোনেদের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা কি উচিত নয়?’’ মহিলাদের অধিকার এবং নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত বলে কংগ্রেসও তিন তালাকের পক্ষে নয়। এ দিন আদালতের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন কংগ্রেসের রেণুকা চৌধুরিও। এমনিতে বিজেপির বিরুদ্ধে মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ বারবারই তোলে কংগ্রেস। কিন্তু তিন তালাকের ক্ষেত্রে সে কথা বললে মহিলাদের উপরে অবিচারকে সমর্থন করা হবে, এটাই দলের মত। তৃণমূল বা সমাজবাদী পার্টি অবশ্য আগে থেকেই পার্সোনাল ল বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়েছে। বোর্ডের দাবি, মোদী স্বৈরাচারী আচরণ করছেন। শরিয়তি আইনে সরকারের নাক গলানোর কথা নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy