ছবি সংগৃহীত।
আপনারা যাঁরা দিন-রাতের বেশির ভাগ সময়টাই কাটান ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাঁরা কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, ঘুমের সময়টা অনেকটাই কমে গিয়েছে? দেখেছেন, রাত গভীর হয়ে গেলেও এখন আর ঘুমে বুঁজে আসে না আপনার দু’চোখের পাতা? যতটা ঘুমোনো উচিত, তার চেয়ে অনেক কম ঘুমোচ্ছেন বলে দিনের শুরুতেই কি আপনি ভীষণ ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করেছেন? ঠিক ভাবে মন বসাতে পারছেন না কাজে?
সোশ্যাল মিডিয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে হয়তো খেয়াল করেননি এটা। কিন্তু জানেন কি, রাতভর সোশ্যাল মিডিয়ায় মেতে থাকার জন্য পাইলটদের ঘুম কম হয় বলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছিল ২০১৩ সালে? না, কোনও রটনা নয়। দেশের বায়ুসেনাপ্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া জানিয়েছেন, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ওই যুদ্ধবিমানটি ভেঙে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকা পাইলটদের মাত্রাতিরিক্ত কম ঘুমের জন্য।
পাঁচ বছর আগে রাজস্থানের বারমেঢ়ের কাছে উত্তরলাইয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে। কী কারণে ওই বিমানটি ভেঙে পড়েছিল, এত দিন তার কোনও কারণ জানা যায়নি। কারও সন্দেহ ছিল অন্তর্ঘাতের। কারও ধারণা ছিল, চিন বা পাকিস্তানের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই ভেঙে পড়ে ওই যুদ্ধবিমান। কেউ কেউ বলতেন, অজ্ঞাত কোনও যান্ত্রিক কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
বেঙ্গালুরুতে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অ্যারোস্পেস মেডিসিন’-এর ৫৭তম সম্মেলনে শুক্রবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া বলেন, ‘‘ওই দুর্ঘটনার তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তে জানা গিয়েছে, বিমানটি যিনি চালাচ্ছিলেন, সেই পাইলট ওই উড়ানের আগে একটানা অনেক দিন ঘুমোননি। তিনি রাতের পর রাত ডুবে ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। পাইলটের পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবই ছিল ওই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।’’
আরও পড়ুন- জুলাইয়ে ‘তেজস’ আসছে বিমানবাহিনীতে, চড়লেন এয়ার চিফ মার্শাল
আরও পড়ুন- ‘সেনা দিয়ে মেটাতে চাইলে পাক অধিকৃত কাশ্মীর কবেই আমাদের হত’
বায়ুসেনাপ্রধান চান, কোনও উড়ান চালানোর দায়িত্ব দেওয়ার আগে জেনে নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট পাইলট যতটা সময় ঘুমোনোর প্রয়োজন, তা ঘুমিয়েছেন কি না। তা হলে আগামী দিনে বিমান দুর্ঘটনার তার সম্ভাবনা কমবে। সংখ্যা কমবে।
ধানোয়ার কথায়, ‘‘উড়ানের আগে পাইলটদের চূড়ান্ত পরামর্শ দেওয়ার জন্য রোজ মিটিংটা হয় খুব সকালে। ৬টা নাগাদ। কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থেকে ভাল ভাবে ঘুম না হওয়ায় অনেক পাইলটই সেই মিটিংয়ে আসেন ঘুম চোখে। তাঁদের কী বলা হচ্ছে, সে সব তাঁরা খেয়ালও করেন না।’’
ধানোয়া মনে করেন, উড়ানের আগে যেমন পাইলটদের শ্বাস-প্রশ্বাস মাপা হয়, মাপা হয় রক্তচাপ, এ বার তেমনই মাপা হোক, আগের রাতে কতটা সময় তিনি ঘুমিয়েছেন।
‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অ্যারোস্পেস মেডিসিন’-এর বিশেষজ্ঞদের তেমন একটি উপায় খুঁজে বের করার অনুরোধ জানান বায়ুসেনাপ্রধান ধানোয়া।
এ বার আপনিও ভাবুন, রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় অতটা সময় বুঁদ হয়ে থাকাটা আপনার পক্ষে ভাল হচ্ছে কি না। সোশ্যাল মিডিয়া যে আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, তা আপনাকে পরের দিন ক্লান্ত করে দিচ্ছে কি না। যদি তাই হয়, তবে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি কমিয়ে রাতে ঘুমের সময়টা বাড়ালেই আপনার ভাল হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy